মানুষের জীবন নিয়ে এই খেলা বন্ধ হোক

0
306

রাজধানীর রূপনগরে বেলুনে গ্যাস ভরার সময় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে সাত শিশুর মর্মান্তিক মৃত্যু হয়েছে। বিকেলের মিষ্টি আলোয় যে রঙিন বেলুন ঘিরে আগ্রহ-উত্তেজনায় উচ্ছল ছিল শিশুর দল, সেই বেলুন ফোলানোর গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরিত হয়ে শেষ হল তাদেরই প্রাণ। অনাকঙ্খিত এই ঘটনায় আমাদের শোক প্রকাশ করবার ভাষা নেই।
গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে প্রায় সময়ই কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। প্রাণহানি হচ্ছে অনেক মানুষের। কিন্ত তারপরও টনক নড়ছে না কর্তৃপক্ষের। ঢাকায় সাত শিশু মৃত্যুর নয় দিন আগে ”ট্টগ্রামেও সিলিন্ডার বিস্ফোরণের এক মর্মান্তিক ঘটনা ঘটেছে। রোগী বহনকারী একটি অ্যাম্বুলেন্সের গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শ্বশুর ও তার দুই পুত্রবধূর মৃত্যু হয়েছে। আকস্মিক এ দুর্ঘটনায় আহত হয়েছেন চালকসহ আরও তিনজন।
বাড়িতে রান্নার কাজে ব্যবহৃত ও সিএনজিচালিত যানবাহনের সিলিন্ডার বিস্ফোরণে মানুষের প্রাণহানির ঘটনা দিনকেদিন বেড়েই চলেছে, কিন্তু এর প্রতিকারের বিষয়টি উপেক্ষিতই থেকে যাচ্ছে। বছরে কত মানুষ এভাবে মারা যায়, কত মানুষ অঙ্গপ্রত্যঙ্গ হারায়- এ বিষয়ে কোনো নির্ভরযোগ্য সূত্রে পরিসংখ্যান পাওয়া যায় না। গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের ভিত্তিতে কিছু অনুমাননির্ভর হিসাব করা হয়, যা থেকে প্রকৃত চিত্র পাওয়া সম্ভব নয়। পরিসংখ্যানের অভাব থেকেও বোঝা যায়, সমস্যাটি সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষগুলোর কাছে গুরুত্ব পাচ্ছে না। গাড়ির গ্যাস সিলিন্ডারের পাশাপাশি বেলুনওয়ালাদের ব্যবহৃত সিলিন্ডারগুলোও মারাত্মক ঝুঁকিপূর্ণ। তারা এগুলো কোথা থেকে সংগ্রহ করে, এগুলো কী ধরণের নিরাপত্তা ব্যবস্থা আছে বা আদৌ রয়েছে কিনা তা জানা যায় না। এসব দেখভাল করারও কেউ নেই।
গাড়ি এবং বাসাবাড়িতে ব্যবহৃত গ্যাস সিলিন্ডারের নির্দিষ্ট আয়ু থাকে। সরকারের বিস্ফোরক অধিদপ্তরের বক্তব্য অনুযায়ী, প্রতিটি গ্যাস সিলিন্ডারের আয়ু ১০ থেকে ১৫ বছর হয়ে থাকে। এই সময় পরে সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকি সৃষ্টি হয়। তাই আয়ু শেষ হলে সেগুলো বাতিল করা উচিত -এটা সাধারণ কা-জ্ঞানের বিষয়। কিন্তু বাংলাদেশে এই কা-জ্ঞানের ঘাটতি খুবই প্রকট। কত বছর ধরে একটি সিলিন্ডার ব্যবহার করা হচ্ছে, ব্যবহারকারীদের কাছে এমনকি সরবরাহকারীর কাছেও সেই হিসেব থাকে না। বছর তিনেক আগে বিস্ফোরক অধিদপ্তর রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের ১১ হাজার গ্যাস সিলিন্ডার পরীক্ষা করেছিল। তারা দেখতে পেয়েছিল, আট হাজার সিলিন্ডারই ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে, তাই সেগুলো তখন বাতিল করা হয়। এ থেকে অনুমান করা যায়, গ্যাস সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঝুঁকির মাত্রা কত ব্যাপক।
মেয়াদোত্তীর্ণ সিলিন্ডারগুলো অত্যন্ত শক্তিশালী বোমার সঙ্গে তুলনীয়। ঢাকায় সিলিন্ডার বিস্ফোরণে শিশুদের দেহ যেভাবে ছিন্নভিন্ন হয়েছে আর চট্টগ্রামে অ্যাম্বুলেন্সটি যেভাবে দুমড়েমুচড়ে ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে, তার ছবি দেখে মনে হয় যে শক্তিশালী বোমা হামলার শিকার হয়েছিল। বেসরকারি যেসব কোম্পানি গ্যাস সিলিন্ডারের ব্যবসা করে, তারা কী মানের সিলিন্ডার সরবরাহ করে, সেগুলোর নিরাপত্তার অবস্থা কী, কত দিন ব্যবহারযোগ্য ইত্যাদি বিষয়ে নজরদারির প্রকট অভাব রয়েছে। এছাড়া গ্যাস সিলিন্ডার পরিবহন ও রক্ষণাবেক্ষণেও নেই কোন নিয়মকানুন। আমাদের চারপাশে যেন অসংখ্য গ্যাস বোমা ছড়িয়েছিটিয়ে রয়েছে, যেকোন সময় ঘটতে পারে দুর্ঘটনা; যা অতঙ্কের বিষয়।
সিলিন্ডারের কারণে আরও কোনও মর্মান্তিক মৃত্যুর ঘটনা ঘটনা ঘটুক আমরা তা চাই না। মেয়দোত্তীর্ণ গ্যাস সিলিন্ডার ও পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা ছাড়া যত্রতত্র এগুলোর ব্যবহার বন্ধ করতে কি কেউ আছে? এ বিষয়ে বিস্ফোরক অধিদপ্তর, জ¦ালানি মন্ত্রণালয় বা সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের পদক্ষেপ কী? আমরা মানুষের জীবন নিয়ে এই খেলার শেষ দেখতে চাই।