খুলনা-১ আসনে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি আ.লীগ-বিএনপি প্রার্থী

0
875

আজিজুর রহমান,খুলনাটাইমস :
খুলনা-১ আসনে (দাকোপ-বটিয়াঘাটা) দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের দুজন প্রার্থী অংশ নেন। একজন দলীয় প্রার্থী হিসাবে, অপরজন দলের সিদ্ধান্তের বাহিরে গিয়ে। অবশ্য এ আসনে এটি নতুন কিছু নয়। এর আগেও দলীয় প্রার্থীর বিরুদ্ধে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসাবে নির্বাচন করে জয়ী হন বর্তমান সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস।

আসন্ন একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে খুলনা-১ আসনে ভোটযুদ্ধে মুখোমুখি হচ্ছেন আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী বর্তমান সাংসদ পঞ্চানন বিশ্বাস ও ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী খুলনা জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমীর এজাজ খান। সর্বশেষ ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে এই দুই নেতা ওই আসন থেকে ভোটযুদ্ধে অবতীর্ণ হয়েছিলেন। এবারও পঞ্চানন বিশ্বাস নৌকা প্রতীকে ও আমীর এজাজ খান ধানের শীষ প্রতীকে লড়বেন।
দীর্ঘ ১৭ বছর পরে হেভিওয়েট দুই প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় দুদলের নেতা-কর্মীদের মাঝে শঙ্কা রয়েছে। ওই আসন থেকে কে হচ্ছেন সংসদ সদস্য তা নিয়েও নেতাকর্মী হতে শুরু করে সাধারণ ভোটারদের মাঝে বিভ্রান্তি দেখা দিয়েছে। হিন্দু-মুসলিম ভোটের ফারাক তেমন আর নেই এ আসনে। ফলে সংখ্যালঘু ভোটে পার পাবে না আওয়ামী লীগ।

নির্বাচনী এলাকার সুত্রে জানা যায়, ১৯৯৬ সালে সপ্তম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ওই আসন থেকে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী বর্তমান প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ৪৩ হাজার ৮৪৯ পেয়ে সিপিবি প্রার্থী অচিন্ত্য কুমার বিশ্বাসকে পরাজিত করেন। ওই নির্বাচনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থীর অবস্থান তৃতীয় ছিল। পরে শেখ হাসিনা আসনটি ছেড়ে দিলে উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হন জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও জেলা পরিষদ চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশিদ। তখন প্রতিদ্বন্দ্ধী হিসেবে টেলিভিশন প্রতীকে পঞ্চানন বিশ্বাস ওই উপনির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে বিজয়ী হন। পরে পঞ্চানন আবার আওয়ামী লীগে যোগ দেন। তিনি ২০০১ সালের অষ্টম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ৭৮ হাজার ৫৫২ ভোট পেয়ে বিএনপি জোটের প্রার্থীকে পরাজিত করেন।

২০০১ সালের নির্বাচনে বিএনপি জোটের হয়ে প্রথমবারের মতো ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করেন আমীর এজাজ খান। তিনি ৪৭ হাজার ৫২৩ ভোট পান। এর আগে বিএনপির কোনো প্রার্থী এ আসনে এত বেশি ভোট পাননি। সেবারই প্রথম বিএনপি আসনটিতে দ্বিতীয় অবস্থানে আসে। ২০০৮ সালের নবম সংসদ নির্বাচনে আসনটি থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাননি পঞ্চানন বিশ্বাস। সেবার নৌকার প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করে ননীগোপাল মণ্ডল ১ লাখ ২০ হাজার ৮০১ ভোট পেয়ে জয়ী হন। সেই নির্বাচনে ননীগোপালের প্রতিদ্বন্দ্ধী প্রার্থী ছিলেন আমীর এজাজ খান। ভোট পেয়েছিলেন ৬৮ হাজার ৪২০টি।

২০১৪ সালের দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপি ও জামায়াতের নির্বাচন বর্জন করায় ওই আসনে বিএনপির কোনো প্রার্থী ছিল না। তবে ওই আসনে নির্বাচন হয়েছিল। নির্বাচনে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী পঞ্চানন বিশ্বাস ৬৬ হাজার ৯০৪ ও আওয়ামী লীগের ‘বিদ্রোহী’ প্রার্থী হয়েছিলেন ননীগোপাল মণ্ডল। ভোট কেটেছিলেন উল্লেখ করার মতো, ৩৪ হাজার ৫২৭টি।
সবমিলে এর আগে পঞ্চানন বিশ্বাস তিনবার সংসদ নির্বাচন করে প্রতিবারই জিতেছেন। আমীর এজাজ খান দুবার নির্বাচন করে কোনোবারই জিততে পারেননি।

নির্বাচনী এই এলাকাটি হিন্দু সম্প্রদায়-অধ্যুষিত থাকায় বরাবরই আসনটি আওয়ামী লীগের ভোটব্যাংক। আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বলছেন, খুলনার অপর পাঁচটি আসন সময়ে সময়ে বিভিন্ন হাতে পড়েছে। কিন্তু ১৯৯১ সাল থেকেই খুলনা-১ নিরাপদ আ’লীগের জন্য। গত পাঁচটি জাতীয় সংসদ নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থীর জয় হয় এই আসনে। ফলে এবারও দলের মনোনীত প্রার্থী জয়ের আশাবাদি। তবে প্রায় ১২ বছর পরে এই আসনে বিএনপির প্রার্থী নির্বাচনে অংশ নেয়ায় জয়ধরে রাখার জন্য প্রচার-প্রচারণায় এগিয়ে আওয়ামী লীগ।