শিশুদের স্মার্টফোন আসক্তির ভয়াবহ প্রভাব

0
458

খুলনাটাইমস অনলাইন ডেস্কঃ পুরনো ঢাকার অধিবাসী নজরুল ইসলামের পাঁচ বছরের শিশুকন্যা জারা। এখন হাই পাওয়ারের চশমা ব্যবহার করে। চশমা ছাড়া পড়তে সমস্যা হয়, টিভি দেখতেও সমস্যা হয়। একজন চক্ষু বিশেষজ্ঞ সারাক্ষণ জারাকে চশমা পড়ার উপদেশ দিয়ে সতর্ক করেছেন, নিয়মিত চশমা ব্যবহার না করলে তার চোখের অবস্থা আরও খারাপ হতে পারে।

জারার মা ঝর্না বেগম অশ্রুসিক্ত নয়নে বলেন, ‘দুই-আড়াই বছর বয়স থেকেই জারা মোবাইল ফোনে গেম খেলে। গত কয়েকদিন আগে সে আমাকে জানায়, সে ঠিকমতো টিভি দেখতে পারে না, অস্পষ্ট দেখে। সেই সময় ওর চোখের নিচে কালো দাগও আমরা লক্ষ্য করি।চোখের ডাক্তারকে উদ্ধৃত করে ঝর্না বলেন, ‘মোবাইলের মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহারের কারণেই ওর চোখের এই অবস্থা হয়েছে। সম্প্রতি ভারতের চার্টার বিশ্ববিদ্যালয় তাদের একটি গবেষণায় দেখিয়েছে, স্মার্ট ফোনের অধিক ব্যবহার চোখের রেটিনা, কর্নিয়া এবং অন্যান্য অংশকে ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।

১৬ বছর বয়সী মেহেদি প্রাঞ্জলের বাবা আবদুল বারাক বলেন, ‘সম্প্রতি আমি লক্ষ্য করলাম যে, আমার ছেলে আমার মানি ব্যাগ থেকে টাকা চুরি করা শুরু করেছে। কারণ এবার এসএসসি ফেল করার কারণে আমি ওকে হাত খরচ দেওয়া বন্ধ করে দিয়েছি। সব আমার দোষ, আমি কেন যে ওকে ফোন কিনে দিলাম’, হাহাকার করে ওঠেন বারাক। তিনি জানান, মেহেদি যখন অষ্টম শ্রেণিতে পড়ে, তখন তিনি ওকে ফোন কিনে দেন। মেহেদি সারাক্ষণ ফোন নিয়ে থাকতেই পছন্দ করে। কারো সাথে কথা পর্যন্ত বলে না। ফোন কেড়ে নিলে প্রচণ্ড হিংসাত্মক হয়ে ওঠে।

এতে কোনো সন্দেহ নেই যে, ফোন অনেক কিছু সহজ করে দিয়েছে। পাশাপাশি বয়ে নিয়ে এসেছে বিবিধ সমস্যা।লিটেল জুয়েল স্কুলের শিক্ষিকা সাইদা ইয়াসমিন বলেন, ‘মাঝে মাঝে কিছু বাচ্চা স্কুলে ফোন নিয়ে আসে। এমনকি শিক্ষকদের উপস্থিতিতে তারা ক্লাসে ফোন ব্যবহার করে। ক্লাসে তাদের মন বসে না, বাড়ির কাজ করে না; যার প্রভাব পড়ে তাদের পরীক্ষার রেজাল্টের ওপর। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লিনিক্যাল সাইকোলজি ডিপার্টমেন্টের শিক্ষক উম্মে কাওসার বলেন, ‘সবচেয়ে খারাপ দিক হলো, তারা পরিবারের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয়। তারা ফোনে মেসেজ, নোটিফিকেশন চেক করতেই ব্যস্ত থাকে। ফোন তাদের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিলে তারা খেপে যায়।’

শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের শিশু বিশেষজ্ঞ এ এসএম মাহমুদুজ্জান বলেন, ‘আজকের শিশুরা রেডিও ফ্রেকুয়েন্সি ঘেরা এক পরিবেশের মধ্যে বড় হচ্ছে। ফোন থেকে যে রেডিও ফ্রিকুয়েন্সি নির্গত হয়, তা তাদের জন্য ভয়ংকর পরিণতি নিয়ে আসতে পারে। যেসব শিশুরা ফোন ব্যবহার করে তারা অপেক্ষাকৃত অনিদ্রা এবং অস্থিরতায় ভুগে থাকে।

অবশ্য এই শিশু বিশেষজ্ঞ কিছু পরামর্শ দিয়েছেন, যার মাধ্যমে শিশুদের ওপর ফোনের কুপ্রভাব কমে যাবে। সেগুলো হলো- কথা বলার সময় এয়ারফোন ব্যবহার করা, বাচ্চাদেরকে স্কুলে ফোন নিয়ে যাওয়ার অনুমতি না দেওয়া, শোয়ার ঘরে ফোন নিতে না দেওয়া এবং বাচ্চাদের সঙ্গে মোবাইলের ক্ষতিকর প্রভাব সম্পর্কে কাউন্সিলিং করা।