ট্রাক চালাতে মালিক-চালকদের অনীহায় পণ্য পরিবহন মারাত্মক ব্যাহত হচ্ছে

0
311

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: করোনার কারণে বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পণ্য পরিবহনে অনীহা দেখাচ্ছে ট্রাক মালিক ও চালকরা। ফলে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে নিত্যপণ্যের সরবরাহ মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে। ট্রাকের অভাবে বর্তমানে রাজধানী থেকে জরুরি ভিত্তিতে খাদ্যপণ্য দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পাঠানো যাচ্ছে না। একইভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকেও খাদ্যপণ্য রাজধানীতে আনা যাচ্ছে না। আর এ অবস্থা দীর্ঘায়িত হলে কঠিন হয়ে পড়বে রাজধানীসহ সারাদেশে পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখা। মূলত নিরাপত্তার স্বার্থে চালক ও হেলপাররা গাড়ি নিয়ে রাস্তায় বের হতে চাইছে না। আর মালিকরা লোকসানের ভয় পাচ্ছে। বিভিন্ন পণ্যের ব্যবসায়ী এবং ট্রাক ব্যবসায় জড়িত সংশ্লিষ্টদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, নওগাঁ ও কুষ্টিয়ায় চালের অভাব নেই। কিন্তু ট্রাকের অভাবে সেখান থেকে চাল আসতে পারছে না। ফলে রাজধানীতে চাল সরবরাহে কিছুটা সমস্যা হওয়ায় চালের দাম বাড়ছে। আর শিগগিরই পরিবহন সমস্যার সমাধান না হলে চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রাখাই কঠিন হয়ে পড়বে। কিন্তু ট্রাক মালিক ও চালকদের মতে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে চলমান পরিস্থিতিতে অনেক চালক ও হেলপার বাড়ি চলে গেছে। যারা আছে, তারাও নিরাপত্তার কারণে রাস্তায় নামতে চাইছে না। তাছাড়া দেশব্যাপী খাবার হোটেল বন্ধ রয়েছে। দীর্ঘপথে ট্রাকের চালক ও হেলপারের খাবারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু তারা রাস্তায় খাবার পাচ্ছে না। আবার গাড়ি রাস্তায় অকেজো হয়ে পড়লে মেরামতেরও ব্যবস্থা নেই। কারণ দেশের সব ওয়ার্কশপ বা গ্যারেজ বন্ধ রয়েছে। এমন অবস্থায় মালিক ও চালকরা ট্রাক রাস্তায় নামাতে ভরসা পাচ্ছে না।
সূত্র জানায়, বিদ্যমান পরিস্থিতিতে পণ্য পরিবহনের জন্য পর্যাপ্ত পণ্যও পাওয়া যাচ্ছে না। হয়তো ঢাকা থেকে পণ্য নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে ট্রাক গেল। কিন্তু সেখান থেকে ফেরার পথে ঢাকায় নিয়ে আসার জন্য পণ্য নেই। একইভাবে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে রাজধানীতে পণ্য পৌঁছে দিয়ে ট্রাকগুলোকে খালি ফিরে যেতে হচ্ছে। তাতে মালিকরা লোকসানের মুখে পড়ছে। ফলে তারা পণ্য পরিবহনে সিঙ্গেল ট্রিপে রাজি হচ্ছে না। কারণ যাওয়া-আসার পথে ফেরির টোল, ব্রিজের টোলসহ নানা খরচ রয়েছে। তার ওপর পুলিশের হয়রানি তো রয়েছেই। মূলত লোকসান ও হয়রানি থেকে বাঁচতে অনেক মালিক ট্রাক গ্যারেজে রেখে দিয়েছে।
এদিকে পণ্য পরিবহন সঙ্কট প্রসঙ্গে দেশের খ্যাতনামা নিত্যপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান সিটি গ্রুপের মহাব্যবস্থাপক বিশ্বজিৎ সাহা জানান, নানা কারণেই পরিবহন সঙ্কট রয়েছে। আর এ কারণে দেশের প্রত্যন্ত অঞ্চলে পণ্য পৌঁছে দেয়া কঠিন হচ্ছে। তারপরও সব ধরনের নিত্যপণ্যের সরবরাহ ঠিক রাখার চেষ্টা চালিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বর্তমান পরিস্থিতিতে রাস্তায় গ্যারেজ বন্ধ। খাবার হোটেল বন্ধ থাকাসহ নিরাপত্তার অভাব রয়েছে। ওসব কারণে চালক ও হেলপাররাও ঘরের বাইরে যেতে অনীহা দেখাচ্ছে।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে বাংলাদেশ পরিবহন শ্রমিক লীগের সভাপতি হানিফ খোকন জানান, সবারই মৃত্যুভয় রয়েছে। পরিবহন বন্ধের ঘোষণা পেয়েই শ্রমিকরা বাড়ি চলে গেছে। তাদের ফিরিয়ে আনা সম্ভব নয়। তাই রাজধানীতে পণ্য পরিবহনের জন্য ট্রাক সঙ্কট দেখা দিয়েছে। তবে বিআরটিসির অনেক ট্রাক রয়েছে। ওসব ট্রাকের চালকরা সরকারি কর্মচারী। তাদের পাওয়া সহজ। বিআরটিসির ট্রাকগুলো রাস্তায় নামানো গেলে জরুরি পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে সৃষ্ট জটিলতা নিরসন অনেকটাই সম্ভব।
সার্বিক বিষয়ে বাণিজ্য সচিব ড. জাফর উদ্দিন জানান, যে কোন পরিস্থিতিতে দেশব্যাপী খাদ্যপণ্য সরবরাহ ঠিক রাখতে সরকার বদ্ধপরিকর। এর জন্য যা যা করার প্রয়োজন, সরকার তাই করবে। এ নিয়ে উদ্বেগের কিছু নেই। প্রয়োজন হলে বিআরটিসির ট্রাকসহ বিশেষ ব্যবস্থাপনায় পণ্য সরবরাহ ঠিক রাখা হবে।