তালার জেঠুয়ায় জনবহুল ফসলি জমিতে ইট ভাটা স্থাপন

0
472

মোঃ রোকনুজ্জামান টিপু তালা:
ইট পুড়ানো নিয়ন্ত্রণ নীতিমালাকে বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে অবশেষে তালার জেঠুয়ায় কৃষি জমিতেই গড়ে উঠেছে ইট ভাটা। পাশাপাশি প্রায় অর্ধ কি:মি: দূরে গড়ে ওঠা মুন’র পরে এবার চলতি মৌসুমে জনবহুল এলাকার কৃষি জমিতে নতুন করে একই এলাকায় গড়ে উঠল বিসমিল্লাহ ব্রিক্সনামে আরেকটি ইট ভাটা। এতে করে জনবহুল এলাকার সাধারণ মানুষের পাশাপাশি প্রাচীণতম গ্রাম্য জেঠুয়া হাট-বাজার, জালালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, এতিম খানা,জেঠুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, জনবহুল ঘোষ পাড়া,কপোতাক্ষের কোল ঘেঁষে রয়েছে জনবহুল মালোপাড়ার অবস্থান।
এলাকাবাসী জানায়, শুরু থেকেই ভাটা মালিকরা জলাবদ্ধতা নিরসনে প্রায় ৩ শ’কোটি টাকা ব্যয়ে খননকৃত কপোতাক্ষের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধের মাটি কর্তন,নদী তীরের মাটি কর্তন থেকে শুরু করে কৃষকদের প্রলুব্ধ করে কৃষি জমির মাটি কেটে ভাটা পরিচালনা করে আসছে। এতে একদিকে যেমন অবাধ মাটি কর্তনে এলাকা বিরান ভূমিতে রুপ নিচ্ছে অন্যদিকে এর বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। ইতোমধ্যে এর কূ-ফলও ভোগ করছেন এলাকাবাসী।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন,‘আমরা দেশের উন্নয়নের জন্য শিল্পায়নে যাব তবে কৃষিকে বাদ দিয়ে নয়। কেননা, দেশের উন্নয়ন এখনও অনেকাংশে কৃষির ওপর নির্ভরশীল। তিন ফসলী জমিতে তো ইন্ডাস্ট্রি করতেই পারবে না। আর যদি এক ফসলী জমি, যেখানে চাষাবাদ হয় না সেখানে হবে। তবে, যত্রতত্র করতে পারবে না।’কৃষি জমি বাঁচাতে হবে। কারণ, ১৬ কোটির ওপর মানুষের মুখের খাবারের যোগান আসে কৃষি থেকেই। প্রধানমন্ত্রীর আহবানকে উপেক্ষা করে কৃষি জমি নষ্ট করে সাতক্ষীরার তালায় স্থাপন করা হয়েছে ইট ভাটাগুলি।
অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়,সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়ায় বাহারী প্রচারনায় জনবহুল এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে উঠছে বিসমিল্লাহ ব্রিকস ইট ভাটা। অটো ভাটার প্রচার দিয়ে তারা গত ২৫ জুন মঙ্গলবার এর উদ্ভোধন হয়। অটো ভাটার নামে প্রচার দিলেও মূলত তারা সেখানে হাওয়া ভাটা তৈরীর কার্যক্রম শুরু করেছে। এর আগে মাত্র আধা কি:মি: দূরত্বে ঐ এলাকায় মুন ব্রিক্স নামে আরো একটি ইট ভাটার কার্যক্রম চালু রয়েছে। সর্বশেষ দু’দুটি ইট ভাটার অবাধ পরিবেশ শাষনে এলাকার পরিবেশ বিপর্যয়ের আশংকায় রীতিমত আতংক বিরাজ করছে সেখানকার প্রাথমিক বিদ্যালয়,মাধ্যমিক বিদ্যালয়,এতিমখানা,স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স,হাট-বাজার থেকে শুরু করে সু-প্রাচীণকাল থেকে বসবাসরত এলাকাবাসী। তারা তদন্তপূর্বক ঐ এলাকায় ভাটার কার্যক্রম বন্ধে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।
সরেজমিনে প্রতিবেদনকালে দেখা যায়, তালা উপজেলার জেঠুয়া গ্রামের আলহাজ্জ মোবারক হোসেন ও আব্দুর রশিদ সরদারের ছেলে হাফেজ জহুরুল ইসলাম একই এলাকার কামরুল ইসলাম,মো: মোতালেব গংদের কাছ থেকে ১১ নং জালালপুর ইউনিয়নের জেঠুয়া মৌজার জে.এল নং-১৩০,সিট নং-১ এলাকার প্রায় ৪ একর সম্পত্তি ইজারা নিয়ে ২৫ জুন মঙ্গলবার সকালে উদ্ভোধনের মাধ্যমে ইট ভাটা স্থাপনের কাজ শুরু করেছে। যার একপাশে রয়েছে, ঐতিহ্যবাহী জেঠুয়া হাট-বাজার,জনবহুল মালোপাড়া, ঘোষপাড়া, অন্য পাশে জালালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, জাগরণী মাধ্যমিক বিদ্যালয়, জেঠুয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়, একটি এতিম খানা ও অপর পাশ দিয়ে বয়ে গেছে ঐতিহ্যের ধারক কপোতাক্ষ নদী।
এলাকাবাসীর দাবি, প্রথমত মালিক পক্ষ অটো ভাটার নামে প্রচার দিলেও মূলত তারা সেখানে জিকজাঁক হাওয়া ভাটা তৈরীর কার্যক্রম পরিচালনা করছে। জনবহুল ও বিভিন্ন সামাজিক,শিক্ষা,ধর্মীয় ও মানবিক প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ইটভাটা স্থাপিত হলে এলাকার সামগ্রিক পরিবেশ বিপর্যয়ের মুখে সর্বস্তরের মানুষ মারাতœক ক্ষতির সম্মুখিন হবে।
শুধু এখানেই শেষ নয়,নির্ভরযোগ্য সূত্র জানায়,ভাটার জমির ইজারা দাতা ও মালিক পক্ষ পরষ্পর যোগসাজশে বসত-ভিটা থেকে শুরু করে ফসলি জমির দাগ-খতিয়ান সম্পৃক্ত করে ইজারা চুক্তি সম্পন্ন করলেও মুলত তারা বিআরএস খাস খতিয়ানের জমিতেই ভাটা স্থাপন করছেন।
এছাড়া ইট প্রস্তুত ও ভাটা স্থাপন (নিয়ন্ত্রণ) আইন,২০১৩ এর ৫৯ নং আইনের (বাংলাদেশ গেজেটের অতিরিক্ত সংখ্যায় ২০ নভেম্বর ২০১৩ তারিখে প্রকাশিত এবং পরবর্তীতে অধ্যাদেশ নং০২/২০১৮ সংশোধিত) এর প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষকে সম্পূর্ণ ভূল বুঝিয়ে তারা সেখানে ইট ভাটার লাইসেন্স নেয়ার অপচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। আইনের ৮ এর (১) ধারায় আবাসিক,সংরক্ষিত বা বনিজ্যিক এলাকা,সিটি কর্পোরেশন,পৌরসভা বা উপজেলা সদর,সরকারি বা ব্যক্তি মালিকানাধীন বন,অভয়ারণ্য,বাগান বা জলাভূমি,কৃষি জমি,প্রতিবেশগত সংকটাপন্ন এলাকা,ডিগ্রেডেড এয়ার শেড। একই ধারার উপধারা (২) অনুযায়ী এই আইন কার্যকর হবার পর নিষিদ্ধ এলাকার সীমানার অভ্যন্তরে ইটভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশ অধিদপ্তর,বা অন্য কোন কতৃপক্ষ কোন আইনের অধীন কোনরুপ অনুমতি বা ছাড়পত্র বা লাইসেন্স,যে নামেই অভিহিত হউক,প্রদান করিতে পারিবেনা।
আইনের ৩ নং ধারায় ক) উপধারায় বলা হয়েছে, নিষিদ্ধ এলাকার সীমারেখা হতে নূন্যতম ১ কি:মি: দুরত্বের মধ্যে, ঙ) উপধারায় বিশেষ কোন স্থাপনা রেলপথ,শিক্ষা প্রতিষ্ঠান,হাসপাতাল ও ক্লিনিক,গবেষণা প্রতিষ্ঠান,বা অনুরুপ কোন স্থান বা প্রতিষ্ঠান হতে ১ কি:মি: দুরত্বের মধ্যেসহ নানা শর্তানুযায়ী ইট ভাটা স্থাপন করা যাবেনা। তবে আইনের প্রতি বৃদ্ধাঙ্গুলী দেখিয়ে কর্তৃপক্ষ ঐ এলাকায় ভাটা স্থাপন করেছেন।
এব্যাপারে ভাটার ম্যানেজার মফিজুল ইসলাম নিকট ভাটার বৈধতা বা কাগজপত্র আছে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন,সব কিছুই ঠিক আছে তবে তা মেঝ ভাইয়ের কাছে রয়েছে।
এব্যাপারে তালা উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা শুভ্রাংশু শেখর দাশের নিকট জানতে চাইলে তিনি বলেন,ভাটার তদন্তভার তার কাছে রয়েছে। তবে ট্রেনিংয়ের কারণে বাইরে থাকায় তিনি এখনো রিপোর্ট জমা দেননি।
এদিকে তদন্তের আগেই অনুমোদন ও এর কার্যক্রম শুরুর বিষয়টিকে রীতিমত এলাকাবাসী ভিন্ন দৃষ্টিতে দেখছেন। তাদের কার্যক্রমে এলাকাবাসীর মধ্যে রীতিমত নানা আশংকায় আতংক বিরাজ করছে।
এব্যাপারে তালা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ইকবাল হোসেনের নিকট জানতে চাইলে তিনি এপ্রতিনিধিকে জানান, তিনি উপজেলায় নতুন এসেছেন। এখনো পর্যন্ত এনিয়ে কেউ অভিযোগ করেনি। এলাকাবাসী ক্ষতিকর দিকগুলো তুলে ধরে লিখিত অভিযোগ করলে অবশ্যই তদন্তপূর্বক আইনানুগ ব্যবস্থা নেয়া হবে।
সর্বশেষ আ্ইনকে অমান্য করে জনবসতিপূর্ণ কৃষি জমিতে একের পর এক ভাটা স্থাপন ও পরিবেশ বিপর্যয়ে এলাকাবাসী সরকারের সংশ্লিষ্ট উর্দ্ধতন কতৃপক্ষের জরুরী হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন।