টাইমস ডেক্স:মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৪৬৩ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের মোবাইল অ্যাকাউন্টে আসা প্রাথমিক উপবৃত্তির ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০টাকা কৌশলে হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র। হতাশায় দিন কাটছে অভিভাবকদের। স্থানীয় শিক্ষা অফিস এর কোনো সমাধান দিতে পারেনি। তবে অধিদপ্তরে ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানো হয়েছে বলে জানায় তারা। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, সরকার শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদের কাছে উপবৃত্তির টাকা সহজে পৌঁছে দেয়ার জন্য ‘নগদ’ এর সঙ্গে চুক্তি করে প্রাথমিক শিক্ষা অধিদপ্তর। গত বছরের ডিসেম্বর মাসে এ চুক্তির পর চলতি বছরের মার্চ পর্যন্ত অভিভাবকদের কাছে টাকা পৌছায়। প্রযুক্তি ব্যবহার করে একটি চক্র অনেক অভিভাবকের কাছ থেকে পিনকোড ও পাসওয়ার্ড জেনে নিয়ে কৌশলে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। স্থানীয়দের অভিযোগ- প্রযুক্তি ব্যবহার করে স্থানীয় ও রাজধানী ঢাকার একটি চক্র উপবৃত্তির যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করে। তারা সারাদেশে নেটওয়ার্ক তৈরি করে সরলমনা অভিভাবকদের ম্যাসেজ দিয়ে অভিনব কৌশলে পিনকোড ও পাসওয়ার্ড হ্যাক করে টাকা উত্তোলন করে নিচ্ছে। মৌলভীবাজারের সাতটি উপজেলা থেকে জালিয়াতি চক্রের শিকার হয়েছেন এমন অভিভাবকদের তালিকা সংগ্রহ করেছে উপজেলা শিক্ষা অফিস। কথা হয় জেলার রাজনগর উপজেলার ভাঙ্গারহাট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর অভিভাবক সুহেলী বেগম, মমতা বেগম, নাসিমা আক্তার, মনোয়ারা খাতুনের সঙ্গে। তারা বলেন, মোবাইল ফোনে টাকার পরিমাণসহ ম্যাসেজ আসে। অপর প্রান্ত থেকে বলা হয় আপনার উপবৃত্তির টাকা পেতে হলে এক মিনিটের মধ্যে কোড বলুন। নিকটস্থ মোবাইল এজেন্টের কাছে গেলে সঙ্গ সঙ্গ টাকা দিয়ে দেবে। আমরা সেখানে গেলে স্থানীয় এজেন্টের লোক বলে মোবাইলে কোনো টাকা নেই। এমন প্রতারণা করে আমাদের টাকা হাতিয়ে নেয়া হয়েছে। জেলার শিক্ষক নেতা আবদুল হাকিম জানান, হ্যাকাররা একই কৌশলে তার বিদ্যালয়ের ১০-১২ জন শিক্ষার্থীর অভিভাবকের কাছ থেকে উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে রাজনগর উপজেলা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা মাহমুদ শাহিন জানান, সার্ভার ক্রাইমারদের দৌরাত্ম্যে প্রান্তিক পর্যায়ের অভিভাবকরা নাজেহাল। তারা উপবৃত্তির টাকা উত্তোলন করতে গিয়ে অনেক কষ্ট পোহাতে হয়। আবার কারও বৃত্তির টাকা হ্যাকাররা হাতিয়ে নেয়। বর্তমানে আবার নতুন ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। এতে শিক্ষার্থীর মা-বাবা-দাদা পর্যন্ত তথ্য দিতে হচ্ছে যা অনেক শিক্ষার্থীর কাছে কঠিন কাজ। জেলার কুলাউড়া উপজেলার শিক্ষা কর্মকর্তা ইফতেখার হোসেন ভ‚ঁইয়া জানান, সার্ভার সমস্যার কারণে কুলাউড়া উপজেলার ১৯টি বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোনো উপবৃত্তি পায়নি। সার্ভার ক্রাইমাররা হ্যাক করে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীর টাকা হাতিয়ে নিয়েছে। এ বিষয়ে জানতে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা মো. শামসুর রহমানের মোবাইল ফোনে কল দিলেও তিনি ধরেননি। তবে সংশ্লিষ্ট অফিসের অফিস সহকারী জাকির হোসেন উপবৃত্তির টাকা হাতিয়ে নেয়ার বিষয়টি স্বীকার করে বলেন, আমরা অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করেছি। প্রকল্প পরিচালক ক্ষতিগ্রস্তদের তালিকা পাঠানোর কথা বলেছেন, আমরা তাই করেছি। আমাদের তথ্য অনুযায়ী মৌলভীবাজারে ১ হাজার ৪৬৩ জন অভিভাবকের ‘নগদ’ অ্যাকাউন্টে আসা প্রাথমিক উপবৃত্তির ৬ লাখ ৪৩ হাজার ৮০০ টাকা হাতিয়ে নিয়েছে প্রতারক চক্র।