ভ্যাট নিবন্ধনহীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে এনবিআর

0
309

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: ভ্যাট নিবন্ধনহীন ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থান নিতে যাচ্ছে জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর)। নিবন্ধনহীন ওসব প্রতিষ্ঠানের অনুকূলে ব্যাংক কোনো ধরনের ঋণপত্র ইস্যু করতে পারবে না। তাতে আটকে যাবে আমদানি-রপ্তানি কার্যক্রম। তাছাড়া ওসব প্রতিষ্ঠান কোনো ধরনের দরপত্র কার্যক্রমেও অংশ নিতে পারবে না। শুল্ক স্টেশনগুলোতেও এক ধরনের ‘কালো তালিকাভুক্ত’ হয়ে যাবে। সার্বিকভাবে নিবন্ধন ছাড়া ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম অব্যাহত রাখা কঠিন হয়ে দাঁড়াবে। এনবিআর সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, ভ্যাট নিবন্ধন হালনাগাদ করার (৯ সংখ্যার স্থলে ১৩ সংখ্যার নিবন্ধন) জন্য সরকার সময়সীমা বাড়ালেও তাতে আশানুরূপ সাড়া মেলেনি। পপ্রম দফায় যেসব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় এসেছিল, হালনাগাদের সময়সীমা শেষে তার মাত্র এক-তৃতীয়াংশ প্রতিষ্ঠানকে তালিকাভুক্ত করতে পেরেছে এনবিআর। প্রাথমিকভাবে নিবন্ধনের সময়সীমা আর না বাড়ানোর সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, সরকার গত জুলাই থেকে নতুন ভ্যাট আইন কার্যকর করেছে। নতুন আইন অনুযায়ী অনলাইনে নিবন্ধনের মাধ্যমে প্রতি মাসে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠানগুলোকে রিটার্ন দাখিল করতে হবে। কিন্তু অনেক ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। নতুন ব্যবস্থায় সক্ষম প্রতিষ্ঠানকে নিবন্ধনের বাধ্যবাধকতায় আনতে সরকার গত বাজেটে কিছু সিদ্ধান্তও নিয়েছে। তা সত্ত্বেও নিবন্ধন সংক্রান্ত কিছু বিধিবিধানের জটিলতায় নতুন ব্যবস্থার নিবন্ধনে প্রত্যাশিত অগ্রগতি হয়নি। আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠানগুলো পুরোদমে নিবন্ধনের আওতায় না আসায় রাজস্ব আদায়েও এর নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে। একই সঙ্গে মাঠ পর্যায়ে এক ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ নিয়ে সম্প্রতি ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআই থেকেও কিছু সমস্যার কথা তুলে ধরা হয়েছে।
এদিকে ব্যবসায়ীরা জানান, নতুন পদ্ধতির নিবন্ধনে ব্যবসায়ীদের অনেক জটিলতায় পড়তে হচ্ছে। আবার এনবিআরের কিছু পরিবর্তনের কারণে অনলাইনে এক অফিসের আবেদন অন্য অফিসে চলে যাচ্ছে। ওই অফিস যথাসময়ে সংশ্লিষ্ট অফিসে আবেদন পাঠাচ্ছে না। এসব কারণে অনেক সময় আবেদন করার পর ক্ষেত্রবিশেষে ১ মাসেরও বেশি সময় ঝুলে থাকছে। অথচ আবেদনের তিন কার্যদিবসের মধ্যে নিবন্ধন দেয়ার কথা। তাছাড়া মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোর কিছু কর্মীর বিরুদ্ধে এই ইস্যুতে ব্যবসায়ীদের হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে। ওসব কর্মী ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান পরিদর্শনের নামে ব্যবসায়ীদের জিম্মি করে অবৈধ অর্থ আদায়ের অভিযোগও এসেছে।
অন্যদিকে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে ভ্যাট নিবন্ধনে হয়রানি না করা কিংবা অহেতুক দেরি না করতে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে ইতিমধ্যে নির্দেশনা দিয়েছে এনবিআর। এনবিআরের নির্দেশনায় বলা হয়, আবেদনের পর তিন কার্যদিবসের মধ্যে প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়িক কার্যক্রম যাচাই করে নিবন্ধন দেওয়া কিংবা না দেয়ার ক্ষেত্রে যথাযথ কারণ জনাতে মাঠ পর্যায়ের অফিসগুলোকে নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। অন্যথায় দায়ীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেয়া হয়েছে।
এ বিষয়ে এনবিআরের ভ্যাট নিবন্ধন কার্যক্রমটি দেখভালকারী ভ্যাট অনলাইন প্রকল্পের পরিচালক সৈয়দ মুশফিকুর রহমান জানান, কিছু প্রতিষ্ঠানের নামে ভুয়া নিবন্ধ হয়েছিল; কিন্তু নতুন ব্যবস্থায় ওসব ভুয়া কিংবা নামসর্বস্ব প্রতিষ্ঠান নিবন্ধন নিতে পারছে না। তবে এখনো সক্ষম অনেক প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনের আওতায় আসেনি। ফলে পরবর্তী সময়ে ব্যবসায়িক কার্যক্রম কিংবা আমদানি-রপ্তানিতে তাদের সমস্যায় পড়তে পারে। তাছাড়া নিবন্ধনের সময় আর বাড়ানো হচ্ছে না।