২ শতাংশ সরল সুদে এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ) ঋণপ্রাপ্তির আবেদন শুরু

0
622

খুলনা টাইমস ডেস্কঃ মূলধনভিত্তিক বিনিয়োগ তহবিল ইকুইটি অ্যান্ড এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ ফান্ড (ইইএফ) এখন থেকে ভিন্ন নামে ও কাঠামোয় পরিচালিত হবে। তহবিলটির নতুন নাম হবে এন্ট্রাপ্রেনিউরশিপ সাপোর্ট ফান্ড (ইএসএফ)। এ তহবিল থেকে খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ, কৃষিভিত্তিক এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি) খাতের উদ্যোক্তারা ২ শতাংশ সরল সুদে তাদের প্রকল্প ব্যয়ের সর্বোচ্চ ৪৯ শতাংশ ঋণসহায়তা পাবেন।
ইতিমধ্যে উদ্যোক্তারা এ তহবিলের আওতায় ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদনপত্র (ইওআই) দাখিল করা শুরু করেছেন। সম্প্রতি বাংলাদেশ ব্যাংক এ-সংক্রান্ত একটি চূড়ান্ত নীতিমালা জারি করেছে এবং তা দেশের সব তফসিলি ব্যাংক, আর্থিক প্রতিষ্ঠান, সোনালী ইনভেস্টমেন্ট লিমিটেড ও আইসিবি ক্যাপিটাল ম্যানেজমেন্ট লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী ও ব্যবস্থাপনা পরিচালকদের কাছে পাঠিয়েছে।

২০০০-০১ অর্থবছরে প্রাথমিকভাবে ১০০ কোটি টাকা বরাদ্দ নিয়ে যাত্রা করে ইইএফ। লক্ষ্য ছিল উল্লিখিত তিনটি খাতে নতুন উদ্যোক্তা তৈরি, এসব খাতে বিনিয়োগের জন্য বেকার ও কর্মক্ষম যুবকদের উৎসাহ প্রদান, কর্মসংস্থান তৈরি এবং আর্থসামাজিক অবস্থা তথা সামগ্রিক অর্থনৈতিক উন্নয়ন।

প্রথমদিকে সরকারের সঙ্গে এজেন্সি চুক্তির আওতায় বাংলাদেশ ব্যাংক প্রকল্পটির ব্যবস্থাপনায় আসে। পরবর্তী সময়ে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সঙ্গে স্বাক্ষরিত একটি সাব-এজেন্সি চুক্তির আওতায় ২০০৯ সালের ১ জুন থেকে ইইএফের পরিচালন কার্যক্রমের দায়িত্ব পায় ইনভেস্টমেন্ট করপোরেশন অব বাংলাদেশ (আইসিবি)। কিন্তু তহবিল গঠনের প্রায় দেড় যুগ পেরিয়ে গেলেও ছাড়কৃত অর্থের বড় একটি অংশ অনাদায়ী থাকায় এর কাঙ্ক্ষিত সুফল মিলছিল না। মূলত এ কারণেই তহবিলটি বিকল্প ব্যবস্থাপনায় পরিচালনের উদ্যোগ নেয়া হয়। এরই ধারাবাহিকতায় সংশ্লিষ্ট পক্ষগুলোর মধ্যে বেশ কয়েক দফা সভা ও আলোচনার পর ইকুইটি মডেলের পরিবর্তে সহনীয় মাত্রার সরল সুদহার-সংবলিত ঋণ মডেল প্রবর্তনের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বাংলাদেশ ব্যাংক প্রণীত নতুন ইইএফ নীতিমালা অনুযায়ী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিভিত্তিক খাতে যেসব উদ্যোগের প্রকল্প ব্যয় ৮০ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা, সেসব ক্ষেত্রে ইএসএফ তহবিল থেকে ঋণ নেয়া যাবে। যন্ত্রপাতিনির্ভর প্রকল্পের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ ব্যয় হতে হবে ১২ কোটি টাকা। অন্যদিকে আইসিটি খাতে ৫০ লাখ থেকে ৫ কোটি টাকা পর্যন্ত ব্যয়ের প্রকল্প ঋণসহায়তার জন্য বিবেচ্য হবে। এক্ষেত্রে উদ্যোক্তাদের মূলধন ও ঋণের অনুপাত হবে যথাক্রমে ৫১ শতাংশ ও ৪৯ শতাংশ। অবশ্য বাস্তবতার নিরিখে ঋণসহায়তার পরিমাণ ৪৯ শতাংশের চেয়ে কমও হতে পারে। সেক্ষেত্রে উদ্যোক্তার মূলধনের পরিমাণ আনুপাতিক হারে বৃদ্ধি পাবে।

নীতিমালায় বলা হয়েছে, ইএসএফ তহবিল থেকে ২ শতাংশ সরল সুদে আট বছর মেয়াদি ঋণসহায়তা দেয়া হবে। মঞ্জুরিকৃত ঋণের অর্থ কিস্তির ভিত্তিতে বিতরণ করা হবে। মঞ্জুরিপত্র পাওয়ার এক বছরের মধ্যে উদ্যোক্তাকে কোম্পানির অনুকূলে জমির দলিলায়ন ও তার নিজস্ব মূলধনি অংশের বিনিয়োগ সম্পন্ন করতে হবে। প্রথম কিস্তি বিতরণের সর্বোচ্চ এক বছর ছয় মাসের মধ্যে মেয়াদি ঋণের সম্পূর্ণ অংশ গ্রহণ করতে হবে ও প্রকল্পের পূর্ণ বাস্তবায়ন সম্পন্ন করতে হবে। তা না হলে মেয়াদ পূর্তির আগেই উদ্যোক্তাকে গৃহীত ঋণ সুদসহ ফেরত দিতে হবে।

প্রথম কিস্তির অর্থ বিতরণের পর প্রথম চার বছর গ্রেস পিরিয়ড হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পরবর্তী চার বছরে মোট আটটি ষাণ্মাসিক সমান কিস্তিতে সুদসহ ঋণের পুরো অর্থ আদায় করা হবে। কিস্তি ছাড়ের তারিখ থেকে বিতরণকৃত ঋণের ওপর সুদ হিসাব করা হবে। প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী আসল ও সুদ সমন্বয় করে কিস্তির পরিমাণ হিসাব করা হবে। নির্দিষ্ট সময়ে কিস্তি পরিশোধে ব্যর্থ হলে জরিমানা হিসেবে অতিরিক্ত ২ শতাংশ সুদ দিতে হবে। উল্লেখ্য, ব্যাংকঋণসহ কোনো প্রকল্প প্রস্তাব ঋণসহায়তার জন্য বিবেচনা করা হবে না।

নীতিমালা অনুযায়ী, খাদ্য প্রক্রিয়াকরণ ও কৃষিভিত্তিক শিল্পের ২৬টি উপখাতের উদ্যোক্তারা ইএসএফ ফান্ড থেকে ঋণ গ্রহণের জন্য আবেদন করতে পারবেন। এছাড়া আইসিটি খাতের ছয়টি উপখাতের প্রকল্পের জন্য ঋণপ্রাপ্তির আবেদন করা যাবে।