করোনায় কর্মহীনদের কর্মসংস্থানে স্বল্প সুদ ও সহজ শর্তে ঋণ দেয়ার উদ্যোগ

0
241

টাইমস ডেস্ক:
বিদ্যমান মহামারী করোনায় দেশের বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। বিদেশ থেকে অনেকে দেশে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে করোনার প্রভাবে কর্মহীনদের জন্য ২ হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ ঘোষণা করেছে সরকার। তার মাধ্যমে তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে। তাতে ২ লাখ কর্মহীন বেকার স্বল্পসুদ ও সহজ শর্তে ঋণ সুবিধা পাবে। অর্থ মন্ত্রণালয় সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, কোভিড-১৯ এর কারণে অনেকে চাকরি হারিয়ে শহর ছেড়ে ঙতামে চলে গেছে, আবার অনেকেই কাজ হারিয়ে বিদেশ থেকে ফিরেছে। এই কর্মহীন জনগোষ্ঠীকে নতুন করে কাজে ফিরিয়ে আনতেই উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে রাষ্ট্রায়ত্ত তিনটি বিশেষ ব্যাংক ও একটি সংস্থার মাধ্যমে প্যাকেজের অর্থ ঋণ হিসেবে তাদের বিতরণ করা হবে। অর্থ মন্ত্রণালয় ইতোমধ্যে প্যাকেজের এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করেছে।
সূত্র জানায়, প্যাকেজের অর্থ পল্লী কর্মসহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ), কর্মসংস্থান ব্যাংক, পল্লী সঞ্চয় ব্যাংক ও প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের মাধ্যমে বিতরণ করা হচ্ছে। প্রতিটি ব্যাংক আড়াইশ কোটি টাকা করে বিতরণ করবে। তাতে তিনটি ব্যাংক দেবে ৭৫০ কোটি টাকা। বাকি আড়াইশ কোটি টাকা পিকেএসএফের মাধ্যমে দেয়া হবে। আর প্রথম এক হাজার কোটি টাকার প্রণোদনা প্যাকেজ যেভাবে বণ্টন করা হয়েছে, বাকি এক হাজার কোটি টাকাও ওই হারেই নির্ধারিত ব্যাংক ও সংস্থাকে দেয়া হবে। শিগগিরই প্যাকেজের দ্বিতীয় কিস্তি এক হাজার কোটি টাকা ছাড় করা হবে। এই প্যাকেজের সুদের হার ৫ শতাংশ থেকে ৯ শতাংশ। আর ঋণের সীমা ৪০ হাজার থেকে ৫ লাখ টাকা পর্যন্ত। প্রতিটি ব্যাংকের সুদহার অভিন্ন রাখা হয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, করোনার বিরূপ প্রভাবে ইতোমধ্যে চাকরিচ্যুত, পুঁজি হারিয়ে ১৩ শতাংশ লোক কর্মহীন হয়ে পড়েছে। তারা নতুন করে দরিদ্র হয়ে পড়েছে। তাদের মধ্যে অনেকেই ঙতামে চলে গেছে। ন্যূনতম আশ্রয় পাওয়া যাবে এমন চিন্তা করেই তারা ঙতামে ফিরে গেছে। এমন প্রেক্ষাপটে ঙতামীণ অর্থনীতির গুরুত্বটা সরকারের সামনে এসেছে। জিডিপিতে কৃষি খাতের অবদান ১৫ শতাংশ, শিল্প খাতে ৩৪ শতাংশ ও সেবা খাত ৫১ শতাংশ। তবে কোভিড-১৯ ঙতামীণ অর্থনীতির বড় ধরনের ক্ষতি করেছে। বন্ধ হয়ে গেছে ক্ষুদ্র উৎপাদনমুখী অনেক প্রতিষ্ঠান। মূলধন শেষ হয়ে গেছে অনেক উদ্যোক্তার। তাতে বাড়ছে বেকারত্ব। কমছে লোকজনের আয় ও ক্রয়ক্ষমতা। তাছাড়া বিশ্বের বিভিন্ন দেশে প্রায় ১ কোটি ১৯ লাখ বাংলাদেশি প্রবাসী রয়েছে। তার মধ্যে করোনায় প্রায় ২০ লাখের মতো কর্মী নানা সংকটে আছে। বিদেশ থেকে অনেক লোক ইতোমধ্যে ফেরত এসেছে। তাদের অনেকেই আর কর্মস্থলে যেতে পারছে না। ওসব প্রবাসীর জন্য প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে কাজ করার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। বিশেষ করে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংককে প্যাকেজের ২৫০ কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। ওই অর্থ দিয়ে ফেরত আসা প্রবাসীদের সহজ শর্তে ঋণ দেবে ব্যাংকটি। প্রায় ৩০ হাজার কর্মহীনকে এই ঋণ কর্মসূচির আওতায় আনা হবে। এ প্রসঙ্গে প্রবাসী কল্যাণ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) মাহতাব জাবিন জানান, প্যাকেজের আড়াইশ কোটি টাকা থেকে ঋণ বিতরণ কার্যক্রম শুরু হয়েছে। নারী উদ্যোক্তাদের জন্য ৭ শতাংশ ও পুরুষ উদ্যোক্তাদের জন্য ৯ শতাংশ হারে এই ঋণ দেয়া হচ্ছে।
এদিকে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংককে আড়াইশ কোটি কোটি টাকা দেয়া হয়েছে। এই ব্যাংক তাদের ক্ষতিঙতস্ত সদস্যদের মধ্যে স্বল্পসুদে ঋণদান কর্মসূচি চালু করছে। অর্থ বিতরণের জন্য অর্থ মন্ত্রণালয় একটি সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন দিয়েছে। পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের মাধ্যমে ৬৪ কোটি টাকা বিতরণ করা হয়েছে। এই ব্যাংক ৭০ হাজার কর্মহীনদের মধ্যে এই অর্থ বিতরণ করবে। এ প্রসঙ্গে পল্লী সঞ্চয় ব্যাংকের চেয়ারম্যান ড. মিহির কান্তি মজুমদার জানান, আশা করা যায় নভেম্বরের মধ্যে প্যাকেজের আড়াইশ কোটি টাকা বিতরণ করা সম্ভব হবে। ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা বিশেষ করে যারা ৪০ থেকে ৫০ হাজার টাকা মূলধন পেলে ক্ষতি পুষিয়ে নিতে পারবে, তাদের এই ঋণ দেয়া হচ্ছে। ঋণের সুদহার ৫ শতাংশ।
অন্যদিকে এ প্রসঙ্গে পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমেদ জানান, করোনায় ক্ষতিঙতস্ত অতিক্ষুদ্র উদ্যোক্তাদের মধ্যে অর্থ মন্ত্রণালয় থেকে প্রাপ্য অড়াইশ কোটি টাকা বিতরণ করা হচ্ছে। মূলত তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর জন্য সহজ শর্তে এ টাকা থেকে ঋণ দেয়া হচ্ছে। সেজন্য পিকেএসএফের বোর্ড সভায় অনুমোদন দেয়া হয়। তাতে অনেক ক্ষতিঙতস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা সহায়তা পাবে। কারণ করোনায় ক্ষতিঙতস্ত ক্ষুদ্র উদ্যোক্তা প্রয়োজনী অর্থ অন্য কোনো প্রতিষ্ঠান থেকে পাচ্ছে না। এখন তাদের পিকেএসএফ প্রয়োজনীয় অর্থ প্রদান করবে যাতে তারা নতুন করে দাঁড়াতে পারে।