কয়রা প্রতিনিধি:
খুলনার কয়রা উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের উদাসীনতায় নষ্ট হয়ে গেছে প্রায় ছয় হাজার বই। উপজেলার কয়রা মদিনাবাদ সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে রাখা বইগুলো সুপার সাইক্লোন আম্পানের সময় পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে যায়।
মদিনাবাদ সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও উপজেলায় মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় সূত্র জানায়, গত বছর নভেম্বর-ডিসেম্বর মাসে উপজেলার ৬৫টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ষষ্ঠ থেকে দশম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য বইগুলো আনা হয়। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা সুলতান মাহমুদ তার কার্যালয়ের স্টোররুম না থাকায় কয়রা মদিনাবাদ সরকারি মডেল বিদ্যালয়ের একটি কক্ষে বইগুলো রাখেন।
এরপর জানুয়ারি মাসে উপজেলার ওইসব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বই বিতারণ করা হয়। বিতরণের পর উদ্বৃত্ত বইগুলো এ কক্ষে রাখা হয়। বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ একাধিকবার বইগুলো সরিয়ে নিরাপদ জায়গায় রাখার তাগিদ দেয়। কিন্তু সে বিষয়ে মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয় আগ্রহ দেখায়নি। গত ২০ মে আম্পানের কিছুদিন আগে সুলতান মাহমুদ বদলি হয়ে যান। তারপর থেকে উপজেলা মাধ্যমিক কার্যালয়ের দায়িত্বে আছেন একাডেমিক সুপারভাইজার মহসীন আলম। ২০ মে আম্পানের ৪ ঘণ্টাব্যাপী তান্ডবে অনেক বাঁধ, ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট লন্ডভন্ড হয়ে যায়। সেই সময় ওই বিদ্যালয়েও পানি ঢুকে বইগুলো ভিজে যায়। সরেজমিন গত ১৯ আগস্ট দেখা গেছে, টিনের ছাউনি দেওয়া ঘরের তালাবদ্ধ ৮ নম্বর কক্ষজুড়ে খোলা মেঝেতে স্তূপ করে রাখা হয়েছে বই।
বইগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হয়ে গেছে। ওই কক্ষের খোলা জানালার পাশে দাঁড়িয়ে পচা গন্ধ পাওয়া যায়।বিদ্যালয়ের নৈশপ্রহরী সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আমাদের বিদ্যালয়ের কিছু বই আম্পানে ভিজে যায়। আমরা রোদে দিয়ে তা শুকিয়ে বিদ্যালয়ের তিনতলায় রেখে দিয়েছি। কিন্তু ওই কক্ষের চাবি না থাকায় আমরা কিছু করতে পারিনি। ’
মদিনাবাদ সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক বিকাশ চন্দ্র মন্ডল বলেন, উপজেলার মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে বিতরণের পর উদ্বৃত্ত এ বইগুলো সরিয়ে নিতে একাধিকবার বলা হয়। কারণ আমাদের শ্রেণিকক্ষের সংকট রয়েছে। তখন সরিয়ে নিলে আম্পানে ভিজে যেত না। ভিজে যাওয়ার পর একাধিকবার এ বইগুলোর সুরক্ষার জন্য মহসীন সাহেবকে (কয়রা উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা কার্যালয়ের অ্যাকাডেমিক সুপারভাইজার) বলেছি। কিন্তু তিনি কোনো পদক্ষেপ নেননি। তাহলে বইগুলোর অধিকাংশ নষ্ট হতো না।
মহসীন আলম বলেন, প্রায় ছয় হাজার বই নষ্ট হয়েছে। সরকারের বেশ টাকার ক্ষতি হয়েছে। আম্পানের পর কিছু বই সরিয়ে নেওয়া হয়েছিল। কিন্তু আমাদের কোনো গুদাম না থাকায় আর বই সরানো সম্ভব হয়নি। তখন আমি স্যারকে (জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা) ফোন করে বইগুলো বিক্রির জন্য বলেছিলাম। তখন স্যার বললেন সরকারি কাজ, অনেক ব্যাপার আছে দেখি কী করা যায়। যদি প্রতিটি উপজেলায় শিক্ষা কার্যালয়ের বইয়ের একটি গুদাম থাকত তাহলে এ সমস্যা হতো না।
এ ব্যাপারে বক্তব্য জানতে জেলা শিক্ষা কর্মকর্তা মো. রুহুল আমিনের মুঠোফোনে গত ২০ আগস্ট একাধিকবার কল দিলেও তিনি রিসিভ করেননি।