ফলোআপ: খুলনা জিয়া হল চত্ত্বরের গাছ কর্তন

0
1112

খুলনা টাইমস প্রতিবেদক
খুলনা নগরীর ঐতিহ্যবাহী জিয়া হল চত্ত্বরের বিভিন্ন প্রজাতির অন্তত ১০-১২টি গাছ কেটে নেওয়ার ১৫ দিন পরেও তদন্ত কাজ শুরু করেনি খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। ফলে আজও শনাক্ত হয়নি দুর্বৃত্তরা। এতে প্রশ্নের মুখে দাঁড়িয়েছে কেসিসি’র অবস্থান। এ ঘটনায় চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন খুলনার নাগরিক নেতৃবৃন্দ।
সূত্র জানায়, বছরের প্রায় ৮-১০ মাসই জিয়া হলের অভ্যন্তরে মেলার আয়োজন করা হয়ে থাকে। গত রোজার ঈদকে কেন্দ্র করে জিয়া হলের অভ্যন্তরে ঈদ মেলা অনুষ্ঠিত হয়। চামেলী ট্রেডার্স ওই মেলার আয়োজন করে। মেলায় বিনোদনের জন্য বিভিন্ন প্রকার রাইডস্ বসিয়ে আয় বৃদ্ধি এবং প্রতি বছর মেলার আয়োজনে পরিবেশ তৈরি করতে গাছ কাটা প্রয়োজন হয়েছে বলে অভিযোগ রয়েছে। তবে চামেলী ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী মোঃ রাসেল মিয়া বরাবরই এ অভিযোগ অস্বীকার করে আসছেন। গত ২৭ ও ২৮ সেপ্টেম্বর স্থানীয় পত্রিকায় বিষয়টি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হলে নড়েচড়ে বসে সিটি কর্পোরেশন। তবে আজও কোন পদক্ষেপ নিতে পারেনি তারা।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি আলহাজ্ব শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, নগরীর প্রাণকেন্দ্র শিববাড়ী’র জিয়া হল থেকে কিভাবে গাছ কাটা হয় তা নিয়ে প্রশ্ন দেখা দিয়েছে। আর ১৫ দিন অতিবাহিত হলেও কোন ব্যবস্থা না নেওয়ায় নতুন করে প্রশ্নের দেখা দিয়েছে।
তিনি আরও বলেন, সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের যোগসাজসে এ ধরনের ঘটনা ঘটতে পারে। তাই তদন্ত পূর্বক এ ব্যাপারে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা উচিত। তিনি বলেন, দুর্নীতির কারণে জিয়া হলটি পুরো ধ্বংস হয়ে গেছে। সেটি পুনঃনির্মাণের কোন উদ্যোগও নেই।
এ বিষয়ে সিটি কর্পোরেশনের এস্টেট অফিসার মোঃ নুরুজ্জামান তালুকদার বলেন, গাছগুলো কখন, কিভাবে এবং কারা কেটেছে কর্পোরেশন কিছুই জানেনা। তবে কর্পোরেশন থেকে গাছ কাটার কোন অনুমোদন দেয়া হয়নি। বিষয়টি তদন্ত করবে কেসিসি।
কেসিসি’র প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা আরিফ নাজমুল হাসান গতকাল বুধবার রাতে বলেন, জিয়া হল পরিদর্শন করে গাছ কাটার সত্যতা পাওয়া গেছে। তবে কারা গাছগুলো কেটে নিয়েছে তা এখনো শনাক্ত হয়নি। এ বিষয়ে তদন্তের জন্য মেয়র বরাবর ফাইল পাঠানো হয়েছে। সেটি অনুমোদন হয়ে আসলে তদন্ত কাজ শুরু করা হবে।
এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, মেলা চলাকালীন গাছগুলো কাটা হয়েছে। তবে আয়োজক চামেলী ট্রেডার্স নাকি অন্য কোন ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান গাছগুলো কেটেছে সে বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে। এ ঘটনায় জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
কেসিসি সূত্র জানায়, নগরীতে রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ভেন্যু বা স্থান নিশ্চিতের জন্য ১৯৮৯ সালে শিববাড়ি মোড়ে একটি পাবলিক হল নির্মাণের উদ্যোগ নেয় খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)। এটি নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় প্রায় ৮ কোটি টাকা। ১৯৮৯ সাল থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে কয়েক ধাপে ওই হলের নির্মাণ কাজ শেষ হলে ‘জিয়া হল’ হিসেবে যাত্রা শুরু করে। এরপর পরিবেশগত উন্নয়ন ও আর্থিক খাতের কথা বিবেচনা করে জিয়া হলের অভ্যন্তরে উন্মুক্ত জায়গায় বিভিন্ন প্রজাতির বনজ ও ফলজ গাছ লাগানো হয়। যা বর্তমানে বৃহৎ আকারের গাছে পরিণত হয়েছে। কিন্তু সম্প্রতি বেড়ে ওঠা বড় বড় ওই গাছের মধ্যে অন্তত ১৫ থেকে ২০টি গাছ রাতের আঁধারে কেটে নিয়ে গেছে দুর্বৃত্তরা। যার আনুমানিক মূল্য কয়েক লাখ টাকা। ফলে পরিবেশগত ক্ষতিসহ বড় ধরনের রাজস্ব থেকে বঞ্চিত হয়েছে কর্পোরেশন।