অামার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা: প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

0
410

টাইমস রিপোর্ট : প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা তার মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের স্মৃতিচারণ করে বলেছেন, অামার মা ছিলেন সবচেয়ে বড় গেরিলা। বাবার নেতৃত্বের পেছনে মূল চালিকা শক্তি ছিলেন অামার মা। বাবা যখনই বন্দী হতেন, তখন অামার মা ঢাকা শহরে অামার বিভিন্ন অাত্মীয়-স্বজনের বাসায় গিয়ে সেখান থেকে পোশাক পরিবর্তন করে অন্য অাত্মীয়দের বাসায় গিয়ে নেতাদের সঙ্গে মিটিং করতেন।

ছাত্রনেতাদের টাকা-পয়সা দিয়ে অান্দোলনকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করতেন। অথচ বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়া এবং স্বাধীনতা যুদ্ধ নিয়ে ইতিহাসে বাবার নাম অাছে কিন্তু মার নাম নেই।

বুধবার বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন নেছার ৮৮তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে বঙ্গবন্ধু অান্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অায়োজিত অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অামাদের বাসায় যখন বৈঠক করা নিষেধ ছিল, তখন অামার মা বোরকা পরে বাইরে গিয়ে গোয়েন্দা এসবির (তৎকালীন অাইবি) চোখ ফাঁকি দিয়ে নেতাদের আন্দোলনের পরামর্শ দিতেন। অামার অাব্বার নামে অাইবির ৪৭টি ফাইল ছিল। কিন্তু অামার মার নামে গোয়েন্দারা একটি ফাইলও তৈরি করতে পারেনি। তাই অামি বলি অামার মা ছিলেন সব চেয়ে বড় গোয়েন্দা।

তিনি বলেন, অামার বাবা গ্রেফতার হলে অামরা কাঁদতাম কিন্তু মা কাঁদতেন না। মা বলতেন, এ দেশের সাত কোটি মানুষ তোর বাবার পেছনে অাছে, তাকে কেউ অাটকিয়ে রাখতে পারবে না। মা এই কথা বলার পর অপেক্ষা করতাম কোন দিন বাবা মুক্তি পাবে। কিছুদিন পর মার কথাই সত্য হলো। এ দেশের মানুষের অান্দোলনের চাপে পাকিস্তানিরা বাবাকে মুক্তি দিতে বাধ্য হলো।

শেখ হাসিনা বলেন, এখন যেমন হরতাল ডাকলে হরতাল হয়ে যায়, তখনকার দিনে হরতাল ডাকলে হরতাল সহজে হতো না। এখনকার মতো এত মিডিয়াও তখন ছিল না যে খবরটা পৌঁছাবে। সেখানে লিফলেট করে মানুষের কাছে গিয়ে বলে বোঝাতে হতো, এইভাবে করতে হতো। কিন্তু ইন্টেলিজেন্সের কোনো খাতায়ই কিন্তু আমার মায়ের বিরুদ্ধে কোনো কথা লিখতেই পারেনি। আমি প্রথমবার যখন সরকারে আসলাম আমার একটু আগ্রহ হলো যে, আমার আব্বার বিরুদ্ধে এসবির কাছে কী কী রিপোর্ট আছে। আমি সমস্ত ফাইল নিয়ে আসলাম এবং সবগুলো ফটোকপি করলাম। সেখানে ৪৭টি ফাইল আমার আব্বার বিরুদ্ধে। ফাইলগুলো দেখে আমার মনে হলো যে, আমার মা যে এইভাবে গেরিলার বেশে যেতেন এবং নির্দেশনাগুলো দিতেন, সেটা এই ফাইলে কোথাও আছে কি না। কিন্তু আমি কোথাও পাইনি। এইভাবে যে ছদ্মবেশে আন্দোলনটাকে গড়ে তুলেছেন এবং আন্দোলন কীভাবে করতে হবে, সত্যি কথা বলতে সেটা আমার মায়ের কাছেই দেখা।

মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মেহের অাফরোজ চুমকি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের সচিব নাসিমা বেগম এনডিসি। এছাড়া অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য রাখেন ফজিলাতুন নেছা ইন্দিরা, জাতীয় মহিলা সংস্থার চেয়ারম্যান অধ্যাপক মমতাজ বেগম ও সাংসদ রেবেকা মোমেন।

১৯৩০ সালের ৮ আগস্ট গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় শেখ পরিবারে তার জন্ম জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সহধর্মিণী বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসার। তার বাবা শেখ জহুরুল হক ও মা হোসনে আরা বেগম।

বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের বিভিন্ন অধ্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছেন। অনেক জটিল ও সংকটময় পরিস্থিতিতে বঙ্গবন্ধুর পাশে থেকে তাকে পরামর্শ প্রদান ও সঠিক সিদ্ধান্ত নিতে সহযোগিতা করেছেন তিনি। বঞ্চিত-নিপীড়িত বাঙালির অধিকারের জন্য আন্দোলন করায় পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর আক্রোশে বঙ্গবন্ধু যখন নিয়মিত জেল-জুলুমের শিকার হতেন, তখন বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিব চরম ত্যাগ স্বীকার করে সন্তান-সংসার আগলে রেখেছেন। একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে বাঙালির মুক্তি সংগ্রামকে এগিয়ে নিতে গৃহবন্দি অবস্থায়ও তিনি অসাধারণ ভূমিকা রেখেছেন। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাতে বঙ্গবন্ধু এবং পরিবারের অন্য সদস্যদের সঙ্গে ঘাতকের বুলেটে শহীদ হন তিনি।