শেখ নাদীর শাহ্:
বৈশ্বিক করোনা মহামারীতে স্বাস্থ্যবিধিকে প্রাধান্য দিয়ে জনসমাগম এড়াতে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ দূর্গোৎসবকে পূজা উদযাপন পরিষদ শুধু ‘দুর্গাপূজা’ হিসেবে অভিহিত করে। পূজায় প্রসাদ বিতরণ ও বিজয়ায় নিষিদ্ধ ছিল শোভাযাত্রা। পূজায় ভক্তদের অনেকেই এবার অঞ্জলি নিয়েছেন ভার্চুয়াল পদ্ধতিতে। তবে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জনপদ পাইকগাছার কপিলমুনি ছিল ব্যতিক্রম। বিশেষ করে নবমীতে পূজা দেখতে মানুষের ঢল ও দশমীতে দেবী বিসর্জনে সব বিধি নিষেধ পরাজিত হয় আবেগের কাছে। লাখো মানুষের ঢল নামে বরাবরের ন্যায় এবারের পূজায়ও।
পর্বনপ্রিয় বাঙালির প্রাণের উৎসব দূর্গোৎসব। তবে করোনায় এবারের উৎসব ছোট করে আয়োজিত হয় শুধুমাত্র পূজা। তবে নবমীতে পূজায় ঘুরা-ঘুরি ও বিসর্জনের আড়ং’র রেওয়াজের উপর ভর করে জনপদের বাঙালিরা ভূলে গিয়েছিল করোনার বিধি নিষেধকে। বিজয়ায় ট্রলার ও নৌকােযোগে প্রতীমা নিয়ে কপোতাক্ষে ভেসে বেড়ানো শত শত বছরের রীতি। নাব্যতা হ্রাসে নৌকা শোভা যাত্রা কয়েক বছর বন্ধ ছিল। সরকারের সদিচ্ছায় খননে ফিরেছে কপোতাক্ষের প্রাণ। কপোতাক্ষ এখনা যৌবনা, তবে করোনায় হবেনা শোভাযাত্রা। তাই কি হয়? আবেগের কাছে আরো একবার পরাজিত হল বিধি-নিষেধ। সব মন্ডপ থেকে পৃথক পৃথক ট্রলারে নামানো হয় প্রতীমা। সাথে যার যার আয়োজনে দর্শনার্থীদের শত শত ট্রলার শোভা যাত্রা নজর কাড়ে কপোতাক্ষের দু’পাড়ে দাঁড়িয়ে থাকা লাখো ভক্ত-দর্শনার্থীদের। তবে এবারের বিজয়ায় ছিলনা মূহুর্মুহু পটকা ও আতশবাজীর প্রদর্শণী। যা,বিজয়ার আনন্দে খানিকটা ছেদ ফেলে। সব শেষে সন্ধ্যার নামতেই চিরাচরিত নিয়মে কপোতাক্ষের কপিলমুনি কালী বাড়ী ঘাটে একে একে শুরু হয় বিসর্জন পর্ব। মূহুর্তেই নেমে আসে বিরহের শুর। অশ্রুসজল নয়নে ভক্তরা কপোতাক্ষ বক্ষে একে বিসর্জন দেয় মা’দূর্গাসহ অন্যান্য দেব-দেবী মূর্তিদের। এভাবেই শেষ এবারের দূর্গা পূজা। কোন প্রকার বিশৃঙ্খলা ও অপ্রীতিকর ঘটনা ছাড়াই খুলনার পাইকগাছা উপজেলার কপিলমুনিতে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হয়েছে শারদীয় দূর্গোৎসব। উৎসবকে কেন্দ্র করে স্থানীয় এমপি, উপজেলা চেয়ারম্যান, ইউনিয়ন পরিষদ, পুজা উদযাপন পরিষদসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক ধর্মীয় ও সামাজিক সংগঠনের নের্তৃবৃন্দ পৃথকভাবে পুজা মন্ডপ পরিদর্শন করেন। প্রশাসনের পক্ষ থেকে নেয়া হয় ব্যাপক নিরাপত্তা। মন্ডপে মন্ডপে মোতায়েন ছিল পুলিশ ও আনসার ভিডিপি সদস্য। সুন্দরবন উপকূলীয় খুলনার পাইকগাছা উপজেলা সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির লীলাভূমি বলে চিহ্নিত। সেই আদিকাল থেকে বিভিন্ন ধর্ম-বর্ণের মানুষ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে নিজ নিজ ধর্ম পালন করে আসলেও মূলত ধর্মীয় রীতি-নীতি ছাড়া ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে প্রায় সব ধর্মের মানুষ দূর্গোৎসবে সামিল হয়।
প্রায় ১ লাখ ২০ হাজারেরও বেশি সংখ্যক সনাতন ধর্মাবলম্বী অধ্যুষিত উপজেলায় এবার ১৩৮ টি সার্বজনীন মন্ডপে শারদীয় দুর্গাপুজা অনুষ্ঠিত হয়। গত ২২ অক্টোবর ষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে শুরু হওয়া শারদীয়া উৎসব ২৬ অক্টোবর শেষ হয় বিসর্জনের মধ্য দিয়ে। দশমীতে সকাল ৬টা ৪৫ মিনিট পর শ্রী শ্রী দেবীর দশমীবিহিত পূজারম্ভ প্রতিমা- নিরঞ্জন ও শান্তির জল প্রদান করা হয়। দর্পণ বিসর্জনের পর নদীতে শোভাযাত্রা ও সন্ধ্যার আগে শুরু হয় দেবী দুর্গা ও অন্যান্য দেব-দেবীর বিসর্জন পর্ব। আর এর মধ্য দিয়ে দেবী মর্ত্য ছেড়ে স্বর্গে ফিরেছেন। স্থানীয় সংসদ সদস্য আলহাজ্ব আক্তারুজ্জামান বাবু, খুলনা জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এ্যাড. সুজিত অধিকারী, সদ্য নির্বাচিত পাইকগাছা উপজেলা চেয়ারম্যান আনোয়ার ইকবাল মন্টু, পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ-সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস, কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দ্দারসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ, আসন্ন ইউপি নির্বাচনকে সামনে নিয়ে সম্ভাব্য প্রার্থীসহ বিভিন্ন সামাজিক সংগঠনের নেতৃবৃন্দ বহরসহ পৌরসভা ও ১০ টি ইউনিয়নের পূজা মন্ডপগুলো পরিদর্শন ও অনুদান প্রদান করেন। এদিকে ২৬ অক্টোবর বিজয় দশমী শেষে সন্ধ্যায় কপোতাক্ষের কপিলমুনি কপিলেশ্বরী কালীবাড়ী ঘাটে প্রতিমা বিসর্জনের সময় উপস্থিত ছিলেন, উপজেলা পুজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক আনন্দ মোহন বিশ্বাস জানান। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন, কপিলমুনি ইউপি চেয়ারম্যান কওছার আলী জোয়ার্দ্দার, আ’লীগ সভাপতি যুগোল কিশোর দে, চম্পক কুমার পাল, ত্রিদিব কান্তি মন্ডল, সাধন চন্দ্র ভদ্র, রামপ্রসাদ পাল, ইকবাল হোসেন খোকন, জগদীশ চন্দ্র দে, সাংবাদিক প্রবীর জয়, রফিকুল ইসলাম খান, তপন পাল। উপস্থিত ছিলেন, বিধান চন্দ্র ভদ্র, হিমাদ্রী শেখর দে, রথীন্দ্রনাথ দত্ত, স্বপন সাহা, কৃষেন্দ্র দত্ত, অলোক মজুমদার, আবুল হোসেন, ইউপি সদস্য ইউনুছ মোড়ল, আজিজ বিশ্বাস, পরিমল কুমার সাধু ও লক্ষণ পাল, রাকিবুল হাসান শোভন প্রমুখ। অন্যদিকে শারদীয় উৎসবে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে, উপজেলা আনসার ভিডিপি কর্মকর্তা মোঃ আলতাপ হোসেন মুকুল জানান, পুজামন্ডপ গুলোতে নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আনসার ভিডিপির ১ জন সিপিও ৯ জন সদস্য সন্ময়ে মোট ১৮ টি ভ্রাম্যমাণ পেট্রোলটিম সার্বক্ষণিক মাঠে কাজ করেছে। এব্যাপারে পাইকগাছা থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) এজাজ শফী জানান, শারদীয় দুর্গোৎসবকে ঘিরে উপজেলা জুড়ে সার্বিক নিরাপত্তায় অন্যান্য নিরাপত্তা কর্মীদের পাশাপাশি পুলিশ গুরত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে।