সিন্ডিকেটের দখলে চিনির বাজার

0
359

আমাদের জীবন চলার পথে নিত্য অতিপ্রয়োজিত একটি খাদ্যপণ্য হলো ‘চিনি’। পরিবারে শিশু, বৃদ্ধ, অসুস্থ থেকে সব বয়সীদের জন্য চা-নাস্তাসহ প্রতিদিনের খাদ্যাভাসে না থাকলেই চলে না যেটি, তা হলো চিনি। আর এ চিনি তৈরির মূলরসদ ‘আখ’; তার উৎপাদনও হয়ে থাকে আমাদের দেশেই। ব্যাপক চাহিদার পরও বাজার নেই দেশি চিনি। অথচ চিনির চাহিদা মেটামে আমাদের পুরোপুরিই নির্ভর করতে হয় অন্য দেশের ওপর। চিনির মিলগুলো এখন মরা শিল্পে পরিনত হয়েছে। চিনিশিল্পে বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ কি, তা হয়তো বিশ্বখ্যাত কোনো জ্যোতিষবিজ্ঞানী বলতে পারবেন না! এখনতো বাজারে দেশি চিনি পাওয়াই যাচ্ছে না। ব্যবসায়ীরা সংবাদ মাধ্যমকে বলেন, ‘আগে ডিলাররা গাড়ি নিয়ে এলেও তাদের এখন দেখা মেলে না।’ ডিলারদের সিন্ডিকেটের কারণে গোডাউনে চিনি নষ্ট হচ্ছে। অথচ বাজারে চিনি নেই। এ ব্যাপারে খোদ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের চেয়ারম্যান অজিত কুমার পাল গণমাধ্যমকে বলেন, ‘ডিলাররা বেশি করে লাভ করতে চায়। তাই ছোট ছোট বাজারে বিক্রি করছে না তারা। আগোড়া, স্বপ্নসহ বড় বড় সুপারসপে যান দেখেন পান কিনা।’ তার অর্থ সিন্ডিকেটের দখলে চিনি! তাহলে চিনির ডিলাররা কত শক্তিশালী? দেশের সরকারও ওদের সাথে পেরে উঠছে না! অথচ প্রতি বছর সরকারকে শত কোটি টাকা লোকসান গুনতে হচ্ছে!
এসব টালবাহানার কথা আমরা কিছুতেই মানতে চাই না, বিশ্বাস করতে চাই না। দেশদ্রোহী এসব সিন্ডিকেটের দখল থেকে চিনিকে মুক্ত করে, সর্বসাধারণ যাতে চাহিদা মাফিক চিনি পেতে পারে সে ব্যবস্থা করতে হবে। দেশি আখের চিনি খুবই ভালো মানের হওয়ায় চাহিদাও ব্যাপক। বাজারে না পাওয়ায় বাধ্য হয়ে ক্রেতারা সাদা চিনি কিনতে বাধ্য হচ্ছেন। রাজধানীসহ সারা দেশের ব্যবসায়ী ও ভোক্তাদের একই অভিযোগ। দেশীয় আখ থেকে উৎপাদিত চিনি বিশুদ্ধ ও প্রাকৃতিক চিনি। নেই কোনো কেমিক্যাল। দাম একটু বেশি দিয়ে হলেও ক্রেতারা কিনতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ চিনি ও খাদ্য শিল্প কর্পোরেশনের অধীনে চিনিকল আছে ১৫টি। এর মধ্যে একমাত্র কেরু অ্যান্ড কোম্পানি লাভের মুখ দেখলেও বাকি ১৪টি সুগারমিলই লোকসান গুনছে। কেরু অ্যান্ড কোম্পানি ২০১২ সালে জৈবসার কারখানা চালুসহ মোলাসেস বা চিটাগুড়, ব্যাগাস বা ছোবড়া, প্রেসমাড বা গাদ কাজে লাগাচ্ছে। এছাড়া এই চিনিকলে তৈরি হয় দুই ধরনের ভিনেগার, স্পিরিট। জানা যায়, কেরুতে এই মদ তৈরির কারণেই লাভে আছে। চিনির দিক দিয়ে সব মিল লোকসানে।
আমরা আশা করি, দক্ষ শ্রমিক ও আধুনিক মেশিন নিয়ে ক্যাপাসিটি বিল্ডআপ করে ঘুরে দাঁড়াতে হবে চিনিশিল্পকে। এর কোনো বিকল্প ভাবার সুযোগ নেই। সংশ্লিষ্টদের ফিজিবিলিটি স্টাডি করে সম্পূর্ণভাবে ঢেলে সাজালেই এগোনো সম্ভব। না হয়তো আজকের পেয়াজের বাজারের যে দশা হয়েছে, একসময় চিনির বাজার নিয়ে সরকারকে সে দশায় পড়তে হবে।