দেশীয় আমেজের ম্যাটেরিয়াল আমি নই: প্রিয়তি

0
694

খুলনাটাইমস বিনোদন: মিস আয়ারল্যান্ড মাকসুদা আক্তার প্রিয়তি ঢাকায় যৌন হেনস্তা নিয়ে মুখ খুলে আলোচনায় এসেছিলেন। তার জীবন নির্ভর বইতেও খোলামেলা বলেছেন প্রেম, সম্পর্ক, ভাঙন, মডেলিং ক্যারিয়ার নিয়ে। কিন্তু তারপর কতদূর। ঢাকা থেকে আয়ারল্যান্ডের ডাবলিন। নতুন কোনো সম্পর্ক, নতুন কোনো কাজ, নাকি ফের নতুন কোনো বিতর্ক। এমন বেশকিছু প্রশ্নের খোলামেলা উত্তর দিয়েছেন মিস আয়ারল্যান্ড প্রিয়তি। কেমন আছেন? প্রিয়তি উত্তরে বলেন, শারীরিকভাবে ভালো আছি। তবে দেশের জন্য মন অস্থির হয়ে থাকে।
যারা বাইরে থাকেন আমার এই অস্থিরতার সঙ্গে তারা পরিচিত। আয়ারল্যান্ডে দিনকাল কেমন কাটছে? প্রিয়তির উত্তর, দিনকাল বা জীবন যেভাবেই বলেন না কেন ব্যস্ততার মধ্যে ভালোই যায়, অভিযোগ করার অবকাশ নেই। জীবন আর সময় ছকে বাঁধা। তবে মাঝে মাঝে ঝড় আসে, দুমড়িয়ে মুচড়িয়ে আছড়ে ফেলে, এর মাঝে হাঁটু কাঁপাতে কাঁপাতে আবারো নতুন করে, নতুন উদ্দীপনায় দাঁড়ানোর চেষ্টা করি।
বিদেশে বিমান চালানোর অভিজ্ঞতা কেমন? এ প্রশ্নে বলেন, প্রথমত: বিমান চালনা এমন একটি কাজ যা একটি মানুষের শিক্ষাগত যোগ্যতা, বুদ্ধিপনা, দক্ষতা ও সাহসের সঙ্গে-সঙ্গে সেই মানুষটির প্রতিটি ইন্দ্রিয় তীক্ষ্ণভাবে, শতভাগ কাজ করতে হয়। একজন বৈমানিক এর একটা/ দুটো নয়, অনেকগুলো কাজ (মাল্টি টাস্কিং) এক সঙ্গে সমন্বয়ে করতে হয়। একটি বিমান যখন আকাশে উড়ার উদ্দেশে রওনা হয়, তখন থেকে মাটিতে নামা অব্দি বিমানটি জানে না যে কে তাকে পরিচালনা করছে, তার চালক পুরুষ না নারী, কোন ধর্মের, কোন ভাষাভাষীর, কোন সংস্কৃতির। বিমানটি শুধুই বোঝে তার পারফরমেন্স। এবং সেই বিমানের সঠিক পারফরমেন্স এর জন্য নির্দেশনা, পরিচালনা করা বৈমানিক এর একমাত্র কাজ। আমার এতগুলো কথা বলার কারণ একটাই, একজন বৈমানিক দেশে বিমান চালাক বা বিদেশে কিন্তু আকাশে নিরাপদে উড়ার নিয়ম নীতিগুলো একই, কেননা কোনো বিমান দেশ-বিদেশের আকাশ বোঝে না, বোঝে শুধু নিয়ন্ত্রণ। তবে আপনি যদি গ্রাউন্ড এর ম্যানেজমেন্ট বা মেইনটেনেন্স এর কথা জিজ্ঞেস করেন তাহলে আমি কোন তুলনা করতে পারছি না আপাতত যেহেতু আমি আয়ারল্যান্ড-এর বাইরে অন্য কোনো দেশের এভিয়েশনে কাজ করিনি। তবে আমি যতদূর দেখেছি আইরিশ এভিয়েশন এর কড়া নজরদারি থাকে বিমান কোম্পানিগুলোর ওপর, বিমানগুলোর সর্বোচ্চ রক্ষণাবেক্ষণের ওপর। তাদের কাছে নিরাপত্তাই প্রথম।
মিস আয়ারল্যান্ড, মিস আর্থ এরপর? প্রিয়তি হেসে বলেন, আসলে কি, আমাদের জীবনে বয়স অনুযায়ী সময়ের একটা বাক্স থাকে। ঐ বাক্সটিতে আপনার পছন্দ অনুযায়ী অর্জন ভরবেন, আপনার অর্জনের লক্ষ্য আপনারই নির্ধারণ করতে হবে। তা করতে হয়, আপনার সময়ের সুষম বণ্টন করে, আপনার মেধা, শ্রম, নিষ্ঠা, দৃঢ়তা ও মনোযোগ দিয়ে তাই না? অর্থাৎ প্রতিটা সময়কে কাজে লাগানো। মিস আয়ারল্যান্ড, মিস আর্থ আমার ঐ সময়ের বাক্স ভরেছে, আমি সেই অর্জনের চূড়ান্ত ফলাফলের তৃপ্তি পেয়েছি। কিন্তু এখন সময় বদলিয়েছে, বাক্সের আকার এবং চাহিদা বদলিয়েছে। নতুন অর্জনের জন্য লক্ষ্য ঠিক করেছি, আয়ারল্যান্ড এর রাজনীতিতে নিজের শক্ত অবস্থান গড়ে তুলবো। সময় নিচ্ছি, শর্টকাট উপায়ে অর্জন করার উদ্দেশে পথে নামিনি। দেখা যাক। দেশে নানা হেনস্তার কথা আপনার বইতে আছে, কিন্তু আয়ারল্যান্ড কি নিরাপদ? উত্তরে বলেন, বাংলাদেশে প্রতিটা সেক্টরে হেনস্তা চরম পর্যায়ের, যা কেউ অস্বীকার করতে পারবে না। আয়ারল্যান্ড থাকলেও এমন জঘন্য রকম নয়, অসহনীয় নয়। মানুষের মাঝে নীতি আছে, সামাজিকভাবে যেন হেয় না হয় সেটির প্রতি ভয় আছে। দেশে যৌন হেনস্তা নিয়ে মুখ খুলেছিলেন, এখনকার অবস্থা কি? প্রিয়তি বলেন, আমি মুখ খুলেছি অনেক নারীদের হয়ে, যারা মুখ খোলার সাহস পায় না, সামাজিক বা সামাজিক নিরাপত্তার কারণে। চাপা যন্ত্রণা নিয়ে বয়ে বেড়াচ্ছেন বছরের পর বছর। এখন আস্তে আস্তে অনেকের মাঝে সাহস সঞ্চালন হচ্ছে, কথা বলছে। এভাবেই প্রতিরোধ গড়ে উঠবে।
ঢাকায় বিজ্ঞাপনচিত্র নির্মাণে আপনার তিক্ত অভিজ্ঞতার পর কোন সুরাহা কি হয়েছে? প্রিয়তি বলেন, বিষয়টি ইন্টারপোলের তদন্তে আছে। এটি একটি দীর্ঘমেয়াদী প্রক্রিয়া। আমি এত সহজে হাল ছাড়ছি না। নতুন সম্পর্কে থিতু হচ্ছেন? প্রিয়তির সোজাসাপ্টা উত্তর, কোনো সম্পর্কে থিতু হওয়া বলতে আমি যা বুঝি, অপর সঙ্গীর সঙ্গে একসাথে স্বপ্ন বুনা, এক সঙ্গে শক্ত করে হাত ধরে জীবনের বাকিটা পথ একসঙ্গে চলার সিদ্ধান্ত, দুই সঙ্গীর মাঝে প্রতিশ্রুতি এবং যেই সম্পর্ককে সামাজিকভাবে উপস্থাপন করতে কোনো বাধা/প্রতিরোধ থাকবে না। সুতরাং, থিতু হবার মতো এমন কোনো সম্পর্ক আমার জীবনে এখনো গড়ে উঠেনি।
ঢাকার মিডিয়া ইন্ডাস্ট্রিতে নতুন কাজ নিয়ে বলেন, থেকে থেকে প্রায়ই কাজের কথা হয়, তারপর কিছু কারণে ক্ষেত্রবিশেষে থেমে যায়। তাদের মধ্যে একটি কারণ হলো অপেশাদ্বারিত্ব, দুই- আমি দেশীয় আমেজের ম্যাটেরিয়াল নই, তিন- আমাকে দিয়ে কাজের বাইরে ব্যক্তিগত কোন বেনিফিট হবে না তা বুঝতে পেরে। বইতে খোলামেলা কথা লেখার পর যাদের কথা আছে তাদের কি ধরনের প্রতিক্রিয়া এসেছে? প্রিয়তি বলেন, আমি তো কারোর সরাসরি নাম বলে ব্যক্তিগত আক্রমণে যায়নি, সবই ছিল ছদ্মনাম। আর যারা করেছেন, তারা তো জানেনই ওঁরা অন্যায় করেছেন। দেশে ফেরার ইচ্ছে আছে, নাকি আয়ারল্যান্ডেই স্থায়ী হবেন? প্রিয়তি বলেন, সে নিয়ে এখনো ভাবিনি। জীবন যখন তার তাগিদে আমাকে যেখানে নিয়ে যাবে, আমি ওখানেই থাকবো।