নতুন বছরেও মাদক নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী

0
181

খুলনা টাইমস:
মাদক নির্মূূলে দেশজুড়ে সম্মিলিত অভিযান চালানো হবে। নতুন বছরে মাদক নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে মাঠে নামছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। শুরু হ”েছ সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান। ইতিমধ্যেই বিভাগ থেকে শুরু করে থানা পর্যায়ের মাদক ব্যবসায়ী ও মাদক স্পটের তালিকা করা হয়েছে। এমনকি মাদক মামলা দ্রুত নিষ্পত্তি করতে পৃথক আদালত গঠনের বিষয়েও আলোচনা চলছে। তাছাড়া সরকারি দলের কোন নেতাকর্মী মাদক সেবন বা ব্যবসা বা মাদক ব্যবসার নেপথ্য থাকলে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যব¯’া গ্রহণ এবং দল থেকে আজীবনের জন্য বহিষ্কারের নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। সেক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে রাজনৈতিকভাবে কোন প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে সরকারের উ”চপর্যায়ে সরাসরি যোগাযোগ করার পরামর্শ দেয়া হয়েছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, প্রধানমন্ত্রী মাদক নির্মূলে কড়া নির্দেশনা জারি করেছেন। নতুন বছরে জঙ্গির মতো মাদক নির্মূলের অঙ্গীকার নিয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে মাঠে নামার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বলা হয়েছে- মাদকবিরোধী অভিযানে কোন ধরনের রাজনৈতিক প্রভাব সহ্য না করা হবে না। সরকারি দলের কোন নেতাকর্মী মাদক সেবন বা ব্যবসা বা ব্যবসার অন্তরালে থাকলে তাদের আজীবনের জন্য দল থেকে বহিষ্কার করার নির্দেশনাও দেয়া হয়েছে। মাদকের সঙ্গে জড়িত কোন নেতাকর্মীর বিষয়ে কেউ তদবির করলে তার বিরুদ্ধেও দলীয় ব্যব¯’া গ্রহণের অলিখিত নির্দেশ জারি করা হয়েছে। এমনকি মাদক মামলার তদন্ত ও অভিযানের ক্ষেত্রেও একই নির্দেশনা দেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ইতিমধ্যেই প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানিয়েছেন। পুলিশ মহাপরিদর্শক, র‌্যাব মহাপরিচালক, ডিএমপি কমিশনার ও মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের মহাপরিচালকও নতুন বছরের শুরু থেকেই মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান চালানোর নির্দেশনা দিয়েছেন। ঢাকার শতাধিক বস্তি আর উর্দুভাষী অবাঙালীদের বসবাসের জেনেভা ক্যাম্পগুলো মাদকের স্বীকৃত আস্তানা হিসেবে চিহ্নিত হয়েছে। ওসব বস্তির নিয়ন্ত্রকদের নজরদারির পাশাপাশি বস্তিতে আচমকা অভিযান চালানোর সিদ্ধান্ত হয়েছে। আর জেনেভা ক্যাম্পগুলোতে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হবে। গত ২৩ ডিসেম্বর থেকে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে মোহাম্মদপুরের জেনেভা ক্যাম্প থেকে ১২ জন স্বীকৃত বড় ধরনের মাদক ব্যবসায়ীকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। তাদের কাছ থেকে প্রায় এক লাখ টাকার ইয়াবা ও হেরোইন পাওয়া যায়। ধারাবাহিক অভিযানের কারণে চিহ্নিত পুরনো মাদক ব্যবসায়ীদের অনেকেই স্বাভাবিক জীবনে ফিরেছে। অনেকে ক্যাম্প ছেড়ে গেছে। এমন সুযোগে নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ব্যবসার আড়ালে ক্যাম্পে মাদকের কারবার শুরু করেছে। নতুন করে মাদক ব্যবসায় জড়িত হিসেবে বেশ কিছু নারী-পুরুষের নাম এসেছে।
সূত্র আরো জানায়, মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের নিরোধ ও গবেষণা শাখার তথ্য মোতাবেক দেশের ৬৮টি কারাগারে প্রায় ৮৬ হাজারের বেশি বন্দি রয়েছে। তাদের মধ্যে শতকরা ৪৪ ভাগেরও বেশি বন্দি মাদক মামলায় গ্রেফতার হয়েছে। মাদক নিয়ন্ত্রণে দেশের ৮৭ হাজার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাদকবিরোধী কমিটি আছে। পর্যায়ক্রমে সারাদেশের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে কমিটি গঠন করা হবে। তাছাড়া মাদক দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ৫০ শয্যা মাদক নিরাময় কেন্দ্রটিকে ২৫০ শয্যায় উন্নিত করতে হ”েছ।
এদিকে পুলিশ বিভাগ সংশ্লিষ্টরা বলছেন, অব্যাহতভাবে চলা মাদকবিরোধী অভিযানে প্রতিদিনই নতুন নতুন মাদক ব্যবসায়ী গ্রেফতার হ”েছ। জেনেভা ক্যাম্প ঘিঞ্জি হওয়ায় সেখানে সুনির্দিষ্ট তথ্যের ভিত্তিতে অভিযান চালানো হয়। মাদকবিরোধী ধারাবাহিক অভিযানের কারণে পুরনো চিহ্নিত মাদক ব্যবসায়ীরা মাদক ব্যবসা ছেড়ে দিয়েছে। অধিকাংশই ক্যাম্প ছেড়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে গেছে। এমন সুযোগে নতুন নতুন ব্যবসায়ীরা ক্যাম্পে মাদক ব্যবসা করেছে। তাদের অনেকেই অচেনা। ডিএমপি কমিশনারের কড়া নির্দেশনা মোতাবেক ঢাকায় নিয়মিত মাদকবিরোধী অভিযান চলছে। প্রতিদিন গড়ে মাদকের সঙ্গে জড়িত অন্তত ৫০ জন গ্রেফতার হ”েছ।
অন্যদিকে একই প্রসঙ্গে র‌্যাবের লিগ্যাল এ্যান্ড উইংয়ের পরিচালক লে. কর্নেল আশিক বিল্লাহ জানান, ‘চলো যাই যুদ্ধে, মাদকের বিরুদ্ধে’ স্লোগানকে সামনে রেখে র‌্যাব নতুন করে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করছে। এবারের অভিযানের তীব্রতা আগের যে কোন অপারেশনের চেয়ে বেশি হবে।
এ প্রসঙ্গে পুলিশ সদর দফতরের মিডিয়া বিভাগের সহকারী পুলিশ মহাপরিদর্শক সোহেল রানা জানান, সারাদেশে মাদকবিরোধী সাঁড়াশি অভিযান অব্যাহত রাখা হবে। মাদক নির্মূলে পুলিশের তরফ থেকে সমাজের সব স্তরের মানুষকে সম্পৃক্ত করার চেষ্টা চলছে।