নানা অজুহাতে বছরের বেশিরভাগ সময়ই রেলের সরকারি কংক্রিট স্লিপার প্লান্টটি বন্ধ রাখা হচ্ছে

0
207

টাইমস ডেস্ক:
বাংলাদেশ রেলওয়ের কংক্রিট স্লিপার প্লান্টটি বছরের বেশিরভাগ সময়ই বন্ধ থাকে। সুনামগঞ্জের ছাতকে অবস্থিত ওই প্লান্টটি বন্ধের ক্ষেত্রে যান্ত্রিক ত্রুটি, কাঁচামাল সঙ্কটসহ নানা অজুহাত দেখা হচ্ছে। ১৯ মাস বন্ধ থাকার পর গত ৫ অক্টোবর প্লান্টটি চালু হয়েছিল। কিন্তু ১০ দিনের মাথায় কাঁচামাল সংকটের দোহাই দিয়ে প্লান্টটির উৎপাদন আবারো বন্ধ হয়ে যায়। তারপর চলতি মাসের শুরুতে কারখানাটিতে আবার উৎপাদন শুরু কয়েকদিনের মধ্যেই যান্ত্রিক ত্রুটিটর কারণে উৎপাদন বন্ধ ছিল। এভাবে গত ৫ বছর মিলিয়ে ওই প্লান্টটি ১২ মাসও চালু রাখা যায়নি। একসময় এ প্রতিষ্ঠানটিই ছিল দেশের একমাত্র সরকারি স্লিপার প্লান্ট। কিন্তু গত এক দশকে দেশে বেসরকারি উদ্যোগে আরো কয়েকটি স্লিপার কারখানা গড়ে ওঠেছে। আর রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তারাই ওসব প্রতিষ্ঠানের উদ্যোক্তা। অভিযোগ রয়েছে, বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোকে সুযোগ করে দিতেই নানা অজুহাতে রেলওয়ের মালিকানাধীন স্লিপার প্লান্টটি বারবার বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তবে সংশ্লিষ্টরা এমন অভিযোগ মানতে নারাজ। বাংলাদেশ রেলওয়ের কংক্রিট স্লিপার প্লান্ট সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, বিগত ১৯৮৮ সালে রেলওয়ের অধীনে সুনামগঞ্জের ছাতকে দেশের একমাত্র সরকারি কংক্রিট স্লিপার প্লান্টটি স্থাপিত হয়। ওই বছরের ২৭ অক্টোবর থেকে প্লান্টটিতে উৎপাদন শুরু হয়। প্রথমে দৈনিক ২৬৪টি স্লিপার উৎপাদন হতো। বর্তমানে এখানে বছরে ৫০ হাজার স্লিপার উৎপাদনের সক্ষমতা রয়েছে। কংক্রিট স্লিপার তৈরির অন্যতম উপাদান হচ্ছে সিমেন্ট, পাথর ও বালু। ছাতকে দেশের একমাত্র রাষ্ট্রীয় মালিকানাধীন সিমেন্ট কারখানাও অবস্থিত। তাছাড়া সেখানে উন্নতমানের পাথর ও বালু পাওয়া যায়। ওসব কারণে সরকার কংক্রিট স্লিপার প্লান্টটি ছাতকে প্রতিষ্ঠা করে। তবে স্লিপারের প্রধান কাঁচামাল হাইটেনশন স্টিল রড, ইনসার্ট স্টিল পাত ভারত থেকে আমদানি করা হয়।
সূত্র জানায়, ছাতকে তৈরি স্লিপার রেলওয়ের লাইনে নিয়মিত সংস্কারকাজে বেশি ব্যবহৃত হয়। তাছাড়া রেলওয়ের বড় প্রকল্পের মাধ্যমেও যেসব কাজ হয়, সে কাজের জন্যও স্লিপার দরকার হয়। চালুর পর ওই কারখানায় টানা উৎপাদন অব্যাহত থাকলেও ২০০০ সালের পর থেকেই নানা গোলযোগ শুরু হয়। বিভিন্ন সমস্যায় প্লান্টটি বারবার বন্ধ হতে থাকে। বিগত ২০১২ সালে একটানা প্রায় এক বছর প্লান্টটি বন্ধ থাকে। ২০১৪ সালের মার্চ থেকে আবার একটানা বন্ধ থাকে প্রায় এক বছর। ওই সময় থেকে বিভিন্ন অজুহাতে অন্তত ১০ বার প্লান্টটি বন্ধ হয় আর প্রতিবারই দীর্ঘসময় বন্ধ থাকে। যদিও গত ফেব্রুয়ারিতে রেলমন্ত্রী ছাতকে ওই প্লান্ট পরিদর্শনের সময় দ্রুত চালুর ঘোষণা দিয়েছিলেন।
সূত্র আরো জানায়, দেশে বেসরকারিভাবে গড়ে ওঠা স্লিপার কারখানাগুলোকে সুবিধা করে দিতেই নানা অজুহাত দেখিয়ে বারবার সরকারি প্লান্টটি বন্ধ রাখা হচ্ছে। ব্যক্তিমালিকানাধীন স্লিপার প্রতিষ্ঠানগুলোর সাথে রেলওয়ের সাবেক কর্মকর্তারা যুক্ত থাকায় রেলের কাজে ছাতকের ওই প্লান্ট থেকে স্লিপার নেয়া কমিয়ে দেয়া হয়েছে। বর্তমানে সরকারি ওই স্লিপার কারখানার ব্যাপারে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষেরও তেমন কোনো আগ্রহও নেই। ফলে তুচ্ছ কারণেও উৎপাদন বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে। তাছাড়া উৎপাদিত স্লিপারের মান নিয়েও তেমন নজরদারি করা হচ্ছে না। ফলে স্লিপার কারখানাটির কারণে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে আর্থিক ক্ষতির মুখে পড়তে হচ্ছে।
এদিকে সরকারি কংক্রিট স্লিপার প্লান্টের দায়িত্বে থাকা রেলওয়ের সহকারী নির্বাহী প্রকৌশলী কাজী হাবিব উল্লাহ সব অভিযোগ অস্বীকার করে জানান, প্লান্টটি অনেক পুরনো হয়ে গেছে। তাই মাঝে মাঝেই এখানে যান্ত্রিক ত্রুটি দেখা দেয়। ওভারহোলিং করতে হয়। তাছাড়া রেলওয়ের নিজস্ব জনবল নেই। ফলে ঠিকাদারের মাধ্যমে জনবল দিয়ে কাজ চালাতে হয়। অনেক সময় শ্রমিক পাওয়া যায় না। আবার কাঁচামাল সঙ্কটও রয়েছে। ওসব কারণে বিভিন্ন সময় প্লান্টটির উৎপাদন বন্ধ হয়ে পড়ে। তবে কারখানাটিতে যাতে নিরবচ্ছিন্নভাবে উৎপাদন চালু রাখা যায় সে ব্যাপারে রেলওয়ের পক্ষ থেকে উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। সর্বশেষ করোনার কারণে এ বছর এ কারখানায় উৎপাদন শুরু করা যায়নি। আর দীর্ঘদিন বন্ধ থাকার পর চালু হওয়ায় যান্ত্রিক কিছু সমস্যা দেখা দিয়েছে।