তালায় চেয়ারম্যানের নেতৃত্বে বসতঘরে ঢুকে ষাটোর্ধ বৃদ্ধকে মারপিট’র অভিযোগ

0
687

তালা(সাতক্ষীরা)প্রতিনিধি:

সাতক্ষীরার তালা উপজেলার খেশরা ইউপি চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজুর নেতৃত্বে স্থানীয় কুলপোতার বিকাশা সানা নামের ষাটোর্ধ এক বৃদ্ধকে শারিরীকভাবে লাঞ্ছিত করার ঘটনা ঘটেছে। গত ১০ জুন রাত আনুমানিক ১১ টার দিকে চেয়ারম্যান ১২/১৩ টি মোটর সাইকেলের বহর নিয়ে কুলপোতার বিকাশ সানার বাড়িতে হামলা করে। এসময় চেয়ারম্যানের সাথে থাকা লোকেরা বিকাশের বসত ঘরে ঢুকে তাকে টেনে-হিঁচড়ে মারতে মারতে বাইরে রাস্তায় নিয়ে যায়। তার স্ত্রী তাদের বাঁধা দিলে তারা তাকেও লাঞ্ছিত করে।
এসময় সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের বয়োবৃদ্ধকে চেয়ারম্যান মদ-গাঁজাখোরসহ অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করেন। প্রায় ৫০/ ৬০ জন লোকের সামনে এভাবে একজন বৃদ্ধকে মারপিট ভালো চোখে নেয়নি কেউ।এঘটনায় স্থানীয় সংখ্যালঘু স¤প্রদায়ের মধ্যে ব্যাপক ক্ষোভের সঞ্চার হয়েছে।

অভিযোগের প্রেক্ষিতে সরেজমিনে গিয়ে জানা যায়, খুলনার পাইকগাছা উপজেলার শিববাড়ী গ্রামের মৃত কালিপদ সানার ছেলে বিকাশ আনুমানিক ১০/১২ বছর আগে তালা উপজেলার খেশরার কুলপোতা গ্রামে লিজ ঘেরের ব্যবসা শুরু করেন। ব্যবসায়িক সুবিধার্থে কুলপোতায় জমি কিনে বাড়ি করে সেখানে স্থায়ী ভাবে বসবাস করে আসছেন।

স্থানীয়রা জানান, প্রায় বছর দু’য়েক পূর্বে চেয়ারম্যানের কাছের মানুষ হিসেবে চিহ্নিত স্থানীয় জনৈক আনন্দ সরকার তার বড় ভাই দেবদাস সরকারের মাধ্যমে বিকাশ সানার কাছ থেকে তার মেয়ের বিয়ের জন্য ৩০ হাজার টাকা ধার নেন। বিকাশ তার গ্রামের একটি সমিতি থেকে নিজের চেক জমা দিয়ে ঐ টাকা উঠিয়ে আনন্দকে এনে দেন। আনন্দও তার একাউন্টের একটি চেক তাকে দিয়ে ঐ টাকা নেন। এই টাকা চাওয়াকে কেন্দ্র করে গত প্রায় ৩ মাস পূর্বে চেয়ারম্যানের দাপটে বিকাশ সানাকে মারপিট করে আনন্দ সরকার।

ভুক্তভোগী বিকাশ সানা জানান, মেয়ের বিয়ের জন্য কাছে টাকা ধার চায় আনন্দ। এক পর্যায়ে তার বড় ভাইয়ের অনুরোধে তিনি গ্রাম্য সমিতি থেকে নিজের চেক জমা রেখে ৩০ হাজার টাকা এনে তাকে দেন। পরে ঐ টাকা চাইতে গেলে সে তাকে মারধর করে।যার পরিপ্রেক্ষিতে আনন্দে’র দেয়া চেক সংশ্লিষ্ট সমিতিতে জমা দিয়ে তিনি সমিতি দেয়া তার চেকটি ফিরিয়ে নেন। পরে সমিতির লোকেরা টাকা আদায়ে আনন্দে’র নামে মামলা করেছে।

ঘটনার দিন রাতে একজন ফোন করে আনন্দের সাথে কি হয়েছে জানতে চায়। এসময় বিকাশ তার পরিচয় জানতে চাইলে তিনি নিজেকে সংশ্লিষ্ট ইউনিয়নের চেয়ারম্যান পরিচয় দিয়ে আনন্দকে তার লোক বলে চিহ্নিত করে তার বিরুদ্ধে মামলা করার সাহস সম্পর্কে জানতে চেয়ে বিকাশের অবস্থান সম্পর্কে জানতে চান। এসময় তিনি বাড়িতে আছেন বলার কিছুক্ষণ পরই ১২/১৩ টি মটরসাইকেলের বহর নিয়ে চেয়ারম্যান ২৫/ ২৬ জন লোকসহ তার বাড়িতে এসে তার বসতঘরে ঢুকে তার স্ত্রীর সামনে তাকে মারপিট শুরু করেন। একপর্যায়ে তার সহযোগীরা তাকে জামার কলার ধরে টেনে-হেঁচড়ে, মারতে মারতে ঘর থেকে বের করে রাস্তায় নিয়ে আসেন। এসময় তারা তার জামার পকেটে থাকা ধান বিক্রির ৭০ হাজার টাকা উঠিয়ে নেন। একপর্যায়ে তাকে মারপিটের খবরে এলাকাবাসী এগিয়ে আসলে চেয়ারম্যান সকলের সামনে তাকে শাষিয়ে চলে যান। তবে এঘটনায় তিনি চেযারম্যানের ভয়ে এখন পর্যন্ত থানায় কোন অভিযোগ করেননি, আদালতে মামলা করবেন বলেও জানান তিনি।

এ ব্যাপারে আনন্দ সরকারের নিকট জানতে চাইলে তিনি বিকাশ সানা তার কাছে ৩০ হাজার টাকা পাবে বলে স্বীকার করেন। তবে এজন্য তিনি কখনো বিকাশকে মারপিট করেননি বলেও দাবি করেন। তবে ঘটনার দিন মোবাইলে চেয়ারম্যানের সাথে বিকাশ অসদাচারণ করার কারণে রাতে তাকে সকলের সামনে মারপিট করেছেন বলেও জানান তিনি।

এবিষয়ে চেয়ারম্যান রাজিব হোসেন রাজু’র সাথে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি ফোন ধরে কোন জবাব না দিয়ে বলেন ব্যস্ত আছি পরে কথা বলবো বলে ফোন রেখে দেন।