জনবলের অভাবে রেলের শতাধিক স্টেশন বন্ধ থাকায় কাক্সিক্ষত সেবা বঞ্চিত যাত্রীরা

0
200

টাইমস ডেস্ক:
তীব্র জনবল সঙ্কট নিয়ে খুঁড়িয়ে চলছে বাংলাদেশ রেলওয়ে। অথচ বিগত ১১ বছরে প্রায় ৪শ’ কিলোমিটার নতুন রেলপথ নির্মাণ হয়েছে। স্টেশন নির্মাণ হয়েছে ৯৫টি। নতুন ট্রেন চালু করা হয়েছে ১৩৩টি। এভাবে রেলওয়ের পরিধি বাড়লেও লোকবল বাড়ছে না। বরং লোকবলের অভাবে নতুন নির্মিত স্টেশনগুলোসহ ১০৭টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ফলে যাত্রীরা রেলের কাক্সিক্ষত সেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। বাংলাদেশ রেলওয়ে সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, তীব্র জনবল সঙ্কট সামাল দিতে রেলে অনেক ক্ষেত্রেই চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিয়ে কাজ চালিয়ে নেয়ার চেষ্টা করা হচ্ছে। কিন্তু তাতে পরিস্থিতি সামাল দেয়া যাচ্ছে না। রেলওয়েতে বর্তমানে ১৫ হাজারের বেশি শূন্যপদ রয়েছে। লোকবল নিয়োগের প্রয়োজন থাকলেও অবসরে যাওয়া স্টেশন মাস্টার, চালক ও গার্ডদের চুক্তিভিত্তিতে নেয়া হচ্ছে। অর্থাৎ কৌশলে রুদ্ধ করে রাখা হচ্ছে নিয়োগের পথ। এর মধ্যমে রেল সংশ্লিষ্ট একটি চক্র আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের বিনিময়ে মোটা অঙ্কের টাকা নেয়া হয়। বর্তমানে ৬০ জন স্টেশন মাস্টার চুক্তিতে কাজ করছে। নতুন করে আরো অর্ধশতাধিক স্টেশন মাস্টারের চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ চূড়ান্ত পর্যায়ে রয়েছে।
সূত্র জানায়, ১৯৮৫ সালের নিয়োগবিধি অনুসারে রেলে কোনো নিয়োগ কার্যক্রম গ্রহণের সুযোগ নেই। কারণ নতুন করে নিয়োগের জন্য বিদ্যমান বিধিমালা সংশোধন করতে হবে। সেজন্যই নিয়োগ প্রক্রিয়া আটকে রয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের দাবি, এ সমস্যা সমাধানে সংশ্লিষ্টরা কাজ করছে। ইতিমধ্যে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ নতুন করে ৪৭ হাজার ৩ জন লোকবলের চাহিদা পাঠিয়েছে।ট্রেন পরিচালনায় সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ পদ হচ্ছে ট্রেনচালক, গার্ড ও স্টেশন মাস্টার। এ তিন পদেই ৫০ শতাংশের বেশি লোকবলের অভাব রয়েছে। ট্রেন পরিচালনা স্বাভাবিক রাখতে এ তিন পদে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দেয়ায় খোদ রেলওয়ে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের মধ্যেই ক্ষোভ বিরাজ করছে। কারণ ভুল বা অপরাধ করলেও চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের শাস্তির আওতায় আনা যায় না। চুক্তিতে সে সুযোগ রাখা হয়নি।
সূত্র আরো জানায়, শুধু স্টেশন মাস্টারের অভাবে পশ্চিম রেলে ৬৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। তার মধ্যে ঢালারচর-পাবনায় নতুন নির্মিত রেলপথে নতুন ৬টি স্টেশন রয়েছে। একই অবস্থা ফরিদপুর-ভাঙ্গা পর্যন্ত রেলপথের ৫টি স্টেশন। মাত্র একটি স্টেশনে স্টেশন মাস্টার আছে। বাকি ৪টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। পশ্চিমাঞ্চল রেলে বর্তমানে ৩৩ জন স্টেশন মাস্টার চুক্তিভিত্তিতে চাকরি করছে। অথচ গত ১১ বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। নতুন রেলপথ নির্মাণ, নতুন স্টেশন ভবন নির্মাণসহ বহু প্রকল্প বাস্তবায়ন হয়েছে। কিন্তু লোকবলের অভাবে বাস্তবায়িত প্রকল্পের শতভাগ সেবা যাত্রীরা পাচ্ছে না। অথচ স্টেশন মাস্টার, পয়েন্টম্যান পদে যথাযথ লোকবল থাকলে বন্ধ স্টেশনগুলো খুব সহজেই চালু করা সম্ভব হবে। বর্তমানে পশ্চিমাঞ্চল রেলে ৬৬টি স্টেশন বন্ধ রয়েছে। ৩৩ জন স্টেশন মাস্টার চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের মাধ্যমে কাজ করছে। নতুন নির্মিত কিছু স্টেশনে অন্য স্টেশন থেকে মাস্টার এনে চালিয়ে রাখা হচ্ছে। তাতে করে যেসব স্থান থেকে স্টেশন মাস্টার আনা হচ্ছে সেসব স্থানে লোকবল কমে যাচ্ছে। ফলে ঝুঁকিও বাড়ছে। তাছাড়া পূর্বাঞ্চল রেলেও স্টেশন মাস্টারের চরম স্বল্পতা রয়েছে। বিদ্যমান পরিস্থিতিতে জোড়াতালি দিয়ে স্টেশনগুলো চালু রাখার চেষ্টা হচ্ছে। লোকবলের অভাবে রেলপথসহ বিভিন্ন দফতরে শতভাগ কাজ সম্পূর্ণ করা যাচ্ছে না। বর্তমানে প্রায় ১৫০ স্টেশন মাস্টার প্রয়োজন হলেও নিয়োগ বন্ধ রয়েছে। পূর্বাঞ্চল রেলে নতুন-পুরাতন মিলিয়ে ৪১টি রেলওয়ে স্টেশন বন্ধ রয়েছে। নতুন করে আরো ২৬ জন স্টেশন মাস্টারকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ দিতে সুপারিশ করা। কারণ এ মুহূর্তে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ না হলে আরো অনেক স্টেশন বন্ধ হয়ে যাবে। যদিও ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের মতে, নিয়োগ বিষয়ে যে জটিলতা রয়েছে তা শিগগিরই সমাধান হবে।
এদিকে চুক্তিভিত্তিক নিয়োগ নিয়েও চলছে অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। নিজেদের পছন্দমতো অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টারদের ২০১১ সাল থেকে ২ বছর মেয়াদে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। তাদের অনেকের বয়স হয়েছে, চোখে কম দেখেন, তারপরও তাদেরই নেয়া হচ্ছে। আর চুক্তিভিত্তিক নিয়োগপ্রাপ্তদের মধ্যে অনেকেই রয়েছে যারা ২-৩ বার এ সুযোগ পেয়েছে। অবসরপ্রাপ্ত স্টেশন মাস্টার অবসরের সময়ে যে টাকা বেতন পেতো, চুক্তিভিত্তিক নিয়োগের পরও ওই পরিমাণ বেতনই পাচ্ছে। অথচ কোনো অন্যায় বা ভুল করলে তাদের শাস্তির আওতায় আনা না যাওয়ায় অনেক ক্ষেত্রেই তারা স্বেচ্ছাচারী আচরণ করছে।
অন্যদিকে এ বিষয়ে বাংলাদেশ রেলওয়ে মহাপরিচালক মো. শামছুজ্জামান জানান, লোকবল সমস্যা সমাধানে কাজ করা হচ্ছে। ট্রেন চলাচল ঠিক রাখতেই চুক্তিভিত্তিতে রেল থেকে অবসরপ্রাপ্ত অভিজ্ঞ লোকজন অস্থায়ী ভিত্তিতে নিয়োগ দেয়া হচ্ছে। এটা না করলে ট্রেন পরিচালনা অসম্ভব হয়ে পড়বে। চুক্তিভিত্তিক নিয়োগে কোনো অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পেলে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন জানান, কোনো সমস্যাই থাকবে না। দ্রুত সময়ের মধ্যেই নিয়োগ বিষয়ক সমস্যা সমাধান হয়ে যাবে। দ্রুত নিয়োগ প্রক্রিয়া শুরু করা হবে। রেলে যে পরিমাণ উন্নয়ন প্রকল্প বাস্তবায়ন হচ্ছে তাতে লোকবল জরুরি হয়ে পড়ছে। নতুন করে ৪৭ হাজারের উপরে লোকবল চেয়ে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ে চাহিদা পাঠানো হয়েছে। সবকিছু ঠিক থাকলে আগামী কয়েক মাসের মধ্যে নিয়োগ প্রক্রিয়ার কাজ শুরু করা সম্ভব হবে।