টুঙ্গিপাড়ায় সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তার অনিয়ম ও দূর্নীতি

0
751

নিজস্ব প্রতিনিধিঃ
গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়া উপজেলা সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা এস, এম হুমায়ূন কবীরের বিরুদ্ধে নানা অনিয়ম ও দূর্র্নীতির অভিযোগ উঠেছে। গভীর নলকূপ ক্রয়ের টাকা, আপ্যায়ন বাবদ , মনিহারি বাবদ, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামতের টাকা সহ কর্মীদের সাথে দুর্ব্যবহারসহ নানা অনিয়মের অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

অভিযোগের ভিত্তিতে জানা গেছে, ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে উপজেলার কুশলী, গোপালপুর, ডুমুরিয়া ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যান কেন্দ্রে নলকূপ স্থাপনের জন্য তিন লাখ তিন হাজার টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়। এর মধ্যে শুধু মাত্র কুশলী ইউনিয়ন স্বাস্থ্য কেন্দ্রে নলকুপ স্থাপন করে বাকি দুইটি নলকুপের টাকা হুমায়ূন কবীর আত্মসাৎ করেন।

ডুমুরিয়া ও গোপালপুর ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রে সরেজমিনে গেলে কোন টিউবওয়েল দেখা যায়নি। এসব স্বাস্থ্য কেন্দ্রে কর্মরত কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের সাথে কথা বলে জানা যায়, তাদের কেন্দ্রে কোন টিউবওয়েল স্থাপন করা হয়নি। এ বরাদ্দের ব্যাপারে জানেন কিনা জানতে চাইলে তারা বলেন, শুনেছি যে তিনটি টিউবওয়েল বরাদ্দ হয়েছিল। পরে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি শুধু মাত্র কুশলী পরিবার কল্যান কেন্দ্রে একটি টিউবওয়েল দেয়া হয়েছে। কিন্তু আমাদের কেন্দ্রে কোন টিউবওয়েল দেয়া হয়নি।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, হুমায়ন কবীর ২০১৭ সালের নভেম্বরে টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেন। এরপর থেকে তিনি নানা অনিয়ম-দূর্নীতির সাথে জড়িয়ে পড়েন। ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে উপজেলার প্রত্যন্ত এলাকায় নৌকায় করে বাড়ি বাড়ি গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা দেয়ার জন্য পরিবার কল্যাণ সহকারীদের নৌকা ভাড়া (হায়ারিং চার্জ) বাবদ ৯৬ হাজার টাকা বরাদ্দ দেয়া হয়। কিন্তু তিনি কর্মীদের টাকা না দিয়ে পুরোটাই নিজে আত্মসাৎ করেছেন।

সূত্রে জানা গেছে, পরিবার পরিকল্পনা পরিদর্শিকা (এফ.উব্লিউ.ভি) ও উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসার (এস.এ.সি.এম.ও) দের বরাদ্দকৃত পণ্যের ভাড়া ও পরিবহন ব্যয় বাবদ ৪০ হাজার টাকা না দিয়ে পুরোটাই নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে তাদের জন্য বি.পি স্টাথ্যাসকোপ বাবদ ১০ হাজার টাকা বিল করা হয়। কিন্তু বরাদ্দকৃত বি.পি স্টাথ্যাসকোপ তারা কেউই পায়নি। হুমায়ূন কবীর কোথাও পরিদর্শন করতে না গিয়ে ২০১৭-১৮ অর্থ বছরে ১ লক্ষ ৭৫ হাজার ৩৯০ টাকা (টিএ ও ডিএ) ভ্রমণ ভাতা উত্তোলন করেছেন। একই অর্থ বছরে নিজের কক্ষের ফার্নিচার বাবদ ৬৫ হাজার টাকা বিল করা হলেও কোন ফার্ণিচার ক্রয় করা হয়নি। এছাড়া উপজেলার বিভিন্ন স্থানে মেডিকেল ক্যাম্প করার সময় ডাক্তারি সরঞ্জাম জীবানুমুক্ত করার জন্যে একটি গ্যাস সিলিন্ডার ও একটি গ্যাসের চুলা দেয়া হলেও সেটি তিনি নিজের বাসায় ব্যবহার করছেন বলেও জানা গেছে।

এছাড়া ইউনিয়ন কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারগন অভিযোগ করে বলেন, ‘গত ২৬ শে আগষ্ট মাসিক ওষুধ বন্টনের দিন প্রতিটি ইউনিয়ন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের জন্য গ্যাসের ওষুধ প্যানটোপ্রাজল ৪’শ বরাদ্দ হলেও তিনি ২শ’ দিয়েছে। এরপর ভাউচারে সই করার সময় দেখতে পাই তাতে ৪শ লেখা। জানতে চাইলে সে বলে ভাউচারে লেখা ভূল হয়েছে। তোমরা সই দাও কোনো ঝামেলা হলে আমি দেখবো। তখন আমরা তাতে সই করি। কিন্তু পরে জানতে পারি প্রতিটি ইউনিয়নের জন্য ৪শ প্যানটোপ্রাজল ট্যাবলেট বরাদ্দ হয়েছিল। শুধু এবারই না, সে যোগদান করার পর থেকেই এভাবেই ওষুধ কম সরবরাহ করেছেন। যদি ক্যালসিয়াম ট্যাবলেট ৩শ বরাদ্দ হতো আমাদের ১শ দিত, আবার ভিটামিন ৫শ বরাদ্দ হতো আমাদের ২শ দিত। কিন্তু আমরা ভয়ে কিছু বলতে পারতাম না।

এছাড়াও আপ্যায়ন বাবদ ৩০ হাজার, মনিহারি বাবদ ৪০ হাজার, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম মেরামত বাবদ ২৫ হাজার টাকা বিল করে কোন কিছু না করেই নিজের পকেটে ঢুকিয়েছেন তিনি এবং ইউনিয়ন ভিত্তিক স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রগুলোর দায়িত্বে থাকা উপ-সহকারী কমিউনিটি মেডিকেল অফিসারদের সাথে দুর্ব্যবহার করেন বলেও একাধিক অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে, এস, এম হুমায়ূন কবীরকে গত ৫ সেপ্টেম্বর স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা অধিদপ্তরের মহা-পরিচালকের অনুমোদন ক্রমে উপ-পরিচালক মো. ইফতেখার রহমান স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে বরিশালের ভোলা জেলার চরফ্যাশন উপজেলায় তাকে স্টান্ডরিলিজ করা হয়। তাতে বলা হয় আগামী ১১ ই সেপ্টেম্বরের মধ্যে বদলিকৃত কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ প্রদান করা হল। অন্যথায় ১২ ই সেপ্টেম্বর তাৎক্ষনিক অব্যাহতি বলে গণ্য হবে। কিন্তু খোজ নিয়ে জানা যায়, হুমায়ন কবীর বদলিকৃত কর্মস্থলে ১১ ই সেপ্টেম্বর উপস্থিত হয়নি। এছাড়া টুঙ্গিপাড়া উপজেলায় নতুন দ্বায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে এখনো তার দ্বায়িত্ব বুঝে দেননি।

তবে এবিষয়ে অভিযুক্ত সহকারী পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা হুমায়ন কবীরকে তার মুঠোফোনে একাধিক বার কল দিলেও তিনি ফোন রিসিভ করেনি।

গোপালগঞ্জ স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিভাগের উপ-পরিচালক মাজাহুরুল হক চৌধুরি বলেন, যদি সে এরকম কিছু করে থাকে তাহলে তদন্ত করে প্রয়োজনীয় ব্যাবস্থা গ্রহণ করা হবে।