পদ্মা সেতুর জন্য ‘রক্ত ও মাথা’ প্রয়োজন বলে ফেসবুকে গুজব ছড়ানোর পর ছেলেধরা আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়েছে সারা দেশে। সরকারের পদ্মা সেতু প্রকল্প ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর পক্ষ থেকে এ ব্যাপারে বিষয়টিকে ¯্রফে গুজব বলা হলেও সাধারণ মানুষের মধ্য থেকে এখনো আতঙ্ক কাটেনি। অনেক এলাকায়ই অপরিচিতদের ‘ছেলেধরা’ সন্দেহ করা হচ্ছে। কোথাও কোথাও নির্মম সহিংসতায় গড়িয়েছে বিষয়টি। এরইমধ্যে বেশ কয়েকজনের প্রাণ গেছে। গত শুক্রবার রাতে ও শনিবার ছেলেধরা সন্দেহে রাজধানী ঢাকা ও ঢাকার সাভারে দুই নারী এবং ঢাকার কেরানীগঞ্জে ও নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জে অজ্ঞাতপরিচয় দুই যুবককে পিটিয়ে হত্যা করেছে এলাকাবাসী। এ ছাড়া সিদ্ধিরগঞ্জ, পাবনার চাটমোহর ও ময়মনসিংহের গফরগাঁওয়ে আরো তিন ব্যক্তি মারাত্মক আহত হয়। গুজব ছড়ানোর অভিযোগে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বেশ কয়েকজনকে গ্রেপ্তার করা হলেও গুজব থেমে নেই। ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ছেলেধরা সন্দেহে অন্তত তিনজনকে পিটিয়ে হত্যার প্রেক্ষাপটে ও বিষয়ের গুরুত্ব বিবেচনা করে পুলিশ এই অপরাধ সম্পর্কে দেশবাসীকে সতর্ক করেছে। পুলিশ সদর দপ্তরের এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, গণপিটুনি দিয়ে মৃত্যু ঘটানো ফৌজদারি অপরাধ। কাউকে ছেলেধরা সন্দেহ হলে ‘গণপিটুনি’ না দিয়ে পুলিশের হাতে তুলে দিতে বলা হয়েছে।
জনসাধারণ সম্পর্কিত যেকোনো বিষয়, ঘটনা বা ব্যক্তি নিয়ে মুখে মুখে প্রচারিত কোনো বর্ণনা বা গল্পই হচ্ছে গুজব। সামাজিক বিজ্ঞানের ভাষায়, গুজব হলো এমন কোনো বিবৃতি, যার সত্যতা অল্প সময়ের মধ্যে অথবা কখনোই নিশ্চিত করা সম্ভব হয় না। অনেকের মতে, গুজব হলো প্রচারণার একটি কৌশল মাত্র। অনেক ক্ষেত্রে ভুল তথ্য এবং অসংগত তথ্য বোঝাতে গুজব শব্দটি ব্যবহৃত হয়ে থাকে। মিথ্যা ও বানোয়াট তথ্য বিশ্বাসযোগ্য করে তুলতেই গুজবের আশ্রয় নেওয়া হয়। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে রাজনীতিতেও গুজব রটানো হয়। এসব ক্ষেত্রে ইতিবাচক প্রচারণার চেয়ে নেতিবাচক প্রচারণাই বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে। গুজব সামাজিক অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির এক মোক্ষম হাতিয়ারও বটে। প্রতিপক্ষের সাফল্য ম্লান করে দেওয়ার অব্যর্থ রাজনৈতিক কৌশল হিসেবেও ব্যবহৃত প্রতিটি গুজবের পেছনে একাধিক স্বার্থান্বেষী গোষ্ঠী থাকে, যারা এই গুজবকে কাজে লাগায়। পদ্মা সেতুর জন্য ‘রক্ত ও মাথা’ প্রয়োজন বলে ফেসবুকে গুজব ছড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। যার ফলও আমরা দেখতে পাচ্ছি। প্রতিদিনই গণমাধ্যমে ছেলেধরা সন্দেহে পিটিয়ে মেরে ফেলার খবর পাওয়া যাচ্ছে। একটি মিথ্যা গুজব শান্তিপ্রিয় মানুষকে যে কতটা নির্মম করে তুলতে পারে, তার প্রমাণ এরইমধ্যে পাওয়া গেছে।
সন্দেহ নেই, একটি পক্ষ গুজব ছড়িয়ে দেশে অস্থিতিশীলতা সৃষ্টি করতে চায়। এই অপশক্তি সম্পর্কে আমাদের সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। কোথাও কাউকে সন্দেহ হলে আইন নিজের হাতে তুলে না নিয়ে সন্দেহভাজনকে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর হাতে তুলে দিতে হবে। আমরা আশা করব, সরকার ও আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীও জনসচেতনতা গড়ে তুলতে কার্যকর ব্যবস্থা নেবে।