কপোতাক্ষের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু, ২১ বছরেও শেষ হয়নি নির্মাণ কাজ!

0
166

নিজস্ব প্রতিবেদক:
একটি সেতুর জন্য একশ’ বছরের অপেক্ষা! মাঝে ৮০ বছরে আশা জাগালেও মাঝ পথেই থমকে যায় এর নির্মাণ কাজ। ২০০০ সালে কপোতাক্ষের পাইকগাছার কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণ কাজ শুরু করেও শেষ হয়নি। সরকারের প্রায় ২ কোটি টাকা গচ্চা দিয়ে শেষ পর্যন্ত বন্ধ করে দেওয়া হয় বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার মানুষের দীর্ঘ দিনের প্রত্যাশা স্বপ্নের সেতুর নির্মাণ কাজ।

এখন দু’পারের মানুষের পারাপারে ঝুঁকিপূর্ণ একটি বাঁশের সাঁকোই একমাত্র ভরসা। বঙ্গবন্ধুর সোনার বাংলা বাস্তবায়নের মহান কারিগর বর্তমান সরকারের উন্নয়নের মহাসড়কে দাঁড়িয়ে সেতু বাস্তবায়নে জনপদের মানুষ আবারো আশায় বুক বেঁধেছে। সাতক্ষীরা-১ (তালা-কলারোয়া) ও খুলনা-৬ (পাইকগাছা-কয়রা) সংসদীয় আসনের দু’সংসদ সদস্যসহ জনপদের কৃতি সন্তানদের মাধ্যমে জনগুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দৃষ্টিগোচরে এনে এর বাস্তবায়নের জন্য। দেশের দক্ষিণাঞ্চলের ৩টি জেলার সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার উত্তরণে খুলনা-সাতক্ষীরা বাইপাস সংযোগ সড়ক অর্থাৎ কপোতাক্ষ নদীর উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণের দাবিটি ছিল ব্রিটিশ শাসনামলের। এরপর পাকিস্তানি শাষনামল পেরিয়ে বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের পর জোরালো হয় প্রাণের দাবি। একপর্যায়ে জনভোগান্তি হ্রাসসহ ব্যবসায়িক প্রসারতা বৃদ্ধি করতে জনদাবির প্রেক্ষিতে সরকার সেতু নির্মাণ কাজ বাস্তবায়নে ১কোটি ৯৩ লাখ ৪২ হাজার ৯শ ১৯ টাকা ৫৫ পয়সা ব্যয় বরাদ্দ করে। পরে কাজের মানোন্নয়নে ব্যয়বরাদ্দ বাড়িয়ে ২ কোটি ৩৬ লাখ টাকা করা হয়।

সেতুটির নির্মাণ কাজ পান সাবেক সংসদ সদস্য মরহুম এ্যাড শেখ মো: নুরুল হকের মালিকানাধীন ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান এন হক এসোসিয়েট। প্রতিষ্ঠানটি ২০০০ সালে সেতু নির্মাণ কার্যক্রম শুরু করে। এরপর ২০০৩ সালের ১২ নভেম্বর পর্যন্ত আংশিক কাজ করে ১ কোটি ৬৭ লাখ ৭২২ টাকা আই এফ আই সি ব্যাংক খুলনা হতে উত্তোলন করে এর নির্মাণকাজ বন্ধ করে দেয়। বিষয়টি নিয়ে ঐসময় আদালত পর্যন্ত গড়ায়। ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানের নামে মামলাসহ নানা জটিলতায় বন্ধ থাকে সেতুর নির্মাণ কাজ। এমন পরিস্থিতিতে সেতুর বাকি নির্মাণ কাজ সমাপ্ত করতে অপর একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দিলেও সাতক্ষীরা পাউবোর ভ্রান্ত ধারণার উপর ভর করে বিশেষত, কপোতাক্ষ নদের স্রোতে বাঁধা পাওয়ার আশংকার কথা উল্লেখ করে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ে পাঠানো একটি পত্রে একবারে বন্ধ হয়ে যায় সেতুর সামগ্রিক নির্মাণ কাজ। সেই থেকে গত ১৮ বছর বন্ধ রয়েছে এর নির্মাণ কাজ। এরআগে সেতুর এপ্রোচ সড়ক নির্মাণে দু’পারে জমি অধিগ্রহন ও সংযোগ সড়ক নির্মাণে মাটি ভরাট করে সরকারের সংশ্লিষ্ট কতৃপক্ষ। এদিকে সেতুটির নির্মাণ কাজ বন্ধের সাথে সাথে স্তব্ধ হয়ে যায় যোগাযোগ ব্যবস্থাকে ঘিরে বিস্তীর্ণ জনপদের উন্নয়ন অগ্রযাত্রার। অপমৃত্যু ঘটে দীর্ঘ দিনের একটি লালিত স্বপ্নের।
তবে পাউবোর আশংকায় সেতু নির্মাণকাজ বন্ধ হলেও নদের বুকে থেকে যায় সেতুর নির্মাণাধীন ১৮টি পিলার। পরবর্তীতে পর্যায়ক্রমে কপোতাক্ষের পলি মিশ্রিত পানির প্রবাহ ঐসকল পিলারে বাধাগ্রস্থ’ হয়ে সেখানে পলি জমে মারাতœকভাবে নাব্যতা হ্রাস পায় কপোতাক্ষের। এরপর জনপদের মানুষ ব্রীজ থেকে দৃষ্টি সরিয়ে মৃত প্রায় কপোতাক্ষ নদকে পুনর্জীবিত করতে নদ খননের দাবিতে শুরু করে আন্দোলন সংগ্রাম। একপর্যায়ে ২০১১ সালে কপোতাক্ষ নদ খননে প্রায় ২৬২ কোটি টাকা বরাদ্দ দেয় সরকার। এরপর নাব্যতা হ্রাসে কপিলমুনি-কানাইদিয়া খেঁয়াঘাটে চালু হয় বাঁশের সাঁকো। যা খনন পরবর্তীতেও অপসারিত হয়ে চাল হয়নি নৌকার। গত প্রায় দেড় যুগ শুরু হয়েছে সাঁকোর আমল। নড়বড়ে সাঁকোই এখন দু’পারের মানুষের জীবন-জীবিকার মাধ্যম। সাতক্ষীরার তালা উপজেলার জালালপুর ও খেশরা ইউনিয়নের ১৯ টি গ্রামসহ বিস্তীর্ণ এলাকার হাজার হাজার মানুষ সাঁকো পার হয়েই আসে বিনোগঞ্জ (কপিলমুনি) কেন্দ্রীক ব্যবসা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসহ দৈনন্দিন নানা প্রয়োজনে। বিশেষ করে উৎপাদিত ও নিত্য প্রযোজনীয় পণ্য সরবরাহে প্রতিদিন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে পার হতে হয় সাঁকোটি। এলাকাবাসী জানান, সেতুটি নির্মিত হলে সাতক্ষীরার সাথে খুলনার কপিলমুনি, ডুমুরিয়া, দাকোপের সরাসরি সড়ক যোগাযোগ ব্যবস্থার পাশাপাশি প্রত্যন্ত এলাকার উৎপাদিত পণ্য সামগ্রী সহজেই বাজারমুখী করতে তথা বাজারব্যবস্থাপনায় সৃষ্টি হবে মারাতœক সম্ভাবনা। কপিলমুনি বিনোদ স্মৃতি সংসদের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি এ্যাড.দীপঙ্কর সাহা জানান, আধুনিক কপিলমুনির স্থপতি রায় সাহেব বিনোদ বিহারী সাধু কপোতাক্ষের উপর সেতু নির্মাণে তৎকালীণ কোলকাতা রিজার্ভ ব্যাংকে এক লক্ষরও বেশি পরিমান টাকা রেখে যান। ১৯৬৫ সালে পাক-ভারত সম্পর্কের অবনতির আগ পর্যন্ত বিনোদ বিহারী সাধু প্রতিষ্ঠিত কপিলমুনি সহচরী বিদ্যা মন্দির ও সিদ্ধেশ্বরী ব্যাংক প্রতি বছর ঐ টাকার লভ্যাংশ হিসেবে অর্ধ লক্ষাধিক টাকা পেত। এ ব্যাপারে কপিলমুনি ইউপি চেয়াম্যান মোঃ কওছার আলী জোয়াদ্দার জানান, কপোতাক্ষের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণ এখন সময়ের দাবি। বর্তমান সরকারের উন্নয়নের এ মহসড়কে আরোহন করে আমরা সেতু বাস্তবায়নের স্বপ্ন দেখতেই পারি। দীর্ঘ দিন ব্রজিটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করা বিশিষ্ট সাংবাদিক ও মানবাধিকার কর্মী এস,এম মুস্তাফিজুর রহমান পারভেজ জানান, তিনি দীর্ঘ দিন যাবৎ ব্রীজটির বাস্তবায়ন নিয়ে কাজ করতে গিয়ে দেখেছেন, কপোতাক্ষের উপর কপিলমুনি-কানাইদিয়া সেতু নির্মাণে প্রকৃত পক্ষে কোন বাঁধা নেই। সারাদেশে এলজিআরডি মন্ত্রনালয় যে পরিমাণ উন্নয়ন তরান্বিত করছে তাতে করে শুধু দরকার আমাদের সদিচ্ছা। দু’পারের জনপ্রতিনিধিরা ঐক্যবদ্ধ প্রক্রিয়ায় যথাযথ দেশপ্রেমিক এলাকার কৃতি সন্তানদের মাধ্যমে সরকারের এলজিআরডি মন্ত্রনালয়কে দৃষ্টিগোচর করালেই বাস্তবায়ন হবে স্বপ্নের সেতুর। সর্বশেষ কপোতাক্ষের উপর সরকারের নির্ধারিত অধিগ্রহনকৃত এলাকায় ব্রীজটি বাস্তবায়ন হলে উন্নয়ন অগ্র যাত্রায় জনপদটি এগিয়ে যাবে আরো এক ধাপ। পূরণ হবে বিস্তীর্ণ জনপদের হাজার হাজার মানুষের প্রায় এক শ’ বছরের লালিত স্বপ্ন।

খুলনা টাইমস/এমআইআর