করোনার হটস্পট খুলনা, মৃত্যু-শনাক্ত বাড়ছেই, করোনা ইউনিটে বেড খালি নেই

0
198

নিজস্ব প্রতিবেদক:
কেউ স্বাস্থ্য বিধি মানছেন না, সচেতনতার অভাবসহ নানা কারণে খুলনা জেলায় মৃত্যু ও শনাক্ত দুটোই বাড়ছে। যার কারণে খুলনা জেলা করোনার হটস্পট হয়ে উঠছে। করোনার বিস্তর ঠেকাতে পাইকগাছা উপজেলার পৌর এলাকায় সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। চলতি বছর খুলনা জেলার মধ্যে এটাই প্রথম কোনো উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হলো। গত ২৪ ঘন্টায় করোনা ও উপসর্গে নিয়ে মোট ৫ জন মারা গেছে। শনাক্ত ৩১ শতাংশ। এখনই উদ্যোগ না নিলে সামনে আরও ভায়াবহ পরিস্থিতি হবে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করেন।

এদিকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল সংলগ্ন ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে কোন বেড খালি নেই। রোগীর চাপ বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসক, নার্স ও স্বাস্থ্যসেবাকর্মীরা হিমশিম খাচ্ছেন। জনবল সংকট ও চিকিৎসা সরঞ্জাম পর্যাপ্ত না থাকায় করোনার ২য় ইউনিট চালু করতে পারছেন না খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের কর্তৃপক্ষ। পাইকগাছা উপজেলার পৌর এলাকায় সাত দিনের লকডাউন ঘোষণা করেছে স্থানীয় প্রশাসন।

আগামী ১০ জুন সকাল ৬টা থেকে ১৬ জুন বুধবার রাত ১২টা পর্যন্ত এই নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। পাশাপাশি উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নের চারটি গুরুত্বপূর্ণ হাটবাজারও এই নিষেধাজ্ঞার আওতায় থাকবে। করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ প্রতিরোধে এই সিদ্ধান্ত নেয় স্থানীয় প্রশাসন। মঙ্গলবার এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে পাইকগাছা উপজেলা প্রশাসন এই সিদ্ধান্তের কথা জানায়। বন্ধ ঘোষিত হাটবাজারগুলো হলো কপিলমুনি হাট, চাঁদখালী হাট, বাঁকা বাজার ও কাটিপাড়া বাজার। চলতি বছর খুলনা জেলার মধ্যে এটাই প্রথম কোনো উপজেলায় লকডাউন ঘোষণা করা হলো। এর আগে ৪ জুন থেকে মহানগরের তিনটি থানা ও পাশের রূপসা উপজেলায় কঠোর বিধিনিষেধ জারি করা হয়।

১০ জুন বৃহস্পতিবার পর্যন্ত সাত দিনের ওই বিধিনিষেধ চলবে। পাইকগাছা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ও উপজেলা করোনাভাইরাস সংক্রমণ প্রতিরোধসহ সার্বিক ব্যবস্থাপনা কমিটির সভাপতি এ বি এম খালিদ হোসেন সিদ্দিকী বলেন, শুধু পৌরসভা এলাকায় লকডাউন ঘোষণা করা হয়েছে। আর পাইকগাছার ৪টি হাটবাজার ১০ জুন থেকে এক সপ্তাহ বন্ধ থাকবে। লকডাউন এলাকা ও চারটি বাজারে শুধু ওষুধ, নিত্যপ্রয়োজনীয় মুদিদোকান, কাঁচাবাজার ছাড়া সব দোকান, শপিং মল বন্ধ থাকবে। নিত্যপ্রয়োজনীয় ওই দোকানগুলো সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৪টা পর্যন্ত খোলা রাখা যাবে। আদেশ অমান্যকারীর বিরুদ্ধে কঠোর আইনি ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ব্যাপারে এলাকাগুলোতে মাইকিং করা হচ্ছে।

পাইকগাছা উপজেলায় এ পর্যন্ত ২৫৫ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৭ জন মারা গেছেন। চলতি মাসের ৮ দিনে উপজেলায় ২৪ জনের শরীরে করোনাভাইরাস শনাক্ত হয়েছে। খুলনা সিভিল সার্জন দপ্তরের সূত্র মতে, গত ২৪ ঘন্টায় নতুন করে করানো শনাক্ত হয় ১৫১ জন। এর মধ্যে পুরুষ ৯২ জন ও মহিলা রয়েছে ৫৯ জন। এর মধ্যে খুলনা মহানগরীতে শনাক্ত সংখ্যা ছিলো ১১২ জন। এছাড়া উপজেলা দাকোপে-৬ জন, বটিয়াঘাটায়-৩ জন, রূপসায়-৪ জন, তেরখাদায়-২ জন, দিঘলিয়া-৮ জন, ফুলতলা-৭ জন, ডুমুরিয়া-৩ জন, পাইকগাছায়- ৫ জন ও কয়রায় ১ জন করোনায় শনাক্ত হয়। করোনায় মারা গেছে ৪ জন। এর মধ্যে নগরীতে ১ জন এবং পাইকগাছা ও কয়রায় একজন করে মারা যায়।

এ সময়ে নগরীর ৬করোনায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়। এদিকে গত ২৪ ঘন্টায় খুলনা ডেডিকেটেড করোনা হাসপাতালে রোগী ভর্তি ছিলো ১২৯ জন। এর মধ্যে রেডজোনে ৬৩ জন, ইয়েলোজোনে ২৮ জন, এইচডিইউতে ১৯ জন এবং আইসিইউতে ২০ জন। ওই সময়ে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যায় করোনা ও উপসর্গ নিয়ে ৫ জন। এর মধ্যে করোনায় মারা যায় ৪ জন। হাসপাতালে পরিচালক অধ্যক্ষ ডা: রবিউল ইসলাম জানান, করোনা দ্বিতীয় ইউনিট প্রস্তুত রয়েছে। শুধুমাত্র জনবল সংকটের কারণে ওই ইউনিটটা চালু করতে পারছি না। আমরা জনবল চেয়ে খুলনা বিভাগীয় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরকে জানিয়েছি। যে দিন থেকেই জনবল আমরা পাবো সেদিন থেকেই ওই ইউনিটটা চালু করা সম্ভব হবে।

এছাড়া অক্সিজেনসহ অন্যান্য চিকিৎসা সেবার সরঞ্জাম প্রস্তুতি রয়েছে। খুলনা সিভিল সার্জন ডা: নিয়াজ মোহাম্মদ বলেন, সচেতনতা অভাব ও স্বাস্থ্যবিধি না মানার কারণে দিনকে দিন খুলনায় করোনার পরিস্থিতি ভয়াবহ দিকে যাচ্ছে। গত ২৪ ঘন্টায় খুলনায় করোনার শনাক্তের হার ছিলো ৩১ শতাংশ। স্বাস্থ্যবিধি মানা ছাড়া পরিস্থিতি উন্নতি করা সম্ভব না। তিনি বলেন, সদর হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু যে পক্রিয়া ছিলো তা স্থগিত করা হয়েছে। জেলা প্রশাসকের এক সভায় এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ ওই হাসপাতালে করোনা ইউনিট চালু হলে সাধারণ রোগীদের সেবা দিতে ব্যহত হবে। এসব বিবেচনায় আপাতত ওটা স্থগিত রাখা হয়েছে।

এখানে করোনা ইউনিট চালুর জন্য চিকিৎসক প্রস্তুতি ছিলো, সেসব চিকিৎসকদেরকে করোনা হাসপাতালে দেওয়া হয়েছে। আরও যদি এখান থেকে নার্স করোনা হাসপাতালে দিতে হয় তার জন্যও আমরা প্রস্তুতি রয়েছি। তিনি বলেন, ঈদের সময় সরকারের বিধিনিষেধ না মেনে শপিং ও গ্রামের বাড়ি যাওয়ার ঘটনায় ফের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। এত কিছুর পরও এখানকার কেউ মাস্ক পরতে আগ্রহী নন। দিন দিন জেলার পরিস্থিতি খারাপের দিকে যাচ্ছে। মানুষ এখনই সতেচন না হলে পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে। খুলনা মেডিকেল কলেজের আরএমও করোনা ইউনিটের ফোকাল পার্সন ডা: সুহাস রঞ্জন হালদার জানান, বর্তমানে অধিকাংশই রোগীরাই তীব্র উপসর্গ নিয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন। অক্সিজেন লেবেল কম থাকা রোগীর সংখ্যা বেশি আসছে। যার কারণে অক্সিজেনও চাহিদা বেড়ে গেছে। শয্যা ১০০ থাকলেও ২৪ ঘন্টায় রোগী ভর্তি ছিলো ১২৯ জন। যারা ভর্তি হচ্ছেন তারা আগে থেকেই করোনায় আক্রান্ত ছিলো, বাসায় চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। অক্সিজেন লেভেল কমে যাওয়ায় তারা এখানে চলে আসছেন।

খুলনা টাইমস/এমআইআর