আসামে ‘বিদেশি’ ঘোষিত ব্যক্তির লাশ নিয়ে ৪ দিন ধরে অচলাবস্থা

0
303

খুলনাটাইমস বিদেশ : গত চারদিন ধরে আসামে এক ব্যক্তির মরদেহ ঘিরে ব্যাপক টানাপড়েন চলছে। আসামের তেজপুরে বিদেশি ঘোষিত ওই ব্যক্তি গত রোববার ডিটেনশন সেন্টার থেকে হাসপাতালে নেয়ার পর মারা গেলে এই টানাপড়েন শুরু হয়। ‘ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণা দেয়া হলেই কেবল তার মরদেহ পরিবার নেবে; অন্যথায় নয়’ বলে জানিয়ে দেয়। নিহত ওই ব্যক্তির নাম দুলাল চন্দ্র পল (৬৫)। তিনি আসামের সোনিতপুর জেলার আলিসিঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা। রোববার শারীরিক অসুস্থতাজনিত কারণে গুয়াহাটি মেডিক্যাল কলেজে নেয়া হলে সেখানে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি। দুলাল চন্দ্র সেনকে ভারতীয় নাগরিক হিসেবে ঘোষণার দাবিতে গ্রামের ১০ হাজারের বেশি মানুষ রাস্তা অবরোধ করে ধর্নায় বসেছেন। তাকে ভারতীয় হিসেবে ঘোষণা না দেয়া হলে মরদেহ পরিবার গ্রহণ করবে না বলে ঘোষণা দিয়েছে। এ ঘটনায় স্থানীয় সরকার একটি তদন্ত কমিটি গঠনের নির্দেশ দিয়েছে। দুলাল চন্দ্র সেনের বড় ছেলে আশিষ এনডিটিভিকে বলেছেন, ‘রাজ্য যেহেতু তাকে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে, সেহেতু তার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো উচিত। যদি রাজ্য সরকার বিবৃতি জারি করে বলে যে, দুলাল বিদেশি নন, বরং ভারতীয় নাগরিক; তবেই আমরা তার মরদেহ গ্রহণ করবো।’ পরিবারের সদস্যরা বলেছেন, মানসিকভাবে অসুস্থ হওয়া সত্ত্বেও দুলাল চন্দ্র পলকে ২০১৭ সালে বিদেশি হিসেবে ঘোষণা দেয়া হয়। পরিবারের সদস্য ও গ্রামবাসীদের বোঝানোর জন্য রাজ্য সরকার গত চারদিন ধরে সরকারি কর্মকর্তাদের মৃত দুলালের বাড়িতে পাঠিয়েছেন; যাতে তারা মরদেহ গ্রহণ করে। কিন্তু সরকারি কর্মকর্তাদের কোনো কথাতেই মরদেহ নিতে রাজি হয়নি তারা। সোনিতপুরের উপকমিশনার মানবেন্দ্র প্রতাপ সিং বলেন, মৃত দুলালকে বিদেশি ঘোষণা করেছে ট্রাইব্যুনাল। ফলে তাদের দাবি নিয়ে আলোচনা করা প্রশাসনের আওতার বাইরে। যদি তারা ট্রাইব্যুনালের রায়কে চ্যালেঞ্জ করে উচ্চ আদালতে যেতে চান, তাহলে আমরা তাদের আইনিভাবে সাহায্য করতে পারি। আমরা এটি নিয়ে সামনে এগিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করছি। রাজ্যের কর্মকর্তারা বলেছেন, দুলাল চন্দ্র পালের ডায়াবেটিস এবং সাইকিয়াট্রিকের চিকিৎসা চলছিল। গত ১১ অক্টোবর তেজপুর মেডিক্যাল কলেজের চিকিৎসকরা বেশ কিছু পরীক্ষা করেন; সেদিনই তাকে ডিনেটশন সেন্টারে ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়। পরিবার এবং গ্রামবাসীদের দাবি, মরদেহ ফিরিয়ে দিতে সঙ্গে একটি নথি নিয়ে আসেন জেলের কর্মকর্তারা। সেখানে তাকে বিদেশি বলে ঘোষণা দিয়ে ঠিকানার জায়গা ফাঁকা রাখা হয়েছে। দুলাল চন্দ্র সেনের ছেলে আশিষ বলেন, তারা খুব ভালভাবেই ঠিকানা জানতেন, তারপরও জায়গাটি খালি রাখা হয়েছে। আমাদের মনে হয়, তারা বাংলাদেশের কোনো ঠিকানা দিতে পারতেন। যদি তিনি বাংলাদেশিই হন, কেন আমাদের কাছে আনা হয়েছে? তাদের উচিত আমার বাবার মরদেহ বাংলাদেশে পাঠানো। আসামের জাতীয় নাগরিক পঞ্জিকা থেকে প্রায় ১৯ লাখ মানুষের নাম বাদ পড়ে। নভেম্বরে ট্রাইব্যুনালে নাগরিক পঞ্জিকা থেকে বাদ পড়া ব্যক্তিরা আপিল করতে পারবেন বলে ধারণা করা হচ্ছে।