মতপ্রকাশের কারণে হত্যা সংবিধানের ওপর আঘাত: ড. কামাল

0
237

খুলনাটাইমস: গণফোরাম সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেছেন, মতপ্রকাশের কারণে পিটিয়ে হত্যা করা সংবিধানের ওপরে আঘাত। সংবিধানে আমাদের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা দেওয়া হয়েছে। যে কেউ তাঁর মতপ্রকাশ করতেই পারেন। গতকাল বৃহস্পতিবার জাতীয় প্রেসক্লাবে মওলানা আকরাম খাঁ হলে বুয়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদ হত্যার বিচারের দাবিতে ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির পরিপ্রেক্ষিতে গণফোরাম আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ড. কামাল এসব কথা বলেন। উচ্চ পর্যায়ের তদন্ত করে আবরার হত্যার সত্যিকারের ঘটনা উদ্ঘাটন করতে হবেÑএমন দাবি করে ড. কামাল হোসেন বলেন, এটা কোনো দলীয় বক্তব্য নয়। ১৬ কোটি মানুষের একজন হিসেবে আমি এই দাবি জানাচ্ছি। বিচার বিভাগীয় তদন্ত হতে পারে। সঙ্গে অন্যরাও থাকতে পারে তদন্তে। ছাত্র রাজনীতি নিয়ে এক প্রশ্নের জবাবে সংবিধানের অন্যতম এই রচয়িতা বলেন, লেজুড়বৃত্তির ছাত্র রাজনীতি আমরা কোনোদিনই চাই না। তবে স্বাধীন ছাত্র রাজনীতি থাকতে পারে। দেশের বর্তমান সার্বিক পরিস্থিতিতে আপনার দলের সংসদ সদস্য পদত্যাগ করবেন কিনা জানতে চাইলে ড. কামাল বলেন, সেটা দলীয় ফোরামে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। একই প্রশ্নের উত্তরে গণফোরাম থেকে নির্বাচিত সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান বলেন, আমি বারবার সংসদে দুর্নীতির বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করেছি, এখনো করছি। এবং আমাদের সংসদ নেত্রীর বারবার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছি যে, আপনি শীর্ষ দুর্নীতিবাজদের বিচার করুন। দেশের শীর্ষ ১২ জন দুর্নীতিবাজকে যদি যুদ্ধাপরাধীদের মতো আইনের আওতায় এনে সর্বোচ্চ সাজা প্রদান করা হয়, তার পরে যদি দেশের দুর্নীতির হার ৫০ শতাংশ কমে না যায়, তাহলে আমাদের দলীয় প্রধানের অনুমতি নিয়ে সংসদ থেকে পদত্যাগ করব, যোগ করেন সংসদ সদস্য। সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি সুব্রত চৌধুরী বলেন, ক্ষমতাসীন দলের ছাত্র সংগঠনের দুর্বৃত্তায়িত নেতাকর্মী এমন বেপরোয়া হয়ে উঠেছে যে তাঁরা আজ ফ্রাঙ্কেনস্টাইনের মতো আচরণ করছে। হলে হলে টর্চার সেল। বুয়েট, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ইডেন মহিলা কলেজ, ঢাকা কলেজের হোস্টেলগুলোতেও রয়েছে টর্চার সেল। টার্গেটে থাকা শিক্ষার্থীকে টর্চার করার আগে দেওয়া হয় বিরোধী কোনো সংগঠনের তকমা। এটা অত্যন্ত ন্যক্কারজনক, রাজনৈতিক ভ-ামি ও কৌঁসুলি প্রতারণা। সার্বিকভাবে বিশ্লেষণ করলে দেশ আজ ধ্বংসের মুখোমুখি। জনগণের মালিকানা জোরপূর্বক ছিনতাই করে ক্ষমতা দখলের কারণে আজ গণতন্ত্রের শেষ চিহ্নটুকুও মুছে যেতে বসেছে। সুশাসন ও জবাবদিহি নেই। শুধু ক্ষমতায় টিকে থাকার লক্ষ্যে রাষ্ট্রের সব অঙ্গ ও সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠানকে ধ্বংস করা হয়েছে। গণতান্ত্রিক নূন্যতম ব্যবস্থার পরিবর্তে কর্তৃত্ববাদী শাসন প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। ক্ষমতা যেখানে কেন্দ্রীভূত দুর্নীতির মহাউৎসব সেখানে দৃশ্যমান। বর্তমান ভিন্নমত দমন, মিথ্যা মামলা, গুম, বিচারবহির্ভূত হত্যা, সভা-সমাবেশ করতে দেওয়ার ক্ষেত্রে বাধানিষেধ, নিবর্তনমূলক আইন ও ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন তৈরির মাধ্যমে সরকার প্রকাশ্যে জনগণের মতপ্রকাশের স্বাধীনতা হরণ করেছে। সুব্রত চৌধুরী বলেন, এই ধরনের রাষ্ট্র ব্যবস্থায় লুটপাট, ধর্ষণ, কালো টাকা, অর্থ পাচারকারীদের দৌরাত্ম্য প্রকট হয়ে উঠবে, এটাই স্বাভাবিক। সরকারি ছত্রছায়ায় গুটিকয়েক চক্র ব্যাংক লুট করছে, টেন্ডারবাজি করছে, আর্থিক ভাগাভাগি নিয়ে খুন-খারাপি চালাচ্ছে। দেশে আজ ক্যাসিনো-সংস্কৃতি চলছে। মানুষের জীবনের কোনো নিরাপত্তা নেই। সর্বত্রই চলছে অনিয়ম, উচ্ছৃঙ্খলতা এবং ব্যাপক দুর্নীতি। এ সময় আরো উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের নির্বাহী সভাপতি অধ্যাপক আবু সাইয়িদ, প্রেসিডিয়াম সদস্য মেজবাহ উদ্দিন, মহসীন রশিদ, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আমিন আহমেদ আফসারী, মোস্তাক আহমেদ, সাংগঠনিক সম্পাদক লতিফুল বারি হামিম প্রমুখ।