বাগেরহাটে চিংড়ি ঘেরে মড়কের প্রধান কারণ অক্সিজেন সল্পতা

0
414

বাগেরহাট প্রতিনিধি:
আগষ্ট মাসের শেষ দশকে বাগেরহাটের তিন উপজেলার মৎস্য ঘেরগুলোতে হঠাৎ করে মড়ক দেখা দেয়। আর মাত্র দুই-তিন দিন স্থায়ী এই মড়কে চিংড়ি চাষীদের ক্ষতি হয় প্রায় ৩০ কোটি টাকা। যদিও সরকারী ভাবে চাষীদের ক্ষতির পরিমান বলা হচ্ছে ১৭ কোটি ৩৫ লাখ টাকা। চিংড়িতে এ বিপর্যয়ের পর এই পর্যন্ত মৎস্য ও প্রাণী সম্পদ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী মোঃ আশরাফ আলী খান খসরু ও সচিব মোঃ রইছুল আলম মন্ডলসহ মৎস্য অধিদপ্তরের উর্ধতন কর্মকর্তারা ক্ষতিগ্রস্থ্য মৎস্য ঘের পরিদর্শনসহ সংশ্লিষ্টদের সাথে মতবিনিময় করেন।
গত ২১ সেপ্টেম্বর ২৩ সেপ্টেম্বর এই মড়কের প্রাদুর্ভাব সবচেয়ে বেশি ছিল। পরে এর মাত্রা কমতে শুরু করে। এসময় বাগেরহাট জেলা মৎস্য অধিদপ্তর ক্ষতিগ্রস্থ ওই তিন উপজেলার বিভিন্ন মৎস্য ঘের হতে ৫০টি নমুনা সংগ্রহ করে পরিক্ষার জন্য বাগেরহাট চিংড়ি গবেষনা কেন্দ্রে পাঠায়। সেখানে পরিক্ষা নিরিক্ষার পর প্রতিবেদন দেয়া হয়েছে। প্রতিবেদনে চিংড়ি ঘেরগুলোর মড়কের জন্য অক্সিজেন সল্পতাকে প্রধান কারণ উল্লেখ করা হয়েছে। আর এই অক্সিজেন সল্পতা বৈরি আবহাওয়ার জন্য সৃষ্টি হয়েছিল বলে জানান বাগেরহাট চিংড়ি গবেষনা কেন্দ্রের উর্ধতন কর্মকর্তা মোঃ রাকিবুল ইসলাম।
যদিও এর আগে বাগেরহাট জেলা মৎস্য অধিদপ্তর প্রাথমিক ভাবে তিনটি কারণ উল্লেখ করে উর্ধতন কতৃপক্ষকে অবহিত করেছিল। সেই কারণগুলো ছিল- সল্প জায়গায় অধিক ঘনত্বে মাছ ছাড়া (শতাংশ প্রতি যে পরিমাণ মাছ চাষ করা যায়, তার থেকে বেশি পরিমাণ মাছ ছাড়া), পানির গভীরতা ঠিক না রাখা ও অতিরিক্ত খাবার দেওয়া এবং বৈরি আবহাওয়া ও হঠাৎ বৃষ্টি।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য অধিদপ্তর সুত্রে জানাগেছে, জেলায় ৭৩ হাজার ২৭০টি চিংড়ি ঘের রয়েছে। যার আয়তন ৫২ হাজার ৯শ হেক্টর। এর মধ্যে ৪৯ হাজার ৩০৯টি গলদা চিংড়ির ঘের রয়েছে। এরমধ্যে প্রথম ধাপেই ক্ষতিগ্রস্থ্য হয় ৩ হাজার ১০৩টি ঘের। আর আয়তন ৯৪০ হেক্টর।
প্রথম ধাপের তীব্র মড়কে বাগেরহাট জেলার ফকিরহাট, মোল্লাহাট, চিতলমারী ছাড়াও বাগেরহাট সদর উপজেলার কিছু অংশে মড়ক দেখা দেয়। সেই সাথে পার্শ¦বর্তি খুলনা জেলার রূপসা উপজেলার ঘেরগুলোতেও এই মড়ক দেখা যায়।
এসব এলাকার চাষীদের ঘেরে বিনিয়োগ করা মূলধন হারিয়ে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়েন। মৎস্য চাষীরা সাধারনত ব্যাংক ও এনজিও এমনকি মহাজনদের কাছ থেকে চড়া সুদে ঋণ নিয়ে মাছের ঘের করে থাকেন। যা তারা পরিশোধ করেন ঘেরের মাছ বিক্রি করে। বিশেষ করে কম মূলধন তথা ক্ষুদ্র চাষীরা পড়েছেন বেশি বিপাকে।
ফকিরহাট উপজেলার নলধা এলাকার চিংড়ি চাষী আছাদুজ্জামান বলেন, গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ বৃষ্টিতে চিংড়ি ঘেরের পানিতে অক্সিজেনের মাত্রা কমে যাওয়ায় তার ঘেরের গলদা-বাগদা চিংড়ি মারা গেছে। এই মড়ক তাদের সহায় সম্বল কেড়ে নিয়েছে। বিভিন্ন এনজিও ও ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে মাছ চাষ করে জীবন-জীবিকা নির্বাহ করতেন তারা।
চিতলমারী উপজেলার বারাশিয়া বিলের ঘের ব্যবসায়ী মেসার্স জাহিদ ট্রের্ডাসের স্বত্তাধিকারী মোঃ জাহিদুল ইসলাম জানান, ‘ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে ৮৫ বিঘা জমিতে মাছের চাষ করেছিলাম। বাগদা, গলদাসহ বিভিন্ন প্রজাতির মাছে ঘের ভরা ছিল। কিন্তু গত ২১ সেপ্টেম্বর রাতে হঠাৎ বৃষ্টির পর আমার ঘেরে মড়ক দেখা দেয়। কিছু বুঝে ওঠার আগেই মারা যাওয়া শুরু করে চিংড়ি। এতে আমার ৪০ থেকে ৪৫ লাখ টাকার ক্ষতি হয়েছে। এখন আমি সর্বশান্ত হয়ে পড়েছি। আমাদের সরকারী ভাবে সাহায্য ও ব্যাংক থেকে সহজ শর্তে পুনঃরায় ঋণ দেয়ার জন্য সরকারের কাছে দাবী জানাই।’
একই অবস্থা হয়েছে আক্রান্ত এলাকার অন্য ঘের ব্যবসায়ীদেরও। তারাও সরকারের নিকট ক্ষতি নিরুপন করে আর্থিক সহায়তা কামনা করেছেন।
বাগেরহাট জেলা মৎস্য কর্মকর্তা ড.খালেদ কনক বলেন, জেলার তিন উপজেলার এতো পরিমাণ চিংড়ি মারা যাওয়া চাষিদের জন্য বিপর্যয়ের। চাষিদের ক্ষতির পরিমান নিরুপন করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে অবহিত করা হয়েছে। সনাতন পদ্ধতিতে মাছ চাষের ফলে অনেক চাষিরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।