পানিতে ডুবে যাওয়া শিশুর মৃত্যু রোধের পদক্ষেপ নেওয়া অত্যাবশ্যক

0
337

খুলনাটাইমস ডেস্ক: জনসংখ্যার অনুপাতে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি শিশু পানিতে ডুবে মারা যায় বাংলাদেশে। এমনকি রোগে ভুগে মৃত্যুর চেয়ে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হারই বেশি বলে মনে করেন গবেষকরা। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস, জন হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, দি সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ বা সিআইপিআরবি এবং আইসিডিডিআরবি’র এক গবেষণায় জানা গেছে, প্রতি বছর ১৪ হাজারের মতো শিশু পানিতে ডুবে মারা যায়। অর্থাৎ গড়ে প্রতি দিন ৪০ জন শিশু প্রাণ হারাচ্ছে পানিতে ডুবে। যদিও এই ফলাফল আরও তিন বছর আগে চালানো একটি জরিপ থেকে পাওয়া। পরবর্তী বছরগুলোতে পানিতে ডুবে মৃত্যুর হার আরও বেড়েছে।
পানিতে ডুবে এত মৃত্যু পরও সড়ক দুর্ঘটনার মতো একটি চোখে পড়ে না। সে কারণে আলোচনাতেও আসে না। পানিতে ডুবে মৃত্যু কারণ গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো চারদিকে বিভিন্ন ধরণের প্রচুর জলাশয় -পুকুর, নদী, ডোবা, খাল, বিল থাকা। ৮০ শতাংশ দুর্ঘটনা পুকুরেই হয় যেটি বাড়ির সীমানা বা ঘরের ২০ মিটারের মধ্যে। দেখভাল করার অভাবে ৬০শতাংশ ডুবে মৃত্যুর ঘটনা সকাল নয়টা থেকে বেলা একটার মধ্যে। কারণ এ সময় মায়েরা ব্যস্ত থাকেন। বাবারা কাজে ঘরের বাইরে এবং বড় ভাই-বোন থাকলে তারা হয়তো স্কুলে থাকেন। দেখা গেছে দরিদ্র পরিবারে শিশু মৃত্যু বেশি এছাড়া বড় বাচ্চাদের ক্ষেত্রে সাঁতার না জানা এবং তাৎক্ষনিক প্রাথমিক চিকিৎসা জ্ঞান না থাকা। ফলে পানিতে ডুবলে সেখান থেকে উঠিয়ে কী করা হবে সেটাই অনেকে জানে না – বিশেষ করে হার্ট ও শ্বাস-প্রশ্বাস চালুর প্রাথমিক চেষ্টা থাকে না। নানা কুসংস্কার- যেমন শিশুকে মাথায় তুলে চারদিকে ঘোরানো। অনেক ক্ষেত্রে ডুবে যাওয়া শিশুকে কী করা হবে বা ফার্স্ট রেসপন্স সম্পর্কে হাসপাতালে প্রশিক্ষিত ব্যক্তির অভাব থাকে।
পানিতে ডুবে প্রতিবছর এত সংখ্যক প্রাণহানির ঘটনায় উদ্বেগের যথেষ্ট কারণ রয়েছে। পানিতে ডুবে শিশুর মৃত্যু রোধে পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। এরজন্য শিশুদের সঠিক তত্ত্বাবধান, সাঁতার শেখানো এবং বুদ্ধি-ভিত্তিক বিকাশ ত্বরান্বিত করার ব্যবস্থা করতে হবে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি হলো সচেতনতা তৈরি করতে হবে। এর জন্য সরকারের পক্ষ থেকে কার্যকর কোনও উদ্যোগ দৃষ্টিগোচর হয় না। সরকারের পাশাপাশি বেসকারি বিভিন্ন সংস্থা, সামাজিক প্রতিষ্ঠানগুলোকে এগিয়ে আসতে হবে। কেউ পানিতে ডুবলে তাকে উদ্ধারের পরপর তার শ্বাস ও হৃদপি- চালু করার যেসব প্রাথমিক উদ্যোগ আছে সেগুলো মানুষকে শেখাতে হবে। কেননা হাসপাতালে আনতে আনতে অনেকেই বাঁচে না। তাই যারা উদ্ধার করেন তাদের যদি প্রাথমিক ওই জ্ঞান থাকে তাহলে অনেক শিশুই বেঁচে যাবে। আমরা পানিতে ডুবে অস্বাভাবিক হারে শিশু মৃত্যু রোধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে সংশ্লিষ্টদের আহ্বান জানাই।