চূড়ান্ত করা হচ্ছে রেলের দুর্নীতিবাজদের তালিকা শিগগিরই চালানো হবে ব্যাপক শুদ্ধি অভিযান

0
271

খুলনাটাইমস এক্সক্লুসিভ: সরকারের একটি গোয়েন্দা সংস্থা বাংলাদেশ রেলওয়ের দুর্নীতিবাজদের তালিকা করেছে। এখন ওই তালিকা চূড়ান্ত করার কাজ চলছে। খুব শিগগিরই তা প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ সংশ্লিষ্ট স্থানে পাঠানো হবে। এতোদিন যারা দুর্নীতিরি মাধ্যমে মোটা অংকের টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এবার তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। এখন পর্যন্ত তালিকায় অন্তত ২০ জনের নাম রয়েছে। তার মধ্যে রয়েছে সাবেক কয়েকজন মহাপরিচালক (ডিজি), মহাব্যবস্থাপক (জিএম) ও অতিরিক্ত মহাপরিচালক (এডিজি), কয়েকজন প্রকৌশলী, বিভিন্ন পর্যায়ের কর্মকর্তা ও কয়েকজন ঠিকাদারের নামও। এর বাইরে বর্তমানে কর্মরত জিএম, প্রকৌশলী ও বাণিজ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের কয়েকজনও নজরদারিতে রয়েছেন, শেষ পর্যন্ত তাদের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হতে পারে। রেলপথ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, রেলভবন ঘিরে রাজনৈতিক বা ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে এতোদিন যারা নানামুখী দুর্নীতির মাধ্যমে টাকা হাতিয়ে নিয়েছে, এবার তাদের অভিযানের মুখোমুখি হতে হবে। দুর্নীতিবাজদের তালিকা প্রস্তুতির খবরে ইতিমধ্যে রেলওয়ের বিভিন্ন স্তরে উদ্বেগ দেখা দিয়েছে। অনেকেই দুর্নীতিবাজের তালিকায় যেন নাম না থাকে সেজন্য তদবির করে বেড়াচ্ছে। এমনকি কেউ কেউ দেশ ছাড়ার চেষ্টায়ও রয়েছে। তবে গোয়েন্দা সংস্থার পক্ষ থেকে ওসব ব্যক্তির চলাফেরা ও কার্যক্রমের ওপর নজর রাখা হচ্ছে। শুধু তাই নয়, দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের পাশাপাশি তাদের স্ত্রী ও সন্তানের সম্পদেরও অনুসন্ধান চালানো হচ্ছে। বিশেষ করে যাদের পরিবারের সদস্য বিদেশে বিলাসী জীবনযাপন করছে, বিদেশে ব্যয়বহুল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যার ছেলেমেয়ে পড়ালেখা করছে, তাদের আয়ের উৎস সম্পর্কে খোঁজ নেয়া হচ্ছে। রাজধানীতে বাড়ি ও ফ্ল্যাটের মালিক কর্মকর্তারাও নজরদারির মধ্যে রয়েছে।
সূত্র জানায়, প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত না থাকলেও এতোদিন যেসব কর্মকর্তা প্রকল্পের অভিজ্ঞতা অর্জনের নামে বিদেশে ঘুরেছে, তাদের নামও তালিকায় অন্তর্ভুক্ত হচ্ছে। ইতিমধ্যে বিগত ১০ বছরে যারা বিদেশে গেছে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয় তাদের তালিকা চেয়েছে। আর যেসব কর্মকর্তা ঘন ঘন বিদেশে গেছেন, তাদের সম্পদের খোঁজে মাঠে নেমেছে গোয়েন্দারা। সম্প্রতি সংসদীয় কমিটি এক নির্দেশনায় গত ১০ বছরে কোন কর্মকর্তা কতবার বিদেশে গেছেন, কী কারণে গেছেন, কোন কোন প্রকল্পের আওতায় গেছেন, এর তথ্য-উপাত্ত চেয়েছে। প্রকল্পের সঙ্গে তাদের সম্পৃক্ততা কতটুকু, তা-ও এতে জানাতে বলা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, রেল খাতের উন্নয়নে বহু কোটি টাকার বরাদ্দ হলেও বড় অঙ্কের অর্থই দুর্নীতিবাজরা হাতিয়ে নিয়েছে। প্রতিবছর বড় অঙ্কের বাজেট হলেও বাস্তবে যথাযথ উন্নয়ন হয়নি। চলমান প্রকল্পের বেশির ভাগই চলছে খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে। এমনকি বিভিন্ন প্রকল্পে কয়েক দফা ব্যয় বৃদ্ধির পরও কাজ শেষ হচ্ছে না। মূলত মাঠপর্যায়ে লাগামহীন দুর্নীতির কারণেই রেলওয়ের উন্নয়ন দৃশ্যমান হচ্ছে না। উল্টো দিন দিন রেলপথ মরণফাঁদে পরিণত হচ্ছে। তাছাড়া রেলপথ নিরাপদ রাখতে যেসব কর্মকর্তার দায়িত্ব পালন করার কথা, তাদের নিয়েও নানা অনিয়মের প্রসঙ্গ উঠছে। রেলপথের পাথর থেকে শুরু করে নাট-বল্টু, সিগন্যালিং ব্যবস্থা দেখভালে রয়েছে ব্যাপক দুর্নীতি। চলছে তেল চুরি। মাঠপর্যায়ে কাজ না করেও বহু কর্মচারী মাসের পর মাস বেতন তুলে নিচ্ছে। কর্মকর্তারা তাদের কাছ থেকে পাচ্ছে মাসোহারা। আর ক্ষণে ক্ষণে ট্রেন দুর্ঘটনায় পড়ে এসবের খেসারত দিচ্ছে রেল ও সাধারণ যাত্রী।
এদিকে তালিকায় রেলের কয়েকজন অসাধু ঠিকাদারের নামও রয়েছে। রেলকেন্দ্রিক সব উন্নয়ন কাজের টেন্ডার নিয়ন্ত্রণ করতো সাম্প্রতিক সময়ে আলোচিত এক যুবলীগ নেতা। আর তার ওপর ভর করেই দুর্নীতি জায়েজ করতো রেলের অসৎ কর্মকর্তারা। ওসব কর্মকর্তাদের কী পরিমাণ সম্পদ রয়েছে, রাজধানীতে কয়টি ফ্ল্যাট কিংবা প্লট, গ্রামের বাড়িতে কী পরিমাণ জায়গাজমি কিনেছে, বাড়ি নির্মাণ করেছে তাও খুঁজে দেখা হচ্ছে।
অন্যদিকে রেল খাতে দুর্নীতি-অনিয়ম বন্ধে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) কিছুদিন আগেই একটি প্রতিবেদন দেয়। তাতে দুর্নীতির ১০টি উৎস চিহ্নিত করে তা বন্ধে ১৫টি সুপারিশ করা হয়। প্রতিবেদনে বলা হয়, রেলওয়ের ওয়ার্কশপগুলো কার্যকর না করে ট্রেনের যন্ত্রাংশ আমদানির মাধ্যমে বড় ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতি, রেলের স্লিপার নির্মাণ কারখানা অকার্যকর রেখে সরকারের আর্থিক ক্ষতি, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল (চট্টগ্রাম) ও পশ্চিমাঞ্চলের (রাজশাহী) অধীনে বিপুল পরিমাণ সম্পত্তি লিজ ও হস্তান্তর প্রক্রিয়ায় অনিয়ম, রেলওয়ের অধীনে ওয়াগন, কোচ, লোকোমোটিভ, ডিজেল ইলেকট্রিক মাল্টিপল ইউনিট কেনা ও সংগ্রহে অনিয়ম, রেলওয়ের ডাবল লাইন, সিঙ্গেল লাইন, ডুয়েল গেজ ট্র্যাক নির্মাণকাজে অনিয়ম এবং রেলের বিভিন্ন পদে লোক নিয়োগে দুর্নীতি রয়েছে। এখন ওসব দুর্নীতির সঙ্গে জড়িতদের নাম শুদ্ধি অভিযানের জন্য তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করা হচ্ছে।
রেলে শুদ্ধি অভিযানের প্রসঙ্গে রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন জানান, প্রধানমন্ত্রী দুর্নীতির বিরুদ্ধে যে অভিযান শুরু করেছেন, রেল তাকে স্বাগত জানায়। রেল খাতে যদি দুর্নীতিবাজ থেকে থাকে, তাদের বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেয়া হবে। দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের জন্য রেলওয়ের এত উন্নয়ন, বর্তমান সরকারের সফলতা নস্যাৎ হতে পারে না। আমি চাই আইন অনুযায়ী দুর্নীতিবাজের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হোক।