আগস্টে রেকর্ড সাফল্য অর্জন খুলনা মহানগর পুলিশের

0
127
Basic RGB

সুমন আশিক:
চলতি বছরের আগস্ট মাসে রেকর্ড সাফল্য অর্জন করেছে খুলনা মহানগর পুলিশ (কেএমপি)। কেএমপি কমিশনার মো: মোজাম্মেল হক বিপিএম-বার, পিএিম-সেবা বৃহস্পতিবার (২৪ আগস্ট) দুপুরে খুলনা সদর থানা প্রাঙ্গনে অনুষ্ঠিত মিডিয়া ব্রিফিং করে বিস্তারিত এই তথ্য তুলে ধরেন। মূলত: খুলনা সদর থানার অভিযানে ৬ টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার ও চক্রের ২ সদস্য আটকের ঘটনা নিয়ে এই ব্রিফিংয়ের আয়োজন। তবে এক প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ১ হতে ২৪ আগস্ট অবধি মহানগর পুলিশের উল্লেখযোগ্য সাফল্যের তথ্য সাংবাদিকদের জানান কেএমপি কমিশনার।
পুলিশ কমিশনার জানান, মাত্র ২৪ দিনে পৃথক অভিযান চালিয়ে ১৪টি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার, চক্রের ১০ সদস্য আটক করেছে নগর পুলিশ। যার মধ্যে খুলনা সদর থানার অভিযানে ৬টি, আড়ংঘাটা থানার ৬টি, দৌলতপুর থানার ১টি এবং অন্য একটি থানার অভিযানে একটি চোরাই মোটরসাইকেল উদ্ধার হয়। এছাড়া ৪টি অস্ত্র উদ্ধার হয়, সাথে পিস্তলের ৪টি ম্যাগজিন, ১৫ রাউন্ড গুলি, ৩ টি কুড়াল ও ৪টি চাপাতি রয়েছে। পাশাপাশি এ সময়ের মধ্যে ২ টি ইজিবাইক, ৩০ মিটার বৈদ্যুতিক আর্থিং কেবল ও জাল নোট উদ্ধার হয়েছে। আছে ৩৫৭২ পিস ইয়াবা, ১৭৮ লিটার দেশী-বিদেশী মদ ও ২৫ কেজি ১১০ গ্রাম গাজা উদ্ধারের ঘটনাও।
প্রসঙ্গত, মাদক, জুয়া, ভূমিদস্যু এবং দেহ ব্যবসায়ীদের গ্রেফতারে সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের প্রতি আহবান জানিয়ে গত ১৩ আগস্ট এক বিবৃতি দেন খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ নেতৃবৃন্দ। বিবৃতিতে অবিলম্বে খুলনা মেট্টোপলিটন এলাকার এ সকল দুষ্কৃতিকারিদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণের আহবান জানানো হয়।
প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং করে কেএমপি’র পুলিশ কমিশনার বলেন, “খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ সর্বদা খুলনার গণমানুষের নিরাপত্তা নিশ্চিতে বদ্ধ পরিকর। এই প্রতিজ্ঞা নিয়েই খুলনা মহানগর পুলিশ কাজ করে। এরই ধারাবাহিকতায় গত ১ আগস্ট হতে খুলনা মহানগর পুলিশ বিশেষ অভিযান পরিচালনা করছে। জঙ্গি, সন্ত্রাসী, নাশকতাকারী, অনলাইন জুয়াড়ি, ইভটিজার, ভূমিদস্যু, মাদক ব্যবসায়ী-সহ নানান ধরণের ফৌজদারি অপরাধে অভিযুক্ত এবং জিআর ও সিআর পরোয়ানাভুক্ত আসামীদের গ্রেফতার করা অব্যাহত রেখেছে পুলিশ।
এরই ধারাবাহিকতায় কেএমপি’র খুলনা থানার এসআই(নিঃ) সুজিত মিস্ত্রীর নেতৃত্বে একটি চৌকস টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে গত ২৩ আগস্ট রাত পৌণে ৮ টার সময়। তখণ সোনাডাঙ্গা থানাধীন আল-ফারুকের মোড়স্থ বাপ্পির বাড়ির ভাড়াটিয়া আসামী সুমন মিস্ত্রী(৩৬)’কে গ্রেফতার করা হয়। আটক সুমন পিরোজপুর জেলার নাজিরপুর থানার গাউখালী গ্রামের কৃষ্ণ মিস্ত্রী ও কিরন মিস্ত্রী দম্পতির ছেলে।
পরবর্তীতে গোপালগঞ্জ জেলার মোকসেদপুর থানা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে লিটন শেখ (৪০)’কে আটক করা হয়। আটক লিটন বাগেরহাট সদরের ৯নং ওয়ার্ডের খানদার নিবাসী শামছু শেখ ও আলেয়া বেগম দম্পতির ছেলে এবং গোপালগঞ্জের মোকসেদপুর থানাধীন মোকসেদপুর সদর হাসপাতালের পার্শ্বে, মিজান শেখ এর বাড়ীর ভাড়াটিয়া। তার হেফাজতে থাকা গোপালগঞ্জের নিজ বাসা হতে খুলনা থানার মামলা নং-২৩, তাং-০৯/০৮/২০২৩ খ্রিঃ, ধারা-৩৭৯ পেনাল কোড সংক্রান্তে চোরাই যাওয়া ১ টি Apache RTR 160 cc মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়। পরবর্তীতে সুমন মিস্ত্রী এবং লিটন শেখ দ্বয়ের স্বীকারোক্তি মতে লিটন শেখ এর হেফাজতে থাকা ভাড়াটিয়া বাসা হতে খুলনা মহানগরীর বিভিন্ন স্থান হতে বিভিন্ন সময়ে চুরি হওয়া ৫ টি চোরাই মটর সাইকেল যথাক্রমে ১ টি লাল রংয়ের Pulsar 150 CC মটরসাইকেল; ১ টি লাল ও কালো রংয়ের Pulsar 150 CC মটরসাইকেল; ১ টি নীল রংয়ের Apache RTR 160 CC মটরসাইকেল; ১ টি কালো রংয়ের Apache RTR 150 CC মটরসাইকেল এবং ১ টি লাল কালো রংয়ের Discover 100 CC সহ সর্বমোট ৬ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃত সুমন মিস্ত্রী এর বিরুদ্ধে ১ টি মামলা এবং লিটন শেখ এর বিরুদ্ধে ৭ টি মামলা রয়েছে।”
এ-সময় কেএমপি’র অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম) মোঃ সাজিদ হোসেন; ডেপুটি পুলিশ কমিশনার (দক্ষিণ) মোহাম্মদ তাজুল ইসলাম; সহকারী পুলিশ কমিশনার (খুলনা জোন) এস.এম বায়জীদ ইবনে আকবর; সহকারী পুলিশ কমিশনার (স্টাফ অফিসার) ইমদাদুল হক এবং খুলনা থানার অফিসার ইনচার্জ মোঃ হাসান আল-মামুন-সহ প্রিন্ট ও ইলেকট্রনিক মিডিয়ার সাংবাদিকবৃন্দ, পুলিশ অফিসারবৃন্দ ও ফোর্স উপস্থিত ছিলেন।
জানা গেছে, বুধবার (২৩ আগস্ট) দুপুর ১টার সময় কেএমপি হরিণটানা থানাধীন জিরোপয়েন্ট মোড়স্থ ভ্যান স্ট্যান্ডের সামনে পাকা রাস্তার উপর হতে ১ কেজি গাঁজা সহ নারী আসামীকে গ্রেফতার করা হয়। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ১০টায় লবণচরা থানার বিশেষ অভিযানে চাপাতিসহ চিহ্নিত এক সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ মোঃ হোসেন হেলাল@কোপা হেলাল (৩৫) গ্রেফতার হয়। মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) রাত সাড়ে ৯টায় লবণচরা থানা পুলিশের একটি চৌকস টিম গোপন সংবাদ পেয়ে মোহাম্মদনগর মেম্বার সড়কে মোবাইল ফোন ব্যবহার করে অনলাইন জুয়া খেলার সময় ৮ জনকে আটক করে। খানজাহান আলী থানা পুলিশের অভিযানে ২২ আগস্ট রাত পৌনে এগারোটায় খানজাহান আলী থানাধীন ইস্টার্ণ জুট মিলের প্রধান ফটক সংলগ্ন ফলের দোকানের সামনে থেকে মশিয়ালী পূর্বপাড়া সিএন্ডবি এলাকার মৃত শাহাদাত শেখের পুত্র মোহাম্মদ মাসুদ রানা (৪২ ) কে ১০৭ পিস ইয়াবাসহ আটক হয়।
সূত্র জানায়, রবিবার (২০ আগস্ট) দুপুর অনুমান ১২টার সময় গোপন সংবাদের ভিত্তিতে খালিশপুর থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে উক্ত থানাধীন বড় বয়রাস্থ হাজী ফয়েজ উদ্দিন রোড এর জনৈক ব্যক্তির বাড়ি হতে অন্তর্ঘাতমূলক ষড়যন্ত্র করার জন্য সমবেত হওয়ার অভিযোগে আসামীদের গ্রেফতার করা হয়। আটকেরা হচ্ছে, মোঃ রকিবুল ইসলাম (২৪), মোঃ তামিম ইকবাল (১৯) এবং আনিছা সিদ্দিকা (৪৫)। গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে খালিশপুর থানায় বিশেষ ক্ষমতা আইনে মামলা হয়েছে।
সূত্র আরও জানায়, সোনাডাঙ্গা মডেল থানা পুলিশের অভিযানে ২ জন ছিনতাইতারী গ্রেফতার ও ছিনতাইকৃত ইজিবাইক উদ্ধার করা হয়। থানা অফিসার ইনচার্জ মো: মমতাজুল হকের দিক-নির্দেশনায় এসআই অনুপ কুমার ঘোষ রবিবার (২০ আগস্ট) রাত পৌণ ১১টার দিকে বয়রা বাজার মোড় হতে আসামীদ্বয়কে আটকপূর্বক প্রায় আড়াই লাখ টাকা মূল্যের ইজিবাইকটি জব্দ করেন। শনিবার (১৯ আগস্ট) রাত সোয়া ১১টার দিকে লবণচরা থানা পুলিশের বিশেষ অভিযানে রূপসা ব্রীজের পশ্চিম পাশের ঢাল হইতে কিশোর গ্যাং গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী সন্ত্রাসী-চাঁদাবাজ মোঃ জিয়ারুল গাজী৥জিয়া(২০)’কে এবং অপর একটি ঘটনায় তালিকাভূক্ত মাদক ব্যবসায়ী মোঃ শফিকুল ইসলাম @ অপু (২৪)’কে ২শ’ পিচ ইয়াবাসহ রূপসা ব্রীজের পশ্চিম পাশের ঢাল হতে গ্রেফতার হয়। ১৮ আগস্ট হরিণটানা থানা পুলিশ কর্তৃক বাগেরহাট জেলার কচুয়া থানার গজালিয়া গ্রামের হারিয়ে যাওয়া মেজবাহ শেখের ছেলে ফাহিম (১১)’কে খুলনা জিরোপয়েন্ট থেকে উদ্ধার পূর্বক তার মা ফাতেমার নিকট বুঝিয়ে দেওয়া হয়।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) খুলনা মহানগর পুলিশের (কেএমপি) খুলনা থানা পুলিশের অভিযানে ১ টি সচল পিস্তল, ১ টি ম্যাগাজিন, ৩ রাউন্ড গুলি এবং ১ টি মটরসাইকেল উদ্ধারসহ ২ জন অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী গ্রেফতার হয়। খুলনা থানার রুপসা পুলিশ ফাঁড়ীর একটি চৌকস টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে জানতে পেরে আসামীদের আটক করে। ১৪ আগস্ট কেএমপি’র মাদক বিরোধী অভিযানে ২৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট, ৮০০ গ্রাম গাঁজ এবং ৩০ লিটার চোলাই মদসহ ১৩ (তের) জন মাদক কারবারি গ্রেফতার হয়। ১৩ আগস্ট ৫০০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট এবং ২০০ গ্রাম গাঁজাসহ ২ জন মাদক কারবারি গ্রেফতার এবং একই দিনে পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের হাতে ভূয়া ডিবির পরিচয়ে চাঁদা দাবীর অভিযোগে প্রতারক মোঃ আল-আমিন শেখ (৩৪)’কে গ্রেফতার করা হয়। শনিবার (১২ আগস্ট) রাত ৮টায় সদর থানা পুলিশের অভিযানে পুলিশ, ডিবি ও র‌্যাবকে হুমকিদাতা অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী রাশেদ খাঁ গ্রেফতার ও তার নিকট হতে ১টি সচল পিস্তল, ১ টি ম্যাগাজিন, ১ রাউন্ড গুলি ও ৭০ পিস ইয়াবা ট্যাবলেট উদ্ধার হয়।
শুক্রবার (১১ আগস্ট) দুপুর আড়াটার সময় আড়ংঘাটা থানার একটি চৌকষ টিম কর্তৃক খালিশপুর থানাধীন কদমতলা রাস্তার উপর হতে গ্রেফতারকৃত তেরখাদার ছাগলাদা ইউনিয়নের জুনারী গ্রামের মৃত: সাহেব চৌধুরী ও কোহিনুর বেগম দম্পতির সন্তান রিপন চৌধুরী @শিমুল(৩০)’র দেওয়া তথ্য মতে বাগেরহাটে অভিযান পরিচালনা করে বাগেরহাট জেলার রামপাল থানাধীন সোনাতুনিয়া গ্রামের মোঃ হাসিবুল্লাহ শেখ, পিতা-মোঃ সাইফুল শেখের ছেলে হাসিবুল্লাহ শেখের বসত বাড়ীর উঠান হতে চুরি যাওয়া YAHAMA FZS V2-150 CC ব্লু রংয়ের মটরসাইকেল যার রেজিঃ নং-খুলনা মেট্রো-ল-১২-১৭৪০, ইঞ্জিন নং- G3J3E0277610, চেসিস নং- ME1RG4455J0018161 উদ্ধার করে। পরবর্তীতে রিপন চৌধুরী @শিমুল’কে জিজ্ঞাসাবাদে তার দেওয়া তথ্য মতে শনিবার (১২ আগস্ট) সকাল সাড়ে ৬টার সময়আড়ংঘাটা থানাধীন সিটি বাইপাস রোড সংলগ্ন কৌহিনূর মোড়স্থ জনৈক কবির মোল্লার পরিত্যাক্ত গোডাউনের উত্তর পার্শ্বে ঝোপঝাড়ের মধ্যে হইতে আরো ৩ টি চোরাই মোটরসাইকেল (০১টি SUZUKI Gixer, ০১টি FZ-V2 ও PULSAR ) উদ্ধার করা হয়। এছাড়াও ইতিপূর্বে অত্র মামলায় চোরাই কাজে ব্যবহৃত ১ টি লাল Apache-4V মোটরসাইকেল এবং ০১টি চোরাই SUZUKI Gixer মোটরসাইকেল সহ সর্বমোট ৬ টি মোটরসাইকেল উদ্ধার করা হয়েছে।
আরও জানা যায়, ৯ আগস্ট দিবাগত রাত ১টায় লবণচরা থানার একটি টিম একই থানাধীন বান্দাবাজার এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে দীর্ঘদিনের তালিকাভুক্ত সন্ত্রাসী, ভূমিদস্যু, চাঁদাবাজ, শেখ গোলাম মোস্তফা @ ট্যারা মোস্তকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়। আসামীর নামে হত্যা, চাঁদাবাজিসহ ২৬ টি মামলা রয়েছে। একই দিনে কেএমপি’র গোয়েন্দা বিভাগের একটি টিম গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে খালিশপুরের কায়েস শিকদারের শয়নকক্ষে হতে ১ টি ম্যাগজিনসহ পিস্তল, ৭ রাউন্ড গুলি, ৪ টি চাপাতি, ৩ টি চাইনিজ কুড়াল, ১ টি দা এবং ২ টি ছোরাসহ গ্রেফতার করা হয়। ৮ আগস্ট রাত সাড়ে ১০টার দিকে খুলনা থানাধীন ১৬ নং মিয়া পাড়া ওবায়দুল্লাহ আজাদ এর বসত বাড়ীর ২য় তলার সিড়ির ডান পার্শ্বের রুমের মধ্যে হতে জুয়া খেলার সরঞ্জামাদি এবং নগদ ১৩ হাজার ৩শ’ টাকাসহ ৪ জন জুয়াড়ীকে গ্রেফতার করে গোয়েন্দা পুলিশ।