ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার নিষিদ্ধের নির্দেশ

0
276

বাংলাদেশে পলিথিন ব্যাগ ও একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর দৌরাত্ম্য মারাত্মকভাবে বেড়ে চলেছে। এগুলো আমাদের ভূমির উর্বরতা কমানো, বায়ূ দূষণ এবং সমুদ্রের জলজ উদ্ভিদ ও প্রতিবেশকে মারাত্মক হুমকির মধ্যে ফেলছে। ফলে এসব প্লাস্টিক ও পলিথিনের উৎপাদন এবং ব্যবহার কমাতে হবে বলে আমরা মনে করি। ওয়ানটাইম প্লাস্টিক পণ্য ইতিমধ্যে দেশের পরিবেশের জন্য আপদ হয়ে দেখা দিয়েছে। এর ব্যবহার যত বাড়ছে পরিবেশের জন্য ততটাই বিপদ ডেকে আনছে। পলিথিনের কাছে দেশ ও জাতির জিম্মি অবস্থার অবসান কিছুতেই ঘটছে না। পলিথিন ব্যাগ ব্যবহারে আইনি নিষেধাজ্ঞা থাকলেও তা কার্যকরের কোনো অথরিটি দেশে আছে বলে মনে হয় না।
উপকূলীয় অঞ্চলসহ দেশের হোটেল, মোটেল ও রেস্টুরেন্টে একবার ব্যবহারযোগ্য (ওয়ানটাইম) প্লাস্টিক পণ্যের ব্যবহার এক বছরের মধ্যে নিষিদ্ধের নির্দেশ দিয়েছে হাই কোর্ট। একই সঙ্গে পলিথিন ও পলিথিন ব্যাগ ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকরের জন্য বাজার তদারকি এবং পলিথিন উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি জব্দ ও কারখানা বন্ধের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। গত সোমবার এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে বিচারপতি মইনুল ইসলাম চৌধুরী ও বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ রুলসহ এ আদেশ দেয়। আগামী বছরের ৫ জানুয়ারির মধ্যে রিটের বিবাদীদের এ আদেশ বাস্তবায়নের বিষয়ে আদালতে প্রতিবেদন দিতে বলা হয়েছে। আদালত তার রুলে ২০২২ সালের ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে সারা দেশে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক পণ্যের বিপরীতে নিরাপদ বিকল্প কী হতে পারে সে বিষয়ে কর্মপরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ কেন দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়েছে।
আমরা জানি, বাংলাদেশে পরিবেশ সংরক্ষণ আইন অনুসারে পলিথিন নিষিদ্ধ করার বিধান রয়েছে। ২০০২ সালে প্রকাশিত এ সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপনও রয়েছে। দেশের বিভিন্ন প্লাস্টিকের সামগ্রীর মধ্যে, কটন বার্ড, প্লাস্টিক বোতল, প্লেট, ব্যাগ ও ফুড প্যাকেজিংয়ের ব্যবহার দিন দিন বেড়ে যাচ্ছে। দেশের ৫৪টি নদী ও উপকূলীয় অঞ্চল থেকে প্লাস্টিক বর্জ্যগুলো বঙ্গোপসাগরে পড়ছে। এতে পানি, মৎস্য ও সামুদ্রিক প্রাণীর মধ্যে ব্যাপক বিরূপ প্রভাব পড়ছে।
প্রতিবেশী দেশ ভারতের কেরালার সমুদ্রসৈকতে একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়েছে। একেক দেশের নিয়ন্ত্রণ ও আইন একেক রকম হলেও, বিশ্বের মোট ১২৭টি দেশে পলিথিন ব্যাগ এবং একবার ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক সামগ্রীর উৎপাদন, বিপণন, বিতরণে নিয়ন্ত্রণ আনা হয়েছে। রুয়ান্ডাতে যেমন পলিথিন ব্যাগ নিষিদ্ধ করা হয়েছে, তেমনি ওইখানে মাদকের চেয়েও সিরিয়াসলি নেয়া হয় পলিথিন ব্যাগের ব্যবহারকে। বৈশ্বিকভাবেই প্লাস্টিকের ব্যবহারের বিরুদ্ধে জনমত তৈরি হলেও বাংলাদেশের এর ব্যবহার দিনে দিনে বাড়ছে।
আমাদের বিশ্বাস, পলিথিন ব্যবহার বন্ধে বিদ্যমান আইনি নিষেধাজ্ঞা কঠোরভাবে কার্যকরে বাজার তদারকি, পলিথিন উৎপাদনকারী যন্ত্রপাতি জব্দ ও কারখানা বন্ধসহ পলিথিন এবং ওয়ান টাইম প্লাস্টিক পণ্যের আগ্রাসন বন্ধে আদালতের নির্দেশনা বাস্তবায়নে প্রশাসন সক্রিয় হবে। এটি তাদের অবশ্য পালনীয় ও কর্তব্য বলে বিবেচিত হতে হবে।