কালের বিবর্তনে হারিয়ে গেছে রায় সাহেব প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি পাবলিক স্টেডিয়াম

0
340

শেখ নাদীর শাহ্, কপিলমুনি:
একের পর এক বিলুপ্ত হচ্ছে আধুনিক কপিলমুনির রুপকার রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধুর সৃষ্টি গুলি। সৃষ্টিশীল চেতনার উপর ভর করে তিনি স্বাস্থ্য, শিক্ষা,ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান থেকে শুরু করে সরোবর (পুকুর), স্টেডিয়ামসহ জনস্বার্থে নানা প্রতিষ্ঠান। তবে বংশধরদের কেউ এদেশে না থাকায়,সুষ্ঠু তদারকি ও রক্ষনাবেক্ষনের অভাবে একে একে ধ্বংসের পাশাপাশি বিলুপ্ত হতে চলেছে তার অনন্য কীর্তিগুলি।
আশির দশক থেকে ধ্বংস শুরু হয় পানীয় জলের অভাব পুরনে নিজ জমিতে খননকৃত সহচরী সরোবর (নুনদার পুকুর)। মূলত ২০০৪ সালের দিকে পুরোটাই ধ্বংস হয়। জেলা পরিষদের তত্ত্বাবধানে যেখানে ৪ তলা বিশিষ্ট জেলা সুপার মার্কেট নির্মাণের লক্ষে ইতোমধ্যে বলিু ভারাট করা হয়েছে। বর্তমানে যা বালির মাঠ নামেই পরিচিতি।
ক্ষণজন্মা দানবীর রায় সাহেব এ অঞ্চলের যুবকদের নৈতিক চরিত্র গঠন, শরীর চর্চা ও ক্রীড়ার বিকাশে ১৯৪০ সালে নিজ খরিদকৃত প্রায় দেড় একর জমিতে চারিপাশে প্রাচীর বেষ্টনি দিয়ে নির্মাণ করেন,কপিলমুনি পাবলিক স্টেডিয়াম। যেখানে খেলা-ধুলার পাশাপাশি ঐতিহ্যবাহী মহা বারণি মেলায় আগত সার্কাস,যাত্রা গান,পুতুল নাচসহ চিত্ত বিনোদনের নানা পসরায় সাজানো থাকতো। বসতো বড় বড় খেলার আসর। তবে কালের বিবর্তনে জনপদের যুব সম্প্রদায়ের মানষিকতার পরিবর্তনে খেলা-ধুলা কমে যাওয়া ও তারই প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দিরের মাঠমুখী হয়ে যাওয়ায় ক্রমান্বয়ে জৌলুস হারাতে বসে মূল স্টেডিয়ামটি। এক সময় শুরু হয় যে যার মত দখল প্রক্রিয়া। এক পর্যায়ে দখল প্রক্রিয়া ঠেকাতে কপিলমুনিবাসী স্টেডিয়ামের সমুদয় সম্পত্তি ঘেরা-বেড়া দিয়ে সেখানে কপিলমুনি পুঁলিশ ফাঁড়ি প্রতিষ্ঠা করেন। আর উত্তর প্রান্তে প্রতিষ্ঠিত হয় কপিলমুনি মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের কল্যাণে মার্কেট।
তথ্যানুসন্ধানে জানাযায়, স্টেডিয়ামটিতে এক সময় দেশের নাম করা অনেক ক্লাবের খ্যাতিম্যান খেলোয়াড়রা তাদের ক্রীড়া নৈপুন্য প্রদর্শন করে গেছেন। এখানে শুধু ফুটবল আর ক্রিকেট খেলার আসর নয়। এখানে বসতো গ্রামীণ ঐতিহ্যের ধারক হাডুডু, কাবাডি, লবনদাঁড়ীসহ বলাকা সংগের আয়োজনে ৭২ ঘন্টা অবিররাম সাইকেল রেঞ্জসহ নানা প্রতিযোগীতামূলক খেলার আসর।
প্রতিদিন কাঁক ডাকা ভোর থেকে শুরু করে বিকেলেও প্রাণবন্ত থাকত খেলার মাঠ। প্রতিষ্ঠার পর পায় ৪ দশকেরও বেশি সময় এর ধারাবাহিকতা অটুট থাকলেও ১৯৮৩ সালের দিকে আকষ্মিক ছন্দপতন ঘটে। বন্ধ হয়ে যায় স্টেডিয়ামের সকল আয়োজন। এরপর অনিয়মিতভাবে কিছু কিছু আয়োজন চলে আসলেও ২০০১ সাল থেকে আয়োজন হয়না কোন আসরের।
নানা সংকট থেকে শুরু করে নেতৃত্বের অভাব জায়গার স্বল্পতায় প্রায় চার শ’ বছরের ঐতিহ্যবাহী কপিলমুনি মহা বারুণী মেলা বিলুপ্ত হতে চলেছে। এক সময় স্টেডিয়াটিকে ঘিরে আয়োজন চললেও পরবর্তীকালে তা চলে যায় কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির মাঠে। তবে পরবর্তী সময়ে সরকার দেশের সকল শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে বিনোদনমূলক আয়োজনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের বাইরে পাবলিক আয়োজন নিষিদ্ধ করলে মূলত বারুণী মেলা স্থান সংকটের মুখে পড়ে। কেননা,এর আগেই দখল হয়ে গেছে রায় সাহেবের প্রতিষ্ঠিত পাবলিক স্টেডিয়ামের সব জায়গা।
সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় বর্তমান সরকার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের মাঠে বাইরের বিনোদনমূলক মেলা নিষিদ্ধ করলেও বিষয়টি কপিলমুনি প্রতিষ্ঠাতার মাথায় আসে ১৯৪০ সালেরও আগে। যে কারণে নিজ মায়ের নামে সহচরী বিদ্যামন্দিও স্কুল মাঠের বাইরে তিনি চিত্ত-বিনোদনে আলাদা মাঠ নির্মাণ করেন। যা হারিয়ে গেছে কালের অতল গর্ভে। উন্মুক্ত মাঠের অভাবে খেুলা-ধুলার পরিবেশ হারিয়ে যাওয়ায় শত শত যুবক আজ বিপদগামী হচ্ছে।
এপ্রসঙ্গে কপিলমুনি কলেজের অধ্যক্ষ হাবিবুল্লাহ বাহার জানান,এখ নপর্যন্ত কপিলমুনি কলেজের মাঠটি সবার খেলা-ধুলার জন্য উন্মুক্ত রয়েছে। তবে এটি সদরের খানিকটা অভ্যন্তরে হওয়ায় ছেলে-মেয়েরা সেখানে কম যায়।
জানালেন কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ক্রীয়ামোদি ব্যক্তিত্ব হরে কৃষ্ণ দাশ। তিনি আরো জানান, সময়ের প্রয়োজনে কপিলমুনিতে একটি পাবলিক স্টেডিয়াম দরকার। কপিলমুনিতে ও তার আশে পাশে অনেক খাস জমিতে যদি একটি পাবলিক স্টেডিয়াম করা যায় তাহলে এ অঞ্চল অতিতের মত খেলাধুলায় অবদান রাখতে সক্ষম হবে। যুবকরা নৈতিক অবক্ষয়ের হাত থেকে রক্ষা পাবে।
কপিলমুনি বনিক সমিতির সাবেক সভাপতি দ্বীজেন সাধু বলেন, ‘রায় সাহেবের জনহিতকর সৃষ্টিকে ধ¦ংস করা মানে তাঁকে অপমান করার সামিল। রায় সাহেবের আর কোন অনন্য সৃষ্টি যেন ধ্বংস না হয় সে জন্য আমাদের সকলকে সজাগ থাকতে হবে বলেও মনে করেন তিনি।’