‘খুলনার প্রতিটি সড়ক যেন একেকটি খাল’

0
667

এম জে ফরাজী : শুক্রবার দিবাগত রাত ৩টা থেকে শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত প্রবল বর্ষণে তলিয়ে গেছে খুলনা মহানগরীর বেশিরভাগ এলাকা। মুষলধারে বৃষ্টিপাতের কারণে প্রতিটি সড়ক যেন একেকটি খালে পরিণত হয়েছে। দেখে বোঝার উপায় নেই- কোথায় সড়ক আর কোথায় ড্রেন।
টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিতে খুলনার অধিকাংশ সড়ক, অলি-গলির চিত্র এমনটি। মহানগরীর নিচু এলাকার ঘর-বাড়িতেও পানি উঠেছে। রাস্তায় পানি জমে যাওয়ায় জনদুর্ভোগের সৃষ্টি হয়েছে। সড়কে সে অর্থে যানবাহনও দেখা যায়নি। খুলনায় এ বৃষ্টিপাত বছরের সর্বোচ্চ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিস এ তথ্য জানিয়েছে।
খুলনা আঞ্চলিক আবহাওয়া অফিসের সিনিয়র আবহাওয়াবিদ আমিরুল আজাদ বলেন, শুক্রবার রাত ৩টা থেকে খুলনায় মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। যা শনিবার সকাল ৯টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকে। এ সময় ১১৪ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত রেকর্ড করা হয়েছে। যা এ বছরের সর্বোচ্চ হিসেবে রেকর্ড করা হয়েছে। মৌসুমী বায়ু সক্রিয় থাকায় খুলনাঞ্চলে প্রবল বৃষ্টিপাত হয়েছে।
এদিকে বৃষ্টিতে রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় রাস্তায় সাধারণ মানুষের আনাগোনা খুবই কম। সকালের দিকে অফিসগামী মানুষের চলাফেরা বেশি থাকলেও বেলা গড়াতেই মানুষের আনাগোনা কমতে থাকে। পেশার তাগিদে বা জরুরি কাজে যারা বের হয়েছেন, জলাবদ্ধতার কারণে রিকশা বা ইজিবাইক না পেয়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে হিমশিম খেতে হয় তাদের।
প্রবল বর্ষণে মহানগরীর কেডিএ এভিনিউ, লোয়ার যশোর রোড, শান্তিধাম মোড়, রয়্যাল মোড়, বাইতিপাড়া, তালতলা, মডার্ন ফার্নিচার মোড়, পিকচার প্যালেস মোড়, পিটিআই মোড়, সাতরাস্তার মোড়, শামসুর রহমান রোড, আহসান আহমেদ রোড, দোলখোলা, নিরালা, বাগমারা, মিস্ত্রিপাড়া, ময়লাপোতা, শিববাড়ি মোড়, বড় বাজার, মির্জাপুর রোড, খানজাহান আলী রোড, টুটপাড়া, খালিশপুর মেঘার মোড়, দৌলতপুর, নতুনবাজার, পশ্চিম রূপসা, রূপসা স্ট্যান্ড রোড, সাউথ সেন্ট্রাল রোড, বাবুখান রোড, লবণচরা বান্দা বাজার, বাস্তুহারা এলাকাসহ প্রায় সব এলাকার রাস্তায় জলাবদ্ধতা তৈরি হয়েছে। এসব এলাকার অনেক ঘরবাড়ি ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। নিম্নাঞ্চলের বস্তি ঘরগুলোতে দেখা গেছে হাঁটুপানি। অনেক এলাকার ভবনের নিচতলা পানিতে ডুবে গেছে।
মহানগরীর সোনাডাঙ্গা ময়লাপোতা এলাকার ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী আঃ জলিল বলেন, বৃষ্টি দেখে মনে হচ্ছিল সকালে আর দোকান খোলা যাবে না। সড়কে বের হওয়াই কঠিন হবে। সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি ঘরের দরজা পর্যন্ত পানি চলে এসেছে। রাস্তায় হাটু পানি। পরে বৃষ্টি কমে আসায় তেমন আর তলিয়ে যায়নি।
বেসরকারি চাকরিজীবী আরিফ রহমান বলেন, সকাল থেকে খালিশপুর এলাকা যানবাহন শূন্য। অফিসে যেতে ভীষণ বেগ পেতে হয়েছে। নগরীর মুজগুন্নী এলাকায় শিশুপার্কের সামনে প্রায় হাঁটুপানি। এছাড়া ভারী বৃষ্টিতে খালিশপুরের অধিকাংশ রাস্তা তলিয়ে গেছে। সব জায়গায় পানি আর পানি।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির সভাপতি শেখ মোশাররফ হোসেন বলেন, অপরিকল্পিত ড্রেনেজ ব্যবস্থা, ময়লা-আবর্জনা, খাল ভরাট, অবৈধ দখল ও বাঁধ দিয়ে মৎস্য চাষসহ নানা কারণে সামান্য বৃষ্টিতে নগড়জুড়ে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হচ্ছে। এতে দুর্ভোগের শিকার হন নগরবাসী। তিনি বলেন, ২২ খাল পুনরুদ্ধার ও খনন ছাড়া মহানগরী খুলনার জলাবদ্ধতার নিরসন করা কঠিন।