শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ, কলেজ জীবন শুরু হল অনলাইনে

0
153

টাইমস ডেস্ক :
করোনাভাইরাস মহামারীর মধ্যে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ থাকায় উচ্চ মাধ্যমিকের নবীন শিক্ষার্থীদের পাঠদান শুরু হল অনলাইনে। শিক্ষামন্ত্রী দীপু মনি গতকাল রোববার সকালে ঢাকা কলেজ আয়োজিত এক ভার্চুয়াল অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের অনলাইন পাঠদান কার্যক্রমের উদ্বোধন করেন। ঢাকা কলেজসহ রাজধানী বেশ কয়েকটি কলেজের শিক্ষক এবং একাদশ শ্রেণির নবীন শিক্ষার্থীরা ভার্চুয়াল এ অনুষ্ঠানে অংশ নেন। স্কুল পেরিয়ে কলেজ জীবনের শুরুতে নতুন শিক্ষায়তনে নবীন শিক্ষার্থীদের যে প্রাণচাঞ্চল্য প্রতিবছর থাকে, এবার তা অনলাইনেই সীমাবদ্ধ থাকছে। নতুন ক্লাস, নতুন বই, নতুন বন্ধু, নতুন জীবনে নবসূচনা- সবই এবার অন্যরকম। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে শিক্ষামন্ত্রী বলেন, “সঙ্কট দেখে ভয় পাওয়ার কিছু নেই। সব সঙ্কটই নতুন সম্ভাবনা তৈরি করে। আগামী দিনগুলোতে অনেক পরিবর্তন আসবে। এই পরিবর্তনের সাথে আমাদের খাপ খাইয়ে নিতে হবে। আমরা অনেক সীমাবদ্ধতা দেখছি, কিন্তু আসলে অনেক সম্ভাবনা। আমরা যেন এগুলোকে কাজে লাগাই। তিনি বলেন, একসময় মনে করা হত ‘শিক্ষকরাই জ্ঞানের মূল উৎস’। কিন্তু ডিজিটাল প্রযুক্তির বদলে যাওয়া পৃথিবীতে সেই ধারণা এখন আর খাটে না। এখন জ্ঞানের বহু ওপেন রিসোর্স রয়েছে। ডিজিটাল ক্লাসরুমে শিক্ষক আর এককভাবে জ্ঞানের উৎস নন, তিনি এখন শিক্ষার্থীদের গাইড করছেন, শিক্ষার্থীরা কোন কোন উৎস থেকে তথ্য পেতে পারে। শিক্ষকদেরও কিন্তু এখন নিজেদের খাপ খাইয়ে নেওয়ার বিষয় আছে। নতুন পরিস্থিতিতে একটা প্যারাডাইম শিফট হচ্ছে। পাঠ্যবইয়ের পাশাপাশি নিজেকে জানা ও নিজেদের ইতিহাস-ঐতিহ্যকে জানতে বিভিন্ন বই পড়ার ওপর গুরুত্ব আরোপ করেন দীপু মনি।
একাদশের নবীন শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, পড়াশোনার মূল উদ্দেশ্য নিজেকে জানা। নিজেকে জানতে গেলে অনেক কিছু জানতে হয়। নিজের ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতিকে জানতে হয়। আমরা এমন একটা দেশে জন্মগ্রহণ করেছি, যার রয়েছে হাজার বছরের ইতিহাস। এই সমৃদ্ধ ইতিহাস কিন্তু আমাদের শক্তির উৎস। এটা আমাদের জানতে হবে। আমি শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে বলব, এই ইতিহাস তোমাদের জানতে হবে। নিজেদের সমৃদ্ধ ভবিষ্যৎ তৈরি করতে হবে। বঙ্গবন্ধুর তিনটি বই- ‘অসমাপ্ত আত্মজীবনী’, ‘কারাগারের রোজনামচা’ ও ‘আমার দেখা নয়াচীন’ পড়তে সবার প্রতি আহ্বান জানান শিক্ষামন্ত্রী। শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী অনুষ্ঠানে বলেন, আজকে যারা ক্লাস শুরু করতে করতে যাচ্ছে, তাদের সকলকে অভিনন্দন। তারা একটি কঠিন পথ পাড়ি দিয়ে কাজটি শুরু করতে যাচ্ছে। তবে আমি মনে করি, আমাদের একটা বৈপ্লবিক সুযোগ এসেছে বহুমাত্রিক শিক্ষায় দক্ষতা অর্জনের। আমি শিক্ষার্থীদের প্রতি অনুরোধ করব, এই বহুমাত্রিক শিক্ষার সাথে সাথে বহু ধারার শিক্ষা গ্রহণ করার মানসিকতা থাকতে হবে। তিনি বলেন, অনেক অভিভাবকদের মধ্যে, শিক্ষার্থীদের মধ্যে এই ধারণা তৈরি হয়েছে যে লেখাপড়া করার উদ্দেশ্য হল সুন্দর পোশাক পড়ে টেবিল চেয়ারে বসে চাকরি করা। এটা কিন্তু শিক্ষার মানে নয়। আমরা জানি উন্নত বিশ্বে তারা কেন উন্নত হতে পেরেছে, মানব সম্পদ সৃষ্টি করতে পেরেছে। সেটা কিন্তু শ্রেণিকক্ষভিত্তিক পাঠদানের মাধ্যমে সৃষ্টি হয়নি। জীবনের নানান কাজে নানান প্রয়োজনে তাদের দক্ষ জনশক্তি সৃষ্টি করতে হয়েছে। ঢাকা কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক নেহাল আহমেদের সঞ্চালনায় মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব মো. মাহবুব হোসেন, কারিগরি ও মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মো. আমিনুল ইসলাম খান, মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক প্রফেসর ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক, ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর মু. জিয়াউল হক অনুষ্ঠানে অংশ নেন।