যেকোনো মূল্যে খাদ্যে ভেজাল বন্ধ করতে হবে

0
389

খাদ্যে ভেজাল মেশানোর কারণে দেশের মানুষের স্বাস্থ্য চরম ঝুঁকিতে রয়েছে। দেশের বিভিন্ন জায়গায় প্রায় প্রতিদিনই ভেজালবিরোধী অভিযান চালানো হয়, তবে খাদ্যে ভেজাল মেশানোর যে অনৈতিক প্রতিযোগিতা তার সঙ্গে সমানুপাতিক নয়। এছাড়া সরকারের ভেজালবিরোধী অভিযানের সক্ষমতাও যথেষ্ট নয়। সরকারের ভেজাল বিরোধী অভিযানের প্রতিষ্ঠানগুলোকে যে জরিমানা করা হয় তা যথেষ্ট নয়। কারণ তারা এর আগে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নেয়। রাজনৈতিক ব্যক্তিত্ব বা উচ্চপর্যায়ের যোগাযোগ থাকায়, অনেক অসাধু ব্যবসায়ীকে পার পেয়ে যাচ্ছে। বহু বিদেশি কোম্পানি রয়েছে যারা আমাদের খাদ্য প্রশাসনের দুর্নীতি ও দুর্বলতার সুযোগ নিয়ে এদেশে ভেজাল খাবার ও ভেজাল পণ্য সরবরাহ করছে। তাদের বিরুদ্ধেও কোনো ব্যবস্থা দৃশ্যমান নয়।
বাংলাদেশে অধিকাংশ খাদ্যদ্রব্য অনিরাপদ বা বিভিন্ন মাত্রায় ভেজালযুক্ত। এ সমস্যা খাদ্য উৎপাদন করা থেকে খাওয়ার পূর্ব পর্যন্ত প্রতিটি স্তরে বিদ্যমান। খাদ্য উৎপাদক, প্রস্তুতকারক, প্রক্রিয়াজাতকারক, বিভিন্ন হোটেল ও খাবার দোকান প্রত্যেকেই এ ভেজালীকরণ প্রক্রিয়ায় জড়িত। গণমাধ্যমে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, খাদ্যপণ্য ভেজালের কারণেই দেশে বিভিন্ন রকমের ক্যানসার, লিভার সিরোসিস, কিডনি ফেলিউর, হৃদযন্ত্রের অসুখ, হাঁপানি অনেক বেড়ে যাচ্ছে। শুধু ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে দেশে প্রতি বছর প্রায় ৩ লাখ লোক ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছে। ডায়াবেটিস আক্রান্তের সংখ্যা ১ লাখ ৫০ হাজার, কিডনি রোগে আক্রান্তের সংখ্যা ২ লাখ। এ ছাড়া গর্ভবতী মায়ের শারীরিক জটিলতাসহ গর্ভজাত বিকলাঙ্গ শিশুর সংখ্যা দেশে প্রায় ১৫ লাখ। কেমিক্যাল মিশ্রিত বা ভেজাল খাদ্য গ্রহণের ফলে যে উপসর্গগুলো দেখা যায়, সেগুলো হলো- পেট ব্যথাসহ বমি হওয়া, মাথাঘোরা, মল পাতলা বা হজম বিঘিœত মল, শরীরে ঘাম বেশি হওয়া এবং দুর্বল হয়ে যাওয়া, পালস্ রেট কমে বা বেড়ে যেতে পারে। ভেজাল খাবারের কারণে যে রোগগুলো দ্বারা মানুষ বেশি আক্রান্ত হয়, তাহলো অ্যালার্জি, অ্যাজমা, চর্মরোগ, বমি, মাথাব্যথা, খাদ্য বিষক্রিয়া, অরুচি, উচ্চরক্তচাপ, ব্রেন স্ট্রোক, কিডনি ফেলিউর, হার্ট অ্যাটাক প্রভৃতি।
মেধাবী জাতি গঠনে নিরাপদ খাদ্যের বিকল্প নেই। ভেজাল খাদ্যের জন্য অসাধু ব্যবসায়ীরা যেমন দায়ী তেমনি জনগণের সচেতনতার অভাবও দায়ী। সেজন্য নিরাপদ খাদ্য আন্দোলন গড়ে তোলা অত্যন্ত জরুরি। সরকারের একার পক্ষে খাদ্য দস্যুদের সিন্ডিকেটের মোকাবিলা করা সম্ভব নয়। জনতার অংশগ্রহণ ছাড়া এ সমস্যার সমাধান ও মূলোৎপাটন সম্ভব নয়। সমাজের প্রতিটি শ্রেণী ও পেশার মানুষকে এগিয়ে আসতে হবে।
বাংলাদেশ নিরাপদ খাদ্য কর্তৃপক্ষকে কার্যক্রম বাড়াতে হবে, আরো সক্রিয় হতে হবে এবং তাদের আরো ক্ষমতা দিতে হবে। নিয়মিত খাদ্য নিরাপত্তা ও ভেজাল বিরোধী অভিযান চালাতে হবে এবং অপরাধীকে সনাক্ত করতে জনগণের সহায়তা নিতে হবে। জনস্বাস্থ্য হুমকির সম্মুখীন করার জন্য বিদ্যমান আইনেই যথার্থ বিচার ও শাস্তি প্রদান করা সম্ভব। আমাদের দেশেও খাদ্যে ভেজালের সর্বোচ্চ শাস্তি মৃত্যুদ-ের বিধানও করা যেতে পারে। আমরা কর্তৃপক্ষকে এসব বিষয়ে ভেবে দেখার আহ্বান জানাই।