খোঁড়া অজুহাতে সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় ‘গেট দিয়ে রাস্তা বন্ধ’

0
1143

এম জে ফরাজী : নিরাপত্তার অজুহাত দিয়ে নগরীর সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার (১ম ফেজ) দু’টি প্রবেশমুখে গেট দিয়ে রাস্তা বন্ধ করেছে কল্যাণ সমিতির নেতারা। ফলে প্রতিনিয়ত দুর্ভোগের শিকার হচ্ছেন শিক্ষার্থী থেকে শুরু করে সাধারণ বাসিন্দারা। বারবার জনপ্রতিনিধি, প্রশাসন ও কল্যাণ সমিতির নেতাদের অবগত করা হলেও মিলছে না সুরাহা। এতে করে চরম ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন পার্শ্ববর্তী মাদ্রাসা রোড ও ইস্ট লেন এলাকার বাসিন্দারা।
মঙ্গলবার সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকার ১ম ফেজের ৬ নম্বর রাস্তাটির প্রবেশমুখ ও ইস্ট লেনের রাস্তায় দুইটি গেট স্থাপন করা। এরমধ্যে মূল গেট খোলা না থাকলেও দু’টি গেটেরই পকেট গেট খুলে রাখা হয়েছে। শিক্ষার্থীরা পায়ে হেটে স্কুলে যাচ্ছে। সাইকেলআরোহীরা তাদের সাইকেল উপরে তুলে পকেট গেট দিয়ে পার হচ্ছেন। তবে রিক্সা থেকে শুরু করে কোন ধরণের যানবাহন প্রবেশ করতে পারছে না কিংবা বের হতেও পারছে না। স্থানীয় বাসিন্দা থেকে শুরু করে সাধারণ পথচারীদের দুর্ভোগের এ চিত্রটি প্রতিনিয়তও দেখা যাচ্ছে সেখানে।
স্থানীয়রা জানান, সোনাডাঙ্গা আবাসিক এলাকায় বারবার চুরির অজুহাত এনে ২০-২৫ দিন আগে কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে গেট স্থাপন করা হয়। সকাল ৬টা থেকে শুরু করে রাত ১০টা পর্যন্ত পকেট গেট খুলে রাখা হয়। এরপর পকেট গেটও আটকে দেওয়া হয়। ফলে রাতে জরুরী মুহুর্তে কোন রোগীকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার প্রয়োজন হলে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দাদের। মূল গেট না খোলায় এ্যাম্বুলেন্স কিংবা গাড়ী প্রবেশ করা বা ঘোরানোও যায় না। এতে করে বৃদ্ধ আত্মীয়-স্বজনদের জরুরী চিকিৎসা নিয়ে চরম দুশ্চিন্তায় বাসিন্দারা।
তবে গত শুক্রবার কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে দুইজন দারোয়ান নিয়োগ দেওয়ার কথা বলা হয়েছে। যিনি রাতে জরুরী মুহুর্তে গেট খুলে কিংবা বন্ধ করে দিবেন। যার বেতন পরিশোধ করতে হবে মাদ্রাসা রোড ও ইস্ট লেন রোডের বাসিন্দাদের। যা নিয়েও হতাশ ওই দুই রোডের বাসিন্দারা।
মুহাম্মদ নগর মহিলা মাদ্রাসার ছাত্রী সুমাইয়া বলেন, ‘আগে রিক্সা নিয়ে মাদ্রাসা যেতে পারতাম, আবার বাসায় ফিরতে পারতাম। এখন গেট দেওয়ায় কোন যানবাহন নিয়ে যাওয়া যায় না। বাসা থেকে বের হতে দেরি হলে মাদ্রাসায় পৌছাতেও দেরি হয়’।
শহীদ মডেল স্কুলের ছাত্র প্রাচুর্য্য বলেন, ‘এখন হেটে হেটে স্কুলে যেতে হয়। সাইকেল নিয়ে যেতে গেলে উচু করে উপরে তুলে পকেট গেট পার হতে হয়। এতে অনেক সময় ড্রেসে ময়লা লেগে যায়। গেট দেওয়ায় অনেক শিক্ষার্থীই দুর্ভোগে পড়েছে’।
মাদ্রাসা রোডের বাসিন্দা ও খুলনা কলেজিয়েট স্কুলের প্রাক্তণ সহকারী প্রধান শিক্ষক আঞ্জুমান আরা বলেন, ‘রাস্তায় গেট দেওয়ায় আমাদের নানা রকম সমস্যায় পড়তে হচ্ছে। বাজারে যেতে গেলে অনেকখানি হেটে তারপর যেতে হয়। হাসপাতালে যাওয়ার ক্ষেত্রেও অনেক সমস্যা’।
তিনি আরও বলেন, ‘খুলনা কলেজিয়েট স্কুলের প্রায় ৪৭৫ জন শিক্ষার্থী আবাসিক এলাকার বাইরে থেকে আসে। রাস্তা বন্ধ করে দেওয়ায় এদের প্রত্যেককে হেটে হেটে স্কুলে যেতে হচ্ছে। এ যেন দেখার কেউ নেই’।
রহিমা বেগম নামের গৃহিনী বলেন, ‘সরকারি রাস্তা কেন কল্যাণ সমিতির নেতারা বন্ধ করে দিবেন। তারাও সরকারকে ট্যাক্স দেয়, আমরাও দেই। আমাদের কি কোন দাম নেই। বাজারে যেতে সমস্যা, হাসপাতালে যেতে সমস্যা। তারা অযৌক্তিকভাবে আমাদের উপরে তাদের সিদ্ধান্ত চাপিয়ে দিয়েছেন’।
সালেহিন লাভলু নামের এক স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, ‘কোনরকম আলোচনা ছাড়াই কল্যাণ সমিতি রাস্তার মধ্যে গেট নির্মাণ করেছে। প্রতিনিয়ত আমাদের সমস্যার সম্মুখীন হতে হচ্ছে। দারোয়ান নিয়োগের সিদ্ধান্ত কল্যাণ সমিতির, তাহলে আমরা কেন দারোয়ানের বেতন দেব। কল্যাণ সমিতির নেতাদের উপরমহলে হাত বিধায় এই অন্যায় কাজ করছে বলে অভিযোগ করেন তিনি’।
এ বিষয়ে কল্যাণ সমিতির সভাপতি শরীফ আতিয়ার রহমান বলেন, ‘আবাসিক এলাকায় প্রতিনিয়ত চুরির ঘটনা ঘটছে তাই নিরাপত্তার কথা চিন্তা করে গেট নির্মাণ করা হয়েছে। পার্শ্ববর্তী রোডের বাসিন্দাদের দুর্ভোগের কথা ভেবে সার্বক্ষনিক পকেট গেট খুলে রাখা হয়েছে এবং মূল গেট খোলার জন্য ১১ থেকে দারোয়ান রাখা হয়েছে’।
তিনি আরও বলেন, ‘গেট দেওয়ার সিদ্ধান্তটি প্রশাসন থেকে এসেছে। সকলের মতামতেই গেট নির্মাণ করা হয়েছে, এখন আপনি পত্রিকায় লিখলে কি হবে’। যেহেতু তাদের (পার্শ্ববর্তী রোডের) সমস্যা সমাধানে দারোয়ান রাখা হয়েছে, বেতনও তাদের দিতে হবে’।
সোনাডাঙ্গা মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. মমতাজুল ইসলাম বলেন, ‘নিরাপত্তার জন্য কল্যাণ সমিতির গেট নির্মাণ করেছে, এখানে প্রশাসনের কোন বিধি-নিষেধ নেই। তবে শুক্রবারের সভায় প্রশাসন, কল্যাণ সমিতির নেতারা ও স্থানীয় জনপ্রতিনিধি উপস্থিত ছিলেন’।
স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, ১৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর শেখ হাফিজুর রহমান বলেন, ‘সকলের সিদ্ধান্তেই গেট নির্মাণ করা হয়েছে। পকেট গেট সবসময় খুলে রাখা হচ্ছে এবং মূল গেটও জরুরী মুহুর্তে খোলা যাবে’।
এ বিষয়ে খুলনা সিটি কর্পোরেশন (কেসিসি)’র মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক বলেন, ‘আমি কেবলমাত্র দায়িত্ব নিয়েছে। গেট দিয়ে রাস্তা বন্ধ করার কোন বিষয় আমার জানা নেই। আমি আগে ঘুরে দেখি কোথায় কি সমস্যা। তারপর সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে’।