করোনা সংকট ছাড়াই জাপানের অর্থনীতিতে বড় ধস

0
338
Microscopic illustration of the spreading 2019 corona virus that was discovered in Wuhan, China. The image is an artisic but scientific interpretation, with all relevant surface details of this particular virus in place, including Spike Glycoproteins, Hemagglutinin-esterase, E- and M-Proteins and Envelope.

খুলনাটাইমস আর্থনীতি :করোনাভাইরাস সংকট শুরু হওয়ার আগেই বড় ধরনের অর্থনৈতিক পতনে পড়েছে জাপান। গত বছরের শেষ প্রান্তিকে তাদের জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) প্রবৃদ্ধি কমে গেছে অন্তত ১ দশমিক ৬ শতাংশ। এর আগে সবশেষ ২০১৪ সালের দ্বিতীয় প্রান্তিকে দেখা গিয়েছিল এমন ধস। সেবার প্রবৃদ্ধি কমেছিল ১ দশমিক ৯ শতাংশ।সোমবার বার্তা সংস্থা এএফপি জানায়, গত প্রান্তিকে ভোক্তা কর বৃদ্ধি ও ভয়াবহ টাইফুন হাগিবিসের কারণে এমন দুর্দশায় পড়েছে বিশ্বের তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতির দেশটি। এই প্রান্তিকে ভোক্তা কর আট শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করেছে জাপান সরকার। আর হাগিবিসের তাণ্ডবে দেশটিতে প্রাণ হারিয়েছেন শতাধিক মানুষ।অর্থনীতিবিদদের ধারণা ছিল, গত প্রান্তিকে এশিয়ার অন্যতম অর্থনৈতিক পরাশক্তি জাপানের প্রবৃদ্ধি বড়জোর এক শতাংশের মতো কমতে পারে। কিন্তু বর্তমান চিত্র দেখে সেই পতনকে রীতিমতো ‘অর্থনৈতিক ধস’ বলে মন্তব্য করেছেন দেশটির নরিনচুকিন রিসার্চ ইনস্টিটিউটের প্রধান অর্থনীতিবিদ তাকেশ মিনামি।তিনি বলেন, (অর্থনীতিতে) প্রাকৃতিক দুর্যোগের আঘাত ছিল ঠিকই, কিন্তু ভোক্তাদের মনোভাব দুর্বল হয়ে পড়ে মূলত কর বৃদ্ধির পর। যদিও এর প্রভাব কমানোর চেষ্টা করেছিল সরকার।এর আগে, ২০১৪ সালে জাপানের অর্থনৈতিক মন্দা শুরু হয়েছিল বিক্রয় কর পাঁচ শতাংশ থেকে আট শতাংশ করার পর।দেশটিতে সবশেষ করবৃদ্ধির সিদ্ধান্ত কার্যকর হয়েছে গত ১ অক্টোবর। এরপর থেকে ব্যক্তিগত ভোগ্যপণ্যে ব্যয় সংকোচন দাঁড়িয়েছে ২ দশমিক ৯ শতাংশ, যা গত এক বছরে কখনোই হয়নি। এ ছাড়া শিল্প ও যন্ত্রাংশ ব্যয় কমে গেছে ৩ দশমিক ৭ শতাংশ। এসময়ে নগদ অর্থবিহীন পরিশোধ ব্যবস্থা চালুর ফলে বিনিয়োগ বাড়লেও ব্যয় সংকোচন থামাতে ব্যর্থ হয়েছি সরকার।গত প্রান্তিকে বড় ধসের পর এ বছরের প্রথম প্রান্তিকেই হানা দিয়েছে প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস। এর প্রভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে জাপানের শিল্প কারখানার উৎপাদন, বিশেষ করে পর্যটন খাত। ফলে এই প্রান্তিকে দেশটির অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর পরিবর্তে আরও বড় ধস আসতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্লেষকরা।তাকেশ মিনামির মতে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে জাপানের অর্থনীতি ঘুরে দাঁড়ানোর সম্ভাবনা প্রায় শূন্য। তিনি বলেন, ব্যক্তিগত ভোক্তা ব্যয় গত অক্টোবর-ডিসেম্বরের তুলনায় কিছুটা বাড়তে পরে। তবে সেটি অর্থনীতিতে কতটা প্রভাব ফেলবে তা নির্ভর করছে করোনাভাইরাস সংক্রমণের ওপর। এছাড়া, চীন থেকে জাহাজে যন্ত্রাংশ পরিবহনে বিলম্বের ফলে সরবরাহ সংকট তৈরি হয়েছে, এতে রফতানিও সমস্যায় পড়তে পারে।এই অর্থনীতিবিদের আশঙ্কা, টানা দ্বিতীয় প্রান্তিকেও ধসের মুখে পড়তে চলেছে জাপানের অর্থনীতি।অবশ্য এ বিষয়ে একমত নন সুমি ট্রাস্টের জ্যেষ্ঠ অর্থনীতিবিদ নাওয়া ওশিকুবো। তিনি বলেন, করোনাভাইরাস প্রাদুর্ভাব সত্ত্বেও ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে বাহ্যিক চাহিদা বাড়া উচিত। একমাত্র জাপানের পর্যটন শিল্পে এই ভাইরাস সামান্য প্রভাব ফেলবে বলে জানা গেছে, মূল জিডিপিতে যার অবদান মাত্র ০ দশমিক ৮ শতাংশ।‘এছাড়া আর কয়েক মাস পরেই টোকিও অলিম্পিক। সন্দেহাতীতভাবে জাপানের অর্থনীতিতে এর বিশাল ইতিবাচক প্রভাব দেখতে পাবো।’জাপানে ব্রিটিশ প্রমোদতরী ডায়মন্ড প্রিন্সেসের যাত্রীসহ এ পর্যন্ত ৪১৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস ধরা পড়েছে, মারা গেছেন একজন। ইতোমধ্যে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস সংকট মোকাবিলায় ১৫ দশমিক ৩ বিলিয়ন ইয়েন (১৩৯ মিলিয়ন মার্কিন ডলার) বরাদ্দ দিয়েছে জাপান সরকার।