শীতে কাঁপছে খুলনা, হাসপাতালে রোগীর চাপ, কুয়াশায় দুর্ভোগ

0
711

এম জে ফরাজী : খুলনায় তীব্র শীতে জনজীবনে ভোগান্তি বেড়েছে। গত দু’দিন ধরে আবহাওয়ার পরিবর্তন ঘটলেও ঘন কুয়াশার চাঁদরে ঢেকে গেছে শহর থেকে গ্রাম। আর প্রচণ্ড শীতের মধ্যে ডায়রিয়াসহ বিভিন্ন রোগ-বালাই বেড়ে যাওয়ায় হাসপাতালগুলোতে রোগীদের চাপ বেড়েছে। এতে সামাল দিতে হিমশিম খেতে হচ্ছে চিকিৎসকদের।
বৃহস্পতিবার ভোর থেকে সূর্যের দেখা নেই খুলনায়। বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের কারণে সারাদিনেও সূর্যের দেখা মেলেনি বরং দিনের বেলাতেও ঘন কুয়াশায় ভোগান্তি বাড়ে জনমানুষের। মাঝে মাঝে গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টির কারণে ক্রমেই ঠাণ্ডা বৃদ্ধি পেতে থাকে। এছাড়া গত তিনদিন ধরে হাড়কাঁপানো শীতের পাশাপাশি গোটা খুলনাজুড়ে কুয়াশার দাপট। নগরী ও জেলার বিভিন্ন এলাকায় ভোর থেকে দেখা মিলছে কুয়াশার। বেলা বাড়ার সাথে সাথে কখনো বৃদ্ধি পায়, আবারও কখনো কমে যায় কুয়াশা। এতে কাজে বের হতে না পেয়ে ভোগান্তিতে পড়ে খেটে খাওয়া নিম্ন আয়ের মানুষ। তীব্র শীতের কারণে স্থবির হয়ে পড়েছে জনজীবন।
খুলনা আবহাওয়া অফিসের সহকারী আবহাওয়াবিদ মো. আমিরুল আজাদ বলেন, ‘বৃহস্পতিবার খুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ছিল ১৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এরআগে ১২ ডিগ্রিতে তাপমাত্রা নামলেও বৃহস্পতিবার বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। এর কারণ হিসেবে তিনি বলেন, বলয়গ্রাস সূর্যগ্রহণের কারণে সকাল থেকে সূর্যের আলো মেলেনি। খুলনাসহ আশপাশের জেলাগুলোতেও গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টি হওয়ায় এবং সারাদিন কুয়াশাচ্ছন্ন থাকায় শীত নেমে এসেছে।’
তিনি আরও বলেন, ‘আজ শুক্রবারও খুলনায় গুড়ি-গুড়ি বৃষ্টিপাতের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে দুপুরের পর থেকে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলেও রাতের তাপামাত্রা ২-১ ডিগ্রি কমে আসতে পারে। ফলে শীতের তীব্রতা আপাতত কমছে না।’
খুলনা মেডিকেল কলেজ (খুমেক) হাসপাতালের শিশু ওয়ার্ডের চিকিৎসক মিঠুন দেবনাথ বলেন, ‘ঠাণ্ডার কারণে রোগীর চাপ বেড়েছে। হাসপাতালে যেসব রোগী আসছে, তাদের বেশিরভাগের বয়স ছয় মাস থেকে তিন বছর। এদের মধ্যে নিউমোনিয়া, শ্বাসকষ্ট ও ডায়রিয়া রোগীর সংখ্যাই বেশি।’
খুলনা শিশু হাসপাতাল সূত্র জানায়, হাসপাতালের বহির্বিভাগে শিশুদের ঠান্ডাজনিত বিভিন্ন রোগ নিয়ে এখন প্রতিদিন গড়ে ২৫০ জনেরও বেশি শিশু চিকিৎসাসেবা নিচ্ছে। রোগীর সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় চিকিৎসকদের হিমশিম খেতে হচ্ছে। ডায়রিয়া রোগীর চাপ থাকায় মেডিসিন বিভাগ থেকে শয্যা এনে ডায়রিয়া ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছে; যাতে শিশুরা প্রয়োজনীয় সেবা পায় ও অন্য শিশুরাও নিরাপদে থাকে।
খুলনা শিশু হাসপাতালের মেডিকেল অফিসার নূর-এ-আলম সিদ্দিক বলেন, ‘ঠাণ্ডাজনিত ডায়রিয়ার ৯০ শতাংশ চিকিৎসাই বাড়িতে বসে করা যায়। রোটা ভাইরাস-জনিত ওই রোগে সাধারণত কোনো ওষুধ ব্যবহার করার প্রয়োজন হয় না। ডায়রিয়ার একমাত্র ওষুধ হলো খাওয়ার স্যালাইন। তবে পানিশূণ্যতা দেখা দিলে স্যালাইন পুশ করার প্রয়োজন হতে পারে।’
উল্লেখ্য, গত ১৯ ডিসেম্বর খুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১২ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এটাই ছিল এ বছরের খুলনায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা। ওই তাপমাত্রা চলে টানা তিনদিন। এরপর ২৩ ডিসেম্বর থেকে তাপমাত্রা কিছুটা বাড়লেও শীতের তীব্রতা কমেনি।