দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে এনবিআর

0
537

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে পদক্ষেপ নিতে যাচ্ছে। সেজন্য অতিসম্প্রতি শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের কর্মকর্তাদের নিয়ে ৭ সদস্যের টাস্কফোর্স কমিটি গঠন করা হয়েছে। ওই কমিটির সদস্যরা আমদানিকারক ব্যবসায়ীদের মধ্যে কারা সিন্ডিকেট করছে, কারসাজি করছে তা খতিয়ে দেখে তালিকা করবেন। আর ব্যবস্থা নেয়ার মতো উপযুক্ত তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে ওই তালিকা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়, অর্থ মন্ত্রণালয়, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়, ভোক্তা অধিকারসহ সংশ্লিষ্ট সরকারি প্রতিষ্ঠানে সরবরাহ করা হবে। একই সঙ্গে চিহ্নিতদের বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেয়ারও সুপারিশ করা হবে। জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, আমদানিকারক ব্যবসায়ীরা ব্যাংকের মাধ্যমে এলসি খুলে বিদেশ থেকে পণ্য আমদানি করে থাকে। ওসব পণ্য বিভিন্ন বন্দর দিয়ে দেশে আনা হয়। কী পরিমাণ পণ্য, কত দামে আমদানি করা হচ্ছে সব তথ্য ব্যাংক, এনবিআরে জমা দিতে হয়। আমদানিকারকের কাছে ওসব তথ্যের পাশাপাশি দেশের মধ্যে কোথায়, কী দামে, কী পরিমাণে পণ্য সরবরাহ করা হচ্ছে তাও থাকে। বাজারে কোন কোন পণ্য অতিরিক্ত দামে বিক্রি করে অস্থিরতা সৃষ্টি করা হচ্ছে শুল্ক গোয়েন্দাদের নিয়ে গঠিত টাস্কফোর্স তা পর্যবেক্ষণ করবে। সেজন্য আমদানিকারক কোন তারিখে, কত দামে এবং কী পরিমাণে পণ্য আমদানি করেছেন তার তথ্য-প্রমাণ সংগ্রহ করা হবে। সে সময় আন্তর্জাতিক বাজারে দর কত ছিল এবং সে দরে বা এর চেয়ে কম বা বেশি দরে আমদানি করা হয়েছে কি না, তাও খতিয়ে দেখা হবে। কত লাভ রেখে পণ্য স্থানীয় বাজারে বিক্রি করা হচ্ছে তাও তালিকায় থাকবে। টাস্কফোর্স কমিটি আমদানিকারকের দেওয়া তথ্যের সত্যতা যাচাই করবে। আমদানীকৃত পণ্য বিক্রিতে ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেট করে বিক্রি করছেন কিনা, তাও খতিয়ে দেখা হবে। তদন্তের প্রয়োজনে টাস্কফোর্স কমিটির সদস্যরা ব্যবসায়ীর প্রধান কার্যালয় যে এলাকায়, সেখানকার রাজস্ব দপ্তরের কর্মকর্তাদের সহযোগিতা নেবেন।
সূত্র জানায়, সরকার চাল, ডাল, সয়াবিন তেল, পেঁয়াজ, রসুন, আদাসহ বিভিন্ন নিত্যপণ্যের বাজার স্থিতিশীল রাখতে এবং কম দামে এসব পণ্য সাধারণ মানুষের কাছে পৌঁছে দিতে রাজস্ব ছাড় দিয়েছে। একই সঙ্গে জনসম্পৃক্ত অনেক আমদানি পণ্যে ভ্যাট প্রত্যাহার করা হয়েছে। অভিযোগ আছে, এক শ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী বছরের যে সময়ে আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যের দাম অন্য সময়ের তুলনায় কম থাকে সে সময়ে আমদানি করে তা মজুদ করেন। এরপর তারা সিন্ডিকেট করে বাজারে পণ্যের কৃত্রিম সংকট তৈরি করে সাধারণ মানুষকে বেশি দামে পণ্য কিনতে বাধ্য করেন।
সূত্র আরো জানায়, স¤প্রতি দেশে পেঁয়াজের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। অভিযোগ পাওয়া যায়, অনেক ব্যবসায়ী আগেই কম দামে পেঁয়াজ এনে এখন বেশি দামে বিক্রি করছে। কিছুদিন আগে কিছু ব্যবসায়ী ডেঙ্গু পরীক্ষার কিটে কৃত্রিম সংকট তৈরি করে বাজারে অস্থিরতা তৈরি করে বলেও অভিযোগ উঠেছে। প্রায় প্রতিবছরই কিছু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট করে রমজান মাস সামনে রেখে চিনির দাম বাড়িয়ে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে। কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণের জন্য লবণের চাহিদা বাড়লে কৃত্রিম সংকট তৈরির অভিযোগও রয়েছে।
এদিকে এ প্রসঙ্গে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তরের মহাপরিচালক ড. সহিদুল ইসলাম জানান, আমদানীকৃত পণ্য বাজারে বিক্রি করে মুনাফা করবে ব্যবসায়ীরা, এটাই অর্থনীতির স্বাভাবিক ধারা। এ বিষয়ে সৎ ব্যবসায়ীদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করা হচ্ছে। তবে কেউ যদি নিজের পকেট ভারী করতে আমদানীকৃত পণ্য নায্যমূল্যের চেয়ে বেশি দামে বিক্রি করে বা কোনো কারসাজি করে সাধারণ মানুষকে ভোগান্তিতে ফেলে, তা মেনে নেয়া হবে না। এ বিষয়ে কঠোর পদক্ষেপ নিতে তথ্য-প্রমাণ জোগাড়ে কাজ করা হচ্ছে।