যশোরে বোমা ফাটিয়ে টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় আটক ৫

0
207

টাইমস ডেস্ক:
যশোরে দিনে-দুপুরে থানার একশ গজের মধ্যে বোমা ফাটিয়ে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের চাঞ্চল্যকর ঘটনায় জড়িত পাঁচজনকে আটক করেছে পুলিশ। গত বুধবার বিকেল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর বিভিন্ন এলাকায় অভিযান চালিয়ে এই পাঁচ চিহ্নিত অপরাধীকে আটক করা হয়। এ সময় উদ্ধার করা হয়েছে, ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা, ২টি চাকু, ব্যাগ ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত মোটরসাইকেল। ছিনতাইয়ের মূল পরিকল্পনাকারী আটক হলেও বাস্তবায়নকারীসহ চিহ্নিত আরও দু’জনকে আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। একজন গডফাদারের ছত্রছায়ায় এই অপরাধীরা থাকেন বলে পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে। আটকরা হলেন, যশোর শহরের পুলিশ লাইন টালিখোলা এলাকার শফি দারোগার বাড়ির ভাড়াটিয়া ফরিদপুর জেলার মুনসুর মোল্যার ছেলে টিপু (২৪), শহরের বারান্দি মোল্লাপাড়া এলাকার রবিউল ইসলামের ছেলে সাঈদ ইসলাম ওরফে শুভ (২৪), ধর্মতলা হ্যাচারিপাড়া এলাকার রুহুল আমিনের ছেলে বিল্লাল হোসেন ওরফে ভাগনে বিল্লাল (২২), সিটি কলেজ ব্যাটারিপট্টি এলাকার নিজাম উদ্দিনের ছেলে রায়হান (২৮) ও পূর্ব বারান্দি মালোপাড়া এলাকার মুফতি আলী হুসাইনের ছেলে ইমদাদুল হক (২১)। তবে এই টাকা লুটের ঘটনার মূল পরিকল্পনাকারী টিপু এবং পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী জামাই রাজ্জাক ওরফে রাজ্জাক ফকির এখনও আটক হননি। গত ২৯ সেপ্টেম্বর দিনে-দুপুরে থানার একশ গজের মধ্যে ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক লি. (ইউসিবিএল) এর সামনে বোমা ফাটিয়ে ১৭ লাখ টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে। এ সময় ছুরিকাঘাত ও বোমার আঘাতে টাকা বহনকারী দু’জন আহত হন। গতকাল বৃহস্পতিবার দুপুরে পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে চাঞ্চল্যকর ও রোমহর্ষক এই ছিনতাইয়ের ঘটনা নিয়ে প্রেস ব্রিফিং করেন পুলিশ সুপার মোহাম্মদ আশরাফ হোসেন। ব্রিফিংকালে পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন বলেন, আরএন রোড এলাকার আগমনী মোটরসের মালিক ইকবাল হোসেনের মোটরপার্টস ও ফলের আড়তের ব্যবসা রয়েছে। তার ভাই এনামুল হক ফলের আড়তের ১৭ লাখ টাকা ব্যাংকে জমা দেয়ার জন্য যাচ্ছিলেন। এই আড়তে দীর্ঘদিন শ্রমিকের কাজ করতো টিপু। মাঝে মধ্যেই এনামুল মোটরসাইকেলে করে ব্যাংকে টাকা জমা দিতে যায় বিষয়টি জানা ছিল তার। টিপুই এই টাকা লুটের পরিকল্পনা করে। পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য পাশের ফল ব্যবসায়ী রাজ্জাক ফকির ওরফে জামাই রাজ্জাককে সাথে নেয়। জামাই রাজ্জাকই বাকি অপরাধীদের যুক্ত করে। পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন আরও বলেন, ঘটনার সময় টিপু রাস্তার বিপরীত পাশে থেকে টাকা বহনকারী এনামুলকে সঙ্গীদের চিনিয়ে দেয়। এরপর তারা উপর্যুপরি ছুরিকাঘাত করে টাকা ছিনিয়ে নিয়ে ককটেল ফাটিয়ে মোটরসাইকেলে পালিয়ে যায়। ঘটনার পর যশোর পুলিশ নড়েচড়ে বসে। গোয়েন্দা ও কোতোয়ালি পুলিশ অপরাধীদের শনাক্ত করে অভিযান শুরু করে। গত বুধবার বিকেল থেকে গতকাল বৃহস্পতিবার ভোর পর্যন্ত সদরের ধর্মতলা, বসুন্দিয়া আলাদিপুর, বারান্দি মোল্লাপাড়া, সিটি কলেজ ব্যাটারিপট্টি ও পুলিশ লাইন টালিখোলায় অভিযান চালিয়ে ৫ জনকে আটক করে। টাকা ভাগবাটোয়ারা হয়ে যাওয়ায় এদের কাছ থেকে উদ্ধার হয়েছে ২ লাখ ৪৮ হাজার ৫শ টাকা। এছাড়াও ছিনতাইকালে ব্যবহৃত একটি মোটরসাইকেল, ১টি স্কুলব্যাগ ও ২টি চাকু উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনায় জড়িত প্রত্যেকেই হত্যা, ডাকাতি, ছিনতাইসহ বিভিন্ন মামলার আসামি বলে জানিয়েছেন এসপি। পুলিশ সুপার আশরাফ হোসেন আরও জানান, পরিকল্পনা বাস্তবায়নকারী জামাই রাজ্জাক পিরোজপুরের কবির ফকিরের ছেলে। তার বিরুদ্ধে পিরোজপুর ও যশোরে একাধিক মামলা রয়েছে। যদিও সে ওই এলাকায় ফলের ব্যবসা করতো। এই জামাই রাজ্জাকসহ চিহ্নিত আরও দু’জনকে আটকের জন্য পুলিশি অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এদের কাছেই বাকি টাকা রয়েছে। এসপি বলেন, এই অপরাধীরা একজন হোয়াইট কালার ক্রিমিনাল বা গডফাদারের ছত্রছায়ায় থাকে। ঘটনার সঙ্গে সংশ্লিষ্টতা পেলে তাকেও আইনের আওতায় আনা হবে। প্রেস ব্রিফিংকালে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, অতিরিক্ত পুলিশ সুপার মোহাম্মদ সালাউদ্দিন শিকদার, তৌহিদুল ইসলাম, গোলাম রব্বানী, কোতোয়ালি থানার ওসি মনিরুজ্জামান ও ডিবির ওসি মারুফ আহম্মদ প্রমুখ।