১০ মাসে ৩০টি সিনেমাও মুক্তি পায়নি!

0
292

খুলনাটাইমস বিনোদন: একেকবার একেকটা ঘটনা সামনে আসে সেই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সবাই বুক বাঁধে সিনেমার দিন ফিরবে। কিন্তু ঘটনা ঘটে গেলেও তার কোথাও কোনো পরিবর্তন দেখা যাচ্ছে না। প্রত্যাশা ছিল মিয়াভাই খ্যাত নায়ক ফারুক এমপি হলে সিনেমার পালে বসন্তের হাওয়া লাগবে। ‘মিয়াভাই’ তার বক্তব্যে বলতেন, ‘আমি আগে সিনেমার মানুষ তারপর ব্যবসায়ী বা নেতা।’ তার আবেগকে সমর্থন দিয়ে সিনেমার মানুষেরা এক হয়ে ফারুকের জন্য শ্রম দিলেন। তার নির্বাচনী প্রচারণায় অংশ নিলেন। তিনি পাস করে সংসদেও গেলেন। সেখানে গিয়ে বললেন, আগে তিনি এলাকার মানুষের নেতা, এরপর সিনেমার ফারুক। চলচ্চিত্রের অভিভাবক সংগঠন প্রযোজক সমিতির নির্বাচন হয় না কয়েক বছর। অবশেষে যখন সব ঝামেলা মিটিয়ে নির্বাচনের ঘোষণা এলো সবাই নড়েচড়ে বসলো প্রযোজকদের নতুন কমিটি হাল ধরবে চলচ্চিত্রের। কিন্তু বাস্তবতা বলছে হতাশার কথাই। প্রযোজক সমিতির নতুন কমিটি দায়িত্ব নেয়ার কয়েক মাস পেরিয়ে গেলেও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন দেখা যায়নি। সিনেমার ঘোষণা না দিয়ে প্রযোজকরা আলোচনায় থাকছেন নানা রকম মিটিং, অনুষ্ঠান আর নিয়মনীতি প্রণয়ন করে। সদ্য শেষ হওয়া শিল্পী সমিতি নিয়ে তো কিছু আশা করাই বোকামি। কারণ, সিনেমা বাঁচানো বা সিনেমা বানানোর দায়িত্ব এই সমিতির নয়। তার ওপর নানা অভিযোগ-অনিয়মে আক্রান্ত এ সমিতি। শিল্পীদের স্বার্থের চেয়ে এখানে নেতাদের ব্যক্তি স্বার্থই মুখ্য হয়ে উঠেছে বলে অভিযোগ অনেক সিনিয়র তারকার। এর বাইরে ঢাকাই সিনেমার বর্তমান সময়ের সবেধন নীলমণি নায়ক শাকিব খানও নিজেকে নিয়ে দিন পার করছেন। তার মনোযোগ বা ভাবনা তার ক্যারিয়ার কেন্দ্র করেই। ইন্ডাস্ট্রি চাঙ্গা করতে যে একটা সম্মিলিত প্রয়াস প্রয়োজন সেটা হয়তো তিনি উপলব্ধি করেন না। করলেও ‘একক দায়ের কী ঠেকা পড়েছে’ ভাবনা থেকে হয়তো অন্য নায়ক বা তারকাদের ওপর ইনভেস্ট করেন না তিনি। কিন্তু পাশের দেশ ভারতের কলকাতা থেকে শুরু করে তামিল-তেলেগু ও বলিউড সিনেমায় চিত্রটা বেশ সুন্দর। অনেক নামি দামি তারকা নিজের বাইরে গিয়ে সিনিয়র-জুনিয়র তারকাদের জন্য প্রযোজনা করছেন। সিনেমার চাকা সচল রাখছেন। আমাদের শাকিব খান একটু কৌঁসুলি হলে, সর্বজনীন হলে একটা ইতিবাচক ফলাফল হয়তো পাওয়া যেত। চাইলেই যে শাকিব নিজের ব্র্যান্ড ভ্যালু কাজে লাগিয়ে ইন্ডাস্ট্রির বড়ভাই হয়ে, ত্রাতা হয়ে সিনেমায় বিনিয়োগ বাড়িয়ে সবাইকে নিয়ে কাজে মশগুল হতে পারতেন সেই তিনি গুটিয়ে রেখেছেন নিজেকে নিজের জন্যই। কিছু শখের প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান আসছে তাকে কেন্দ্র করে। তারা তেলা মাথায় তেল দিয়ে আলোচনার মিছিলে রঙিন হয়ে সেসব প্রতিষ্ঠান হারিয়েও যাচ্ছে অকালে। কবরী, সুচন্দা, ববিতা, ইলিয়াস কাঞ্চন, মৌসুমী, রিয়াজ, ফেরদৌস, পূর্ণিমারা অনেক দিন ধরেই চলচ্চিত্রে রয়েছেন। তাদের অনেকেই অভিনয়ের পাশাপাশি প্রযোজনাও করে সফল হয়েছেন। কিন্তু এখন সিনেমার যখন দুর্দিন তা কাটিয়ে উঠতে কেউ সিনেমায় লগ্নি করছেন না। ইন্ডাস্ট্রির করুণ অবস্থার দোহাই দিয়ে কেউই প্রযোজনায় আসতে সাহস করছেন না। বিশেষ করে তারা আতঙ্কিত সিনেমা হল মালিকদের সিন্ডিকেট নিয়ে। তাহলে সিনেমার হাল ধরবে কে? কিসের ওপর ভর কাটবে এ শনিরদশা? উত্তর জানা নেই কারো, হয়তো! একদিকে বন্ধ হতে হতে ২শ’র নিচে নামতে চলছে সিনেমা হল। অন্যদিকে সিনেমার নির্মাণও কমে গেছে আশঙ্কাজনকভাবে। সারা বছর মুক্তি পাচ্ছে না ৫০টি ছবিও। গত বছর দেশীয় ছবি মুক্তি পায় ৩৫টি, আমদানি করা ছবি ৯টি ও যৌথ প্রযোজনার দুটি। মোট ৪৬টি! এটি ছিলো সর্বনিম্ন রেকর্ড। এবার মনে হচ্ছে সেই রেকর্ড ভেঙ্গে নতুন রেকর্ড করতে যাচ্ছে ঢাকাই সিনেমা। বছর শেষে হয়তো ৩০ সিনেমাও পাওয়া যাবে না মুক্তির তালিকায়। ধারাবাহিকতায় ২০১৯ সালটিও শুরু হয় হতাশা দিয়ে। পুরো জানুয়ারি মাসে মাত্র একটি ছবি মুক্তি পায় ‘আই অ্যাম রাজ’ নামে। মাত্র চার-পাঁচটি প্রেক্ষাগৃহে মুক্তি পেয়েছিল ছবিটি। সম্মানের সাথে ফ্লপও হতে পারেনি এ ছবি। ছিল না কোনোরকম আলোচনাও। এরপর ৮ ফেব্রুয়ারি মুক্তি পায় ‘আমার প্রেম আমার প্রিয়া’ ছবিটি। শামীমুল ইসলাম শামীম পরিচালিত ছবিটি কিছুটা প্রশংসা পেলেও ভালো প্রচারণার অভাবে লাভের মুখ দেখতে পায়নি কায়েস আরজু ও পরীমনি জুটি। সর্বশেষ মুক্তি পাওয়া ‘ডনগিরি’ সহ হলে এসেছে আর মাত্র ২৩টি ছবি। যার মধ্যে একটি যৌথ প্রযোজনার। অর্থাৎ অক্টোবরের ৩১ তারিখে বছরের যখন ৪৩টি সপ্তাহ শেষ হবে তখন ঢাকাই সিনেমার ঝুলিতে জমা পড়েছে মাত্র ২৫টি সিনেমা। একসময় যেখানে প্রতি সপ্তাহে ২টি বা তারও বেশি সিনেমা মুক্তি পেয়েছে সেখানে সিনেমার এমন ভয়াবহ খরা শিল্প ঘোষিত হওয়া এ বাণিজ্য খাতের জন্য লজ্জার ও হতাশার। এসব ছবির মধ্যে ব্যবসা করেছে এমন তালিকা করতে গেলে সেই লজ্জা ও হতাশা আরও বাড়বে। ‘পাসওয়ার্ড’ ছাড়া আর কোনো ছবিই টাকা তুলতে সফল হওয়ার তালিকায় নেই। তবে বেশ আলোচনার জন্ম দিয়ে প্রশংসিত হয়েছে ‘যদি একদিন’, ‘নোলক’, ‘ফাগুন হাওয়ায়’, ‘আবার বসন্ত’, ‘মায়াবতী’, ‘সাপলুুডু’, ‘ডনগিরি’ ছবিগুলো। বছর শেষে সিনেমার সংখ্যার শেষটা কতোতে গিয়ে ঠেকে সেটাই এখন দেখার বিষয়। তবে আপাতত হিসাব বলছে, সব মিলিয়ে আর ৫-৭টি সিনেমাই যোগ দেবে ২০১৯ সালের মিছিলে।