আগে কটুবাক্য, এখন প্রশংসা আর সাহস

0
508

খেলা খবর, খুলনা টাইমস:
ভ্রমণ ক্লান্তির ছাপ তখনো লেগে আছে আঁখি-মনিকাদের চোখে-মুখে। সিরাজগঞ্জ থেকে সকালে রওনা দিয়ে দুপুরের মধ্যে ফুটবল ফেডারেশন ভবনে পৌঁছেছে আঁখি খাতুন। পরশু রাতে খাগড়াছড়ি থেকে বাসে ওঠে মনিকা চাকমা। পৌঁছেছে কাল ভোরে। ডিসেম্বরের শেষ সপ্তাহে মেয়েদের অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে চ্যাম্পিয়ন হয় বাংলাদেশ। এরপর ১৫ দিনের ছুটিতে বাড়ি গিয়েছিল মেয়েরা। ছুটি কাটিয়ে কাল সবাই ক্যাম্পে যোগ দিয়েছে। ৩৫ জন ফুটবলার নিয়ে আজ থেকে শুরু অনুশীলন।
একটা টুর্নামেন্টই যেন বদলে দিয়েছে আঁখির জীবন। এলাকায় সংবর্ধনা পেয়েছে একাধিক। আঁখির তাঁতশ্রমিক বাবার হাতে উঠেছে কিছু নগদ অর্থও। ডিফেন্ডার হয়েও অনূর্ধ্ব-১৫ সাফের গোল্ডেন বুটজয়ী আঁখি ক্যাম্পে যোগ দিয়ে উচ্ছ্বাসভরা কণ্ঠে বলছিল, ‘মেয়ে হয়ে ফুটবল খেলি বলে আগে আমাকে দেখলে অনেকে মুখ ভার করে রাখত। এখন হাসিমুখে এগিয়ে এসে কথা বলছে। পাড়া-প্রতিবেশীরা আগে বাড়িতে এসে মা-বাবাকে বলত, আমি যেন খেলতে না যাই। এখন তারাই এসে আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিয়ে বলছে, “তুমি আরও এগিয়ে যাও। ”’
তারকাখ্যাতি কী, এখন বুঝতে পারে আঁখি। সেটা উপভোগও করে, ‘এবার বাড়িতে গিয়ে মনে হচ্ছিল যেন তারকা হয়ে গেছি! গ্রামে তো সবাই আমাকে চেনে। কিন্তু শহরে গেলে সবাই সেলফি তোলার জন্য এগিয়ে আসে। স্কুলে গেলে ছাত্রছাত্রীরা অটোগ্রাফের জন্য হুমড়ি খেয়ে পড়ছিল। আর রিকশায় চড়ে কোথাও গেলে সবাই বলত, “ওই দেখ আঁখি যাচ্ছে। ” এসব দেখে আমার খুব ভালো লেগেছে। এগুলোই আমার ভালো খেলার জন্য অনুপ্রেরণা।’
অধিনায়ক মারিয়া মান্দাও এমন সাফল্যে খুঁজছে অনুপ্রেরণা। ময়মনসিংহের কিশোরী নতুন বছরের সব কটি টুর্নামেন্টের ট্রফিই নিজের হাতে দেখতে চায়, ‘আমরা এবার ঢাকায় যেমন খেলেছি, সেটাই খেলতে চাই সারা বছর। এ জন্য আগের মতোই কঠোর অনুশীলন করতে হবে। আমাদের এখন আগের চেয়ে অনেক দায়িত্ব বেড়ে গেছে।’
আঁখি, মারিয়া, মনিকারা ছুটিতে এলাকায় নিয়মিত অনুশীলন করেছে। খাগড়াছড়ির সুমন্তপাড়ার কিশোরী মনিকা খ্যাতির বিড়ম্বনায় ভুগেছে এলাকায়, ‘আমি যদি কোনো দোকানে কিছু কিনতে যেতাম দোকানি দাম রাখতে চাইত না। বলত, “এটা তোমার উপহার। ”’
সারা দেশের মানুষের ভালোবাসায় সিক্ত এই মেয়েদের নিয়ে আরও বড় স্বপ্ন দেখছেন কোচ গোলাম রব্বানী ছোটন। এ বছর আটটি আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট খেলবে বাংলাদেশের মহিলা দল। মার্চে হংকংয়ে অনূর্ধ্ব-১৫ আমন্ত্রণমূলক টুর্নামেন্টে খেলবে সবার আগে। আপাতত সেই টুর্নামেন্টের জন্যই মেয়েদের তৈরি করতে চান ছোটন, ‘মেয়েরা যাতে পারফরম্যান্সের ধারাবাহিকতা ধরে রাখতে পারে, এ জন্য তাদের একটা রিক্রিয়েশনের দরকার ছিল। ওদের শারীরিক ও মানসিক বিশ্রামের দরকার ছিল। সেটা হয়েছে। এখন আমরা নতুন উদ্যমে অনুশীলন শুরু করব।’
বাংলাদেশ অনূর্ধ্ব-১৫ সাফে চ্যাম্পিয়ন হলেও ফরোয়ার্ড লাইনের ফিনিশিং নিয়ে চিন্তিত কোচ। আপাতত সেটা নিয়েই বেশি কাজ করবেন তিনি। শুধু একটা টুর্নামেন্ট নয়, পুরো বছরই যে ভালো কাটাতে চায় তহুরা, মনিকারা। প্রথম আলো।