লাফিয়ে বাড়ছে এরদোয়ানের জনপ্রিয়তা, কিš’ কেন?

0
177

টাইমস বিদেশ :
এরদোয়ানের আগের তুরস্ক এবং এরদোয়ান পরবর্তী তুরস্ক যে অনেক আলাদা আরবরা তা বুঝতে পারছে। শাসকদের তীব্র বিরোধিতা সত্ত্বেও সাধারণ আরব জনগণের মাঝে হু হু করে বাড়ছে তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়িপ এরদোয়ানের। অতি সম্প্রতি প্রকাশিত আরব জনমতের ওপর একটি ব্যাপক-ভিত্তিক জরিপের ফলাফলের বরাত দিয়ে এ কথা জানিয়েছে বিবিসি বাংলা। এতে বলা হয়, মিসরকে সঙ্গে নিয়ে উপসাগরীয় অধিকাংশ আরব দেশ তুরস্ককে কোণঠাসা করার উপায় খুঁজতে তৎপর হলেও সিংহভাগ আরব জনগণ মনে করছে এরদোয়ানই তাদের সবচেয়ে বড় শুভাকাড়ক্ষী। তুরস্ক এবং প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ব্যাপারে আরব দেশের সরকার ও জনগণের এই বিপরীত অব¯’ান উন্মোচিত হয়েছে ওই জরিপের ফলাফলে। আরব বিশ্বের ১৩টি দেশে পরিচালিত হয় এই জনমত জরিপ। জরিপে অংশগ্রহণকারীদের ৫৮ শতাংশই মনে করেন, অন্য যে কোনো দেশের নীতির তুলনায় তুরস্কের মধ্যপ্রাচ্য-নীতি আরব স্বার্থের পক্ষে। ফিলিস্তিন ইস্যু তো বটেই, এমনকি সিরিয়া এবং লিবিয়ায় তুরস্কের বিতর্কিত সামরিক হস্তক্ষেপও সিংহভাগ আরব জনগণ সমর্থন করছে। তুরস্কের পর চীন ও জার্মানির মধ্যপ্রাচ্য নীতির প্রতি আরবদের মনোভাব সবচেয়ে ইতিবাচক। চীনের নীতির প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেন ৫৫ শতাংশ, আর জার্মানির নীতির পক্ষে ইতিবাচক মতামত দেন ৫২ শতাংশ উত্তরদাতা। উল্টোদিকে, সবচেয়ে নেতিবাচক দ”ষ্টিভঙ্গি প্রকাশ পেয়েছে আমেরিকার মধ্যপ্রাচ্য-নীতির ব্যাপারে। এশিয়া ও আফি”কায় আরব বিশ্বের ১৩টি আরব রাষ্ট্রে বিভিন্ন জাতীয়, আঞ্চলিক এবং আন্তর্জাতিক ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের মনোভাব জানতে এই জরিপটি করেছে দোহা এবং বৈরুতভিত্তিক গবেষণা সং¯’া ‘আরব সেন্টার ফর রিসার্চ অ্যান্ড পলিসি স্টাডিজ’।
লন্ডনে রাজনৈতিক ঝুঁকি সম্পর্কিত গবেষণা সং¯’া ইন্টারন্যাশনাল ইন্টারেস্টের প্রধান এবং মধ্যপ্রাচ্য রাজনীতির বিশ্লেষক সামি হামদি মনে করেন, তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে ব্যক্তি প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান যে সাধারণ আরব জনগণের বিরাট একটি অংশের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়ে উঠছেন, তা নিয়ে সন্দেহের কোনো অবকাশ নেই।
তিনি বলেন, ‘সন্দেহ নেই তুরস্কের গ্রহণযোগ্যতা, বিশেষ করে সাধারণ প্রান্তিক আরব জনগোষ্ঠীর কাছে, বাড়ছে। এবং গ্রহণযোগ্যতা বাড়ার পেছনে তুরস্ক রাষ্ট্রের চেয়ে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ানের ভাবমূর্তি প্রধান ভূমিকা রাখছে।’ সামি হামদি বলেন, ‘এরদোয়ানের আগের তুরস্ক এবং এরদোয়ান পরবর্তী তুরস্ক যে অনেক আলাদা আরবরা তা বুঝতে পারছে। তারা জানে তুরস্কের নতুন যে বিদেশ নীতি তার ¯্রষ্টা এককভাবে এরদোয়ান।’ তার মতে, এরদোয়ানের আগের তুরস্ককে আরবরা দেখতো একটি নিপীড়নকারী রাষ্ট্র হিসেবে যারা আরব এবং মুসলিমদের স্পর্শকাতরতাকে তোয়াক্কা করতো না। এটি ঐতিহাসিক সত্য যে একসময় আরবরা যখন স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্রের দাবি আদায়ে এককাট্টা হয়ে কাজ করছিল, তুরস্ক তখন পুরো উল্টো পথে গিয়ে ইসরায়েলকে স্বীকৃতি দিয়েছে’ যোগ করেন তিনি। ‘কিš’ আরবরা এখন দেখছে প্রেসিডেন্ট এরদোয়ান তুরস্কের সেই অব¯’ান বদলে দিয়েছেন। মিশর, ইউএই (সংযুক্ত আরব আমিরাত), তিউনিসিয়া এবং এমনকি সৌদি শাসকরা যখন আরবদের চিরাচরিত মুসলিম পরিচিতি এবং সত্তাকে খাটো করার চেষ্টা করছেন, এরদোয়ান তখন মুসলিম পরিচিতি তুলে ধরতে দ্বিধাহীনভাবে সো”চার। এটা আরব বিশ্বের বহু মানুষকে আকৃষ্ট করছে।’ সামি হামদি মনে করেন, এরদোয়ানের তুরস্কের প্রতি এই মু”তার সাথে ‘আরব বসন্ত‘ পরবর্তী রাজনৈতিক পরি¯ি’তির যোগসূত্র রয়েছে। আরব বসন্তের পর মিসরসহ যেসব দেশে নির্বাচন হয়েছিল, তাতে প্রধানত ইসলামপš’ীরা জয়ী হলেও কিছুদিনের মধ্যে তাদের ক্ষমতাচ্যুত করা হয়। তিনি বলেন, ‘বিশেষ করে মিশরে নির্বাচিত মুসলিম ব্রাদারহুড সরকারকে টেনে-হিঁচড়ে নামানো এবং তা নিয়ে প”থিবীর অনেক ক্ষমতাধর দেশ যেভাবে চুপ ছিল, অনেক মানুষ তাতে প্রচ- ক্ষুব্ধ। তারা মনে করেছে, একটি মুসলিম পুনর্জাগরণ ঠেকাতে চক্রান্ত হয়েছে।’ সামি হামদির মতে, তুরস্কের গণতান্ত্রিকভাবে নির্বাচিত প্রেসিডেন্ট যখন জোর গলায় ইসলামি সত্তার কথা বলেন, তখন আরব বিশ্বের বহু মানুষ মনে করে যে তিনি আসলে তাদেরই মনের কথা বলছেন।তিনি বলেন, ‘আরব বিশ্বের মানুষ দেখছে মিস্টার এরদোয়ান একজন ইসলামপš’ী হলেও গণতান্ত্রিক তুরস্কের রাজনীতিতে তিনি এক”ছত্র প্রাধান্য বিস্তার করতে পেরেছেন। তিনি তার দেশকে অর্থনৈতিক উন্নয়ন দিয়েছেন, দেশের সামরিক শক্তি বাড়িয়েছেন। যুক্তরাষ্ট্র, রাশিয়া বা ইউরোপের মতো বড় বড় শক্তির সঙ্গে চোখে চোখ রেখে কথা বলছেন। এতে বহু আরব মু” হ”েছন।’ সামি হামদি বলেন, ‘আরবদেরও স্বপ্নও তেমন, তারা তাদের নিজেদের দেশকে, নিজেদের সরকার এবং নেতাদের এভাবেই দেখতে চায়। ফলে এরদোয়ানের সঙ্গে তারা নিজেদের মেলাতে পারছেন এরদোয়ানের মধ্যে তারা বাস্তবে একটি আদর্শ মুসলিম নেতা খুঁজে পা”েছন।’ জনমত জরিপে ফিলিস্তিন ইস্যুতে সাধারণ আরব জনগণের আবেগের যে চিত্র ফুটে উঠেছে, তা ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরিতে ই”ছুক আরব নেতাদের মাথাব্যথার কারণ হতে পারে। ফলাফলে দেখা গেছে, এখনো ৮৯ শতাংশ আরব মনে করেন যে ফিলিস্তিন ইস্যু বি”িছন্ন কোনো ইস্যু নয়, বরং এটি একটি আরব ইস্যু। এমনকি উপসাগরীয় দেশগুলোর জনগণের মধ্যেও এই মনোভাব এখনো খুবই জোরালো। জরিপের ফলাফল অনুযায়ী, এখনো ৮৮ শতাংশ আরব ইসরায়েলের সঙ্গে সম্পর্ক স্বাভাবিক করার বিপক্ষে। মাত্র ছয় শতাংশ সমর্থন করে। কেন- এ প্রশ্নে উত্তরদাতারা প্রধান কারণ হিসেবে ফিলিস্তিনিদের প্রতি ইসরায়েলের ‘বর্ণবাদী আচরণ‘ এবং ফিলিস্তিনি ভূমি ‘জবরদখল’ করার কথা উল্লেখ করেছেন। কোন দেশ আরবদের নিরাপত্তার জন্য সবচেয়ে বড় হুমকি- এমন এক প্রশ্নের জবাবে ৬৬ শতাংশ উত্তরদাতাই ইসরায়েল এবং যুক্তরাষ্ট্রের কথা বলেছেন। অনেক বিশ্লেষক মনে করছেন, ইসরায়েলের ব্যাপারে এই বৈরী জনমত বুঝেই হয়তো ইহুদি ওই রাষ্ট্রের সঙ্গে সম্পর্ক ¯’াপন নিয়ে সৌদি শাসকরা দোটানায় পড়েছেন। প্রশ্ন হলো আরব শাসকেরা কি তাদের জনগণের মধ্যে এরদোয়ানের এই প্রভাব নিয়ে আদৌ বিচলিত? সাদি হামদি বলেন, আরব নেতাদের সামনে রাস্তা দুটো- এরদোয়ানের সঙ্গে সন্ধি করা অথবা তার মোকাবিলা করা।তিনি বলেন, ‘অনেক আরব শাসক মনে করেন, এরদোয়ান নতুন এক অটোমান স¤্রাট হতে চাইছেন। তারা তাই ইসরায়েল এবং আমেরিকার সঙ্গে মিলে এরদোয়ানকে সামলানোর চেষ্টাই করছেন।’ তার মতে, জনমতের ব্যাপারে এখনো অধিকাংশ আরব শাসক খুব বেশি গুরুত্ব দিতে রাজি নন। তিনি বলেন, ইসরায়েলের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক সম্পর্ক নিয়ে সৌদি রাজপরিবারের একাংশের মধ্যে এখনো যে দ্বিধা, তার পেছনে ব”হত্তর মুসলিম বিশ্বের প্রতিক্রিয়া নিয়ে উদ্বেগই বেশি প্রাধান্য পা”েছ। ‘সৌদি রাজপরিবার মক্কা ও মদিনার মসজিদের রক্ষক। ব”হত্তর ইসলামি দুনিয়ায় তাদের সেই মর্যাদা এবং গ্রহণযোগ্যতা ক্ষুণœ হওয়া নিয়ে তারা বেশি চিন্তিত’ যোগ করেন সামি হামদি।