খুলনায় ইজিবাইক নিয়ন্ত্রনে নতুন মেয়রের অপেক্ষায় নগরবাসী

0
1492

সাইমুম মোর্শেদঃ অদক্ষ চালক, যেখানে-সেখানে পার্কিং, বেপরোয়া গতি ও বিদ্যুৎ ব্যবহারসহ নানা কারণে ইজিবাইকে অতিষ্ট হয়ে উঠেছে খুলনা মহানগরী।ইজিবাইকের সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় রাস্তা পারাপারই দায় হয়ে পড়েছে শহরবাসীর। দ্রুত গন্তব্যে পৌঁছার এই বাহনটি নগরবাসীর জন্য অভিশাপ হয়ে দাঁড়িয়েছে।অনিয়ন্ত্রিত এই বাহনটির কারণে প্রতিদিন কোথাও না কোথাও দুর্ঘটনা ঘটছে। কোনোরকম বাধা ছাড়াই নিষিদ্ধ এ ইজিবাইক অদক্ষ চালকরা বেপরোয়ভাবে শহরের প্রধান সড়কগুলোতে চালাচ্ছেন।

অবৈধ এইসব ইজিবাইকের রাজত্বের পেছনে ‘স্থানীয়  রাজনৈতিক দলের চাঁদাবাজি’ অন্যতম কারণ হিসেবে দেখছেন নগরবাসী। ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বৈঠকে বেশ কয়েকবার সিদ্ধান্ত হলেও তার সুফল পাওয়া যাচ্ছে না। এদিকে শহরে কি পরিমাণ ইজিবাইক আছে তার সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই সিটি কর্পোরেশনের কাছে।

এরমধ্যে বিষয়টি নিয়ে সিটি করপোরেশন, জনপ্রতিনিধি, নাগরিক সংগঠনসহ বিভিন্ন দপ্তরে আলোচনা হয়েছে।নিরাপদ সড়কের দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা ইজিবাইকের জন্য আলাদা লেনের দাবি জানিয়েছেন।

২৬ সেপ্টেম্বর কেসিসির নতুন নগরপিতা আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক ক্ষমতা গ্রহন করলে, তার নির্বাচনি ইশতেহার পূরণ করার মধ্যদিয়ে মহানগরীতে এই চলমান সমস্যা লাঘব হবে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা।

বিশ্লেষকদের মতে, খুলনার অপেক্ষাকৃত কম আয়তনের সড়কে অধিকসংখ্যক যানবাহন চলাচলের অনুমতি দেয়া হলে যানজট নিরসন অসম্ভব হয়ে পড়বে।

জানা যায়, প্রশাসনের উচ্চ পর্যায়ের কয়েকদফা বৈঠক হলেও ইজিবাইকে লাইসেন্স দেয়ার প্রক্রিয়াটি থমকে গেছে। এই সেক্টর থেকে প্রতিদিন অর্থ আদায়, চাঁদাবাজি ও চালকরা ভোট ব্যাংক হিসেবে কাজ করায় সবকিছু যাচাই বাছাই করে সিদ্ধান্ত নিতে চাইছেন সংশ্লিষ্টরা। তবে ইজিবাইক শ্রমিক সংগঠনগুলো নতুন মেয়রের চেয়ারে বসার অপেক্ষায় রয়েছেন বলে জানা গেছে।

সিটি করপোরেশনের সূত্র মতে, সড়কে শৃঙ্খলভাবে যানবাহন চলাচলের লক্ষ্যে ইজিবাইক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত সভা ২০১৭ সালের ১৫ ডিসেম্বর নগর ভবনে অনুষ্ঠিত হয়। এতে বর্তমান মেয়র মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান, জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান শেখ হারুনুর রশীদ ও খুলনা-২ আসনের সংসদ সদস্য মুহাম্মদ মিজানুর রহমান মিজান উপস্থিত ছিলেন। ওই সময় মহানগরীতে ৫ হাজার ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়ার নীতিগত সিদ্ধান্ত হয়।

ধারনা করা হয় নগরীতে বর্তমানে ৩০ হাজারের বেশি ইজিবাইক চলাচল করে। দুর্ঘটনা এড়াতে ইজিবাইকের সংখ্যা সীমিত করতে পূর্বের দেওয়া ১ হাজার ৯৬০টি লাইসেন্সের সাথে নতুন করে ৩ হাজার ৪০টি ইজিবাইকের অনুমতি দেয়ার সিদ্ধান্ত হয়। ২০১৭ সালের ৪ অক্টোবর নগর ভবনে স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে এ ধরনের আরেকটি সিদ্ধান্ত নেয়া হয়।

২০১৬ সালের ১১ মে তৎকালীন বিভাগীয় কমিশনার ইজিবাইকের লাইসেন্স কমিয়ে আনার বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। কিন্তু নানা কারণে ওই সিদ্ধান্তও বাস্তবায়ন হয়নি।

বাংলাদেশ মানবাধিকার বাস্তবায়ন সংস্থা খুলনার সমন্বয়কারী ও নাগরিক নেতা এডভোকেট মোমিনুল ইসলাম বলেন, খুলনায় প্রতিনিয়ত ইজিবাইক বাড়ছে জনপ্রতিনিধিদের নিজেদের স্বার্থগত কারণেই। তিনি বলেন, সড়কে শৃঙ্খলার জন্য সীমিত আকারে ইজিবাইকে লাইসেন্স দিতে হবে। শহরের মধ্যে নির্দিষ্ট পোশাকে নির্দিষ্ট রুটে এই যানবাহন চললে দুর্ঘটনা এড়ানো সম্ভব হবে।
খুলনার সরকারি মহিলা কলেজের ছাত্রী আমেনা সুলতানা নিশি জানান, ইজিবাইক অনেক ক্ষেত্রেই সড়কে গলার কাঁটা হয়ে দেখা দিয়েছে। সড়কে ইজিবাইকের জন্য আলাদা লেন করা হলে যানজট থেকে মুক্তি পাওয়া যাবে।

এদিকে কেসিসির সিনিয়র লাইসেন্স অফিসার এস কে এম তাছাদুজ্জামান বলেন, আমাদের সর্বশেষ সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পূর্বের দেয়া ১ হাজার ৯৬৩টি ইজিবাইকের লাইসেন্স এর সঙ্গে নতুন করে আরও ৩ হাজার ৩৭টি লাইসেন্স দেয়ার কথা বলা হয়। এক্ষেত্রে নগরীর স্থায়ী বাসিন্দা অথচ ইজিবাইক চালক এমন লোক অগ্রাধিকার পাবে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ওই সিদ্ধান্তু অনুসারে চলতি বছরের ১৫ জানুয়ারির মধ্যে নির্ধারিত ফরমে আবেদন গ্রহণসহ ইজিবাইক চলাচল নীতিমালা চূড়ান্ত করার কথা বলা হলেও দীর্ঘ প্রায় সাত মাসে তা বাস্তবায়িত হয়নি।নব নির্বাচিত মেয়র ক্ষমতা গ্রহন করলে তার নির্বাচনী ইশতেহার অনুযায়ী এই সমস্যার সমাধান হবে বলেও তিনি মনে করেন।

এ ব্যাপারে ইজিবাইক মালিক-চালক সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক মশিউর রহমান বলেন, কেসিসির বর্তমান পরিষদ তাদের লাইসেন্স দেয়ার কথা বলে তা বাস্তবায়ন করতে পারিনি। এ কারণে ইজিবাইক সংগঠনগুলো সঙ্কট নিরসনে নবনির্বাচিত মেয়রের চেয়ারে বসার অপেক্ষায় রয়েছেন।

খুলনা মহানগর ইজিবাইক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি সিরাজুল ইসলাম মানিক বলেন, ইজিবাইকের লাইসেন্স দেয়ার বিষয়টি মিটিং-এর মধ্যে সীমাবদ্ধ। বৈঠকে যেসব সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছিল তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি ডিসিপ্লিনের ছাত্র তামিম তায়িবুর বলেন, আমাদের ছয়দফা আন্দোলনের মধ্য অন্যতম দাবি হচ্ছে খুলনা মহানগরীতে লাইসেন্স দিয়ে সুনির্দিষ্ট ইজিবাইক রাস্তায় চলাচলের পারমিট দেওয়া। যেন অতিরিক্ত ইজিবাইকের কারনে নিত্যদিনেই জ্যাম-জট সহ নানান দুর্ভোগে পড়ছে সাধারণ শিক্ষার্থী সহ নগরবাসী।কিছুদিন আগে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রিন্টমেকিং ডিসিপ্লিনের ছাত্র তরিকুল ইসলাম তুহেল ইজিবাইক দুর্ঘটনায় মারাত্বক আহত হয়ে সিটি মেডিকেল কলেজে ভর্তি আছে।আমাদের আর কোন ভাই যেন এই মরণ বাহন ইজিবাইকে দুর্ঘটনার স্বীকার না হয়, সে জন্য আমাদের এই দাবি আমরা তুলে ধরেছি,আশাকরি নতুন নগরপিতা আমাদের এই দাবি বাস্তবায়ন করবে।