বাগেরহাট-৩ আসনে জামায়াত প্রার্থীকে নিয়ে বিএনপি নেতা-কর্মীদের মধ্যে চরম ক্ষোভ-অসন্তোষ

0
721
dav

মোংলা প্রতিনিধ : একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বাগেরহাট-০৩ (মোংলা-রামপাল) আসনে বিএনপির মনোনীত প্রার্থী হিসেবে লায়ন ড. শেখ ফরিদুল ইসলামের নাম ঘোষণায় নেতা-কর্মী ও সমর্থকেরা উচ্ছাস প্রকাশ করলেও জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র দাখিলকে কেন্দ্র করে উল্টো ক্ষোভ ও অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়েছে এলাকা জুড়ে। বিএনপির তৃনমুলের নেতা-কর্মীরা বলছেন, আওয়ামী লীগের সাথে বারবার হেরে যাওয়া জামায়াতের প্রার্থী নিয়ে এবারও নির্বাচনে বৈতরনী পার হওয়া সম্ভব হবেনা। ঐক্যফ্রন্টসহ বিএনপির ত্যাগী নেতা-কর্মীরা মনে করছেন এবার চ্যালেঞ্জিং নির্বাচনে বিএনপির ক্লিন ইমেজের প্রার্থী ছাড়া এ আসনে জয়লাভ করা সম্ভব নয়। এ আসনে কেন্দ্রীয় নেতারা বিএনপির প্রার্থী হিসেবে ড. ফরিদকেই চুড়ান্ত মনোনয়ন দিয়ে আসন রক্ষায় ভূমিকা রাখবেন এমনই আশা করছেন স্থানীয় নেতা-কর্মীরা।

মোংলা-রামপাল এই দুই উপজেলা নিয়ে বাগেরহাট-০৩ আসন। বিভিন্ন কারণে এ আসনটি প্রত্যেকটি দলের কাছে খুবই গুরুত্বপূর্ণ। ১৯৯১ সাল থেকে এ পর্যন্ত অনুষ্ঠিত প্রতিদ্বন্ধীতাপূর্ণ সকল নির্বাচনেই আওয়ামী লীগের প্রার্থী নির্বাচিত হয়েছেন এ আসনে। বর্তমানে এ আসনে খুলনা সিটি করপোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেকের সহধর্মিনী হাবিবুন নাহার আওয়ামী লীগের প্রার্থী হিসেবে নির্বাচন করছেন। ১৯৯১ সাল থেকে কয়েকটি নির্বাচনে জামায়াতের প্রার্থী বরাবরই হেরেছেন আওয়ামী প্রার্থীর কাছে। বিএনপি সমর্থিত জোটের এ দুঃসময়ে জামায়াতের প্রার্থী দলের জন্য প্রয়োজনীয় ভূমিকা রাখতে পারবে কিনা এ শঙ্কা প্রকাশ করেছেন দলীয় নেতা-কর্মীরা। দীর্ঘদিন ধরে হারানো আসনটি উদ্ধারে বিএনপির প্রার্থীকে নিয়ে নির্বাচনে প্রতিদ্বন্ধীতা করতে চায় নেতা-কর্মীরা। তবে এ ব্যাপারে জামায়াত নেতা-কর্মীদের সাথে কথা বলতে চাইলে, তারা কথা বলতে রাজি হননি। তারা বলেন, দল যাকেই মনোনয়ন দিবে তাকেই ভোট দিবো।

মনোনয়ন দাখিলের শেষ দিনে বাগেরহাট-০৩ আসনে বিএনপি প্রার্থী জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লায় ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম ও জামায়াতের এ্যাডভোকেট মাওলানা আব্দুল ওয়াদুদ মনোনয়ন পত্র দাখিল করেন। এরপরে দলীয় নেতা-কর্মীদের মাঝে ক্ষোভ অসন্তোষ ছড়িয়ে পড়ে। রামপাল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি মোহসীন ইজারাদার বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এ আসন থেকে জামায়াতের প্রার্থী নির্বাচন করার কারণে আমরা এ আসনটি হারিয়েছি। এ বছর ধানের শীষ প্রতীক নিয়ে ড. ফরিদের মনোনয়নপত্র জমা দেয়ায় আমরা খুবই খুশি হয়েছিলাম। কিন্তু জামায়াতের প্রার্থী মনোনয়ন দাখিল করাতে শুধু আমি নয় আমাদের সকল নেতা-কির্মীদের মন ভেঙ্গে গেছে। আমরা চাই ধানের শীষের প্রার্থী হিসেবে একমাত্র ড. ফরিদুল ইসলামই নির্বাচনে অংশ গ্রহণ করুক। তাহলেই এ আসনে জয়লাভ সুনিশ্চিত হবে। মোংলা পৌর বিএনপির সহ-সভাপতি মোঃ খলিলুর রহমান বলেন, জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদ ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে বিএনপির ভরা ডুবি হবে। কারণ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের অনেক ভোটার রয়েছে যারা কখনও কোন দিন জামায়াতকে ভোট দিবে না। কিন্তু জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. ফরিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন ধরে দলের নেতা-কর্মী ও সাধারণ মানুষের যে সেবা করেছে তাতে তিনি ধানের শীষ প্রতীক নির্বাচন করলে বিএনপির বিপুল ভোটে বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

মোংলার বুড়িরডাঙ্গা ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি অধ্যাপক নিতিশ বিশ্বাস বলেন, মোংলা-রামপালে বিপুল পরিমান সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের লোকজন বসবাস করছেন। তারা কখনও জামায়াত নেতাকে ভোট দিবেন না। কিন্তু এ আসনে বিএনপি নেতা ড. ফরিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে তিনি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবেন। বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতাদের কাছে আমার ও স্থানীয় নেতা-কর্মীদের দাবী যাতে প্রার্থী চুড়ান্ত হওয়ার আগেই জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদের মনোনয়নপত্র প্রত্যাহার করা হয়।

রামপাল উপজেলা বিএনপির সহ-সভাপতি শহিদুর রহমান বলেন, দীর্ঘদিন ধরে বিএনপি জোটবদ্ধভাবে নির্বাচন করার কারণে এ আসনে জামায়াত নেতারা বিএনপির পক্ষে প্রতিদ্বন্ধীতা করেছেন। কিন্তু সাধারণ ভোটাররা বিএনপিকে ভালবাসলেও জামায়াতের প্রার্থীকে ভোট দেয়নি। এবার সাবেক ছাত্র নেতা জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি ড. ফরিদুল ইসলাম ধানের শীষ প্রতীকে নির্বাচন করলে তিনি বিজয়ী হবেন। কিন্তু দল থেকে এবারও যদি জামায়াত নেতা আব্দুল ওয়াদুদকে প্রার্থী করা হয়, সে সিদ্ধান্ত হবে দলের জন্য আত্মঘাতী।

জেলা বিএনপির সহ-সভাপতি লায় ড. শেখ ফরিদুল ইসলাম বলেন, আমি ছাত্র জীবন থেকেই রাজনীতির সাথে জড়িত। সেই থেকেই এলাকার মানুষের সুখে দুখে পাশে থেকেছি। এলাকার মানুষ আমাকে ভালবাসে। তারা চায় আমি ধানের শীষ প্রতীকে বাগেরহাট-০৩ আসন থেকে নির্বাচন করি। দল আমাকে মনোনয়ন দিয়েছে, আশাকরি দলীয় নেতা-কর্মী ও স্থানীয়দের চাহিদা অনুযায়ী দল আমাকে এ আসনে নির্বাচন করার সুযোগ দিবেন। ইনশাল্লাহ জয় আমাদেরই হবে।