জমে উঠেছে রাজশাহীর আমের বাজার

0
960

সাইমুম মোর্শেদ, রাজশাহী থেকেঃ
আমের শহর রাজশাহী।শহরের এ প্রান্ত থেকে ও প্রান্ত সব জায়গায় ঝুড়ি ঝুড়ি আমের সমাহার।রাজশাহীর আম দেশ বিখ্যাত।এবার দেশের গন্ডি পেরিয়ে রাজশাহীর আম যাচ্ছে ইউরোপেও। এ বছর আমের দাম স্বাভাবিকের তুলনায় কম বলে জানিয়েছেন ক্রেতা-বিক্রেতারা। স্থানীয় আম ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, রাজশাহীতে প্রায় ১৫০ প্রজাতির আম উৎপাদিত হয়। আমের রাজ্য বানেশ্বরের হাটে লখনা, ক্ষীরশা, গোপালভোগ, গুটি জাতের আম এসেছে।
ব্যবসায়ীরা জানান, রাজশাহীর সবচেয়ে বড় আমের মোকাম বানেশ্বর বাজার। এ হাটে প্রায় ১৫০টি আমের আড়ত আছে। প্রতিদিন সকাল থেকে রাত পর্যন্ত চলে আমের বেচাকেনা। দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে পাইকাররা এখানে আসেন আম কিনতে। আর প্রতিদিন রাজশাহী জেলার বিভিন্ন এলাকা থেকে আম বিক্রি করতে বানেশ্বর হাটে আসেন বিক্রেতারা। বর্তমানে বাজারে লখনা আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৯০০ থেকে ১ হাজার ১০০ টাকায়, ক্ষীরশা ১ হাজার ৭০০ থেকে ২ হাজার টাকায়, গোপালভোগ ১ হাজার ৮০০ থেকে ২ হাজার ১০০ টাকায়, গুটি আম বিক্রি হচ্ছে প্রতি মণ ৮০০ থেকে ১ হাজার টাকায়। ব্যবসায়ীরা জানান, এবার রাজশাহীতে আম প্রচুর উৎপাদন হওয়ার ফলে ব্যবসায়ীরা আশায় গুঁড়েবালি পড়েছে।তারা আশা করছিলেন আমের দাম চড়া হবে। কিন্তু দাম স্বাভাবিকের তুলনায় কম থাকায় কিছুটা হতাশ ব্যবসায়ীরা।

বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী সাইদুল ব্যাপারী খুলনাটাইমসকে বলেন, এখান থেকে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ ট্রাক আম দেশের বিভিন্ন প্রান্তে যায়। বড় ব্যবসায়ীরা ও কোম্পানি এসে এখান থেকে আম কেনেন। প্রতিদিন প্রায় ২ কোটি টাকার আম বেচাকেনা হয় এ হাটে। আম বিক্রেতা সাইদুর রহমান বলেন, আমের বাজার শুরুতে চড়া ছিল। রোজার শুরু থেকে আমের আমদানি বেশি হওয়ায় দাম কিছুটা কম। বানেশ্বর হাটের আম ব্যবসায়ী আলমাস আলম বলেন, গেলবার তারা ২ টন আম সিঙ্গাপুর ও সৌদি আরবে পাঠিয়েছিলেন। সেখান থেকে ভালো সাড়া পাওয়া গেছে। এবার ১৫ টন আম বিদেশে পাঠানোর পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। এজন্য ৫০ হাজার ক্ষীরশাপাত, লক্ষণভোগ, ল্যাংড়া ও ফজলি আম ব্যাগিং পদ্ধতিতে প্রস্তুত করা হচ্ছে।

অন্যদিকে রাজশাহীর চাঁপাইনবাবগঞ্জে ১৪ বছরের আম উৎপাদন ও ব্যবসায়ী জীবনে আমের এমন দরপতন কখনো দেখিনি’ বুধবার (১১জুলাই) বিকেলে খুলনা টাইমসকে এমন কথাই বলেন চাঁপাইনবাবগঞ্জের শিবগঞ্জ উপজেলার কানসাটের মো. রহিম (৪৫)।

মো. রহিম বলেন, ‘এবার উৎপাদন খরচই উঠবে না। লাভের মুখ দেখেছে চাপাইতে এমন আম চাষি ও ব্যবসায়ী খুঁজে পাওয়া যাবে না। এবার আম ব্যবসায় ১২ লাখ টাকা বিনিয়োগ করেছিলাম। এর অর্ধেকও উঠে আসবে না। এখানকার বিখ্যাত দুটি জাত ক্ষীরসাপাত (হিম সাগর) ও ল্যাংড়া এখন প্রায় শেষ। এ দুটি জাতের আম বিক্রি করে চাষি ও ব্যবসায়ীরা কোনো লাভ করতে পারেনি। আশা ছিল, ফজলি আমে হয়তো কিছুটা ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে পারে। কিন্তু সে আশাতেও গুঁড়েবালি পড়েছে। চাঁপাইনবাবগঞ্জের সবচেয়ে বড় আম বাজার কানসাটে এখন ফজলি আমের মণ বিক্রি হচ্ছে ৮০০ থেকে ১৫০০ টাকা দরে। তাও আবার আমের ‘মণ’ হয় ৪৬ বা ৪৭ কেজিতে।’

আমের দরপতনের কয়েকটি কারণ উল্লেখ করতে গিয়ে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, চাঁপাইনবাবগঞ্জের উপপরিচালক মঞ্জুরুল হোদা খুলনাটাইমসকে বলেন, চাহিদার তুলনায় এবার আম উৎপাদন হয়েছে বেশি। গতবারের উৎপাদন ছিল প্রায় দুই লাখ ৪৪ হাজার মেট্রিক টন। এবার উৎপাদন হয়েছে প্রায় দুই লাখ ৭৫ হাজার মেট্রিক টন। এ ছাড়া আমের বহুমুখী ব্যবহার বাড়েনি। রপ্তানি বাড়েনি।

মঞ্জুরুল হোদা আরো বলেন, ‘বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা কাউন্সিল এবং খাদ্য মন্ত্রণালয়ের অধীন নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষ আনুষ্ঠানিকভাবে বলেছে, আম একটি নিরাপদ খাদ্য। রাসায়নিক পদার্থ দিয়ে পাকানো আম যে স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর নয়, তাও বলা হয়েছে। কিন্তু গণমাধ্যমে এর তেমন প্রচার দেখা যায়নি। অন্যদিকে ঢাকার রাস্তায় সাতক্ষীরার আম ধ্বংস হয়েছে। এর ফলাও প্রচার হয়েছে। আম নিয়ে মানুষের মধ্যে ভীতি তৈরি হয়েছে। দেশের বিভিন্ন স্থানে থাকা আমাদের বন্ধু-বান্ধবরাই আমাদের কাছ থেকে নিরাপদ আম চেয়েছে। তাঁরা ঢাকার বাজার থেকে কিনতে ভয় পেয়েছে।’তিনি আরো বলেন এ অবস্থা উত্তরণে চাষিদের সাংগঠনিক ভিত্তি মজবুত করতে এবং সম্মিলিতভাবে আমের ইতিবাচক প্রচার ও ব্যবস্থা বাড়াতেও তিনি পরামর্শ দেন।