রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়

0
597

অনলাইন রিপোর্ট : রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কমনওয়েলথ অনুরোধ করেছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। বুধবার প্রধানমন্ত্রী তার সরকারি বাসভবন গণভবনে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ কথা জানান। সৌদি আরব, যুক্তরাজ্য ও অস্ট্রেলিয়া সফর শেষে এ সংবাদ সম্মেলন ডাকেন প্রধানমন্ত্রী।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘কমনওয়েলথ সম্মেলনে ৪৬টি সদস্য রাষ্ট্র অংশ নেয়। এতে রোহিঙ্গা ইস্যুসহ আরও পাঁচ বিষয় নিয়ে কথা হয়। রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে কফি আনান কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নে কমনওয়েলথ অনুরোধ করেছে।’
বিশ্ব দরবারে অর্থনীতিসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের অগ্রযাত্রা তুলে ধরা হয়েছে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের পদক্ষেপের প্রশংসা করেছে বিশ্ব সম্প্রদায়। সম্মেলনের ঘোষণায় রোহিঙ্গা বিষয়ক অনুচ্ছেদ যুক্ত হয়েছে, যেটা আমাদের সরকারের কূটনৈতিক সাফল্য বলে আমি মনে করি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে গ্লোবাল সামিট-২০১৮ তে আমি অংশ নিই। এতে সমুদ্র গবেষণায় অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে সাহায্যের আশ্বাস দিয়েছে। এ ছাড়া, বাংলাদেশ সরকারের সাম্প্রতিক বিভিন্ন সাফল্যের প্রশংসা করেছে অস্ট্রেলিয়া।’
সংবাদ সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী জানান, অস্ট্রেলিয়ায় গ্লোবাল সামিট অন উইমেনে প্রাপ্ত উইমেন লিডারশিপ অ্যাওয়ার্ড তিনি বিশ্বের সব নারীর প্রতি উৎসর্গ করেছেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘নারীর ক্ষমতায়নে বাংলাদেশ অনেক এগিয়েছে। শিক্ষাক্ষেত্রে এখন ছেলেদের চেয়ে মেয়েরা এগিয়ে। ছেলেরা কেন পিছিয়ে আছে তা খুঁজে বের করতে বলেছি আমি। নারী উদ্যোক্তার সংখ্যা বাড়ছে, আরও বাড়াতে সরকার নানা উদ্যোগ নিচ্ছে। নারীকে যদি শিক্ষা-দীক্ষায় অগ্রসর না করতে পারি, তবে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়।’
ছাত্রলীগের সম্মেলন নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘ছাত্রলীগের কাউন্সিলে যদি সমঝোতা হয়, তবে প্রেস রিলিজের মাধ্যমে তা ঘোষণা করা হবে। আর সমঝোতা না হলে ভোট হবে। তবে ভোটের মাধ্যমে উল্টাপাল্টা নেতৃত্ব ছাত্রলীগে এলে গ্রহণ করা হবে না।’
রোহিঙ্গা ইস্যুতে নিরাপত্তা পরিষদের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বৈঠকের বিষয়ে শেখ হাসিনা বলেন, এ বিষয়ে তাদের অবস্থান অত্যন্ত পরিষ্কার। তারাও চায়, ১১ লাখ রোহিঙ্গা যারা বাংলাদেশে অবস্থান করেছে তারা যেন নিজ দেশে ফিরে যাক। আমাদের সঙ্গে বৈঠকের পর তারা মিয়ানমারে গেছে, সে দেশের সরকারের সঙ্গে আলোচনা করছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘তারা যেমন রোহিঙ্গা ইস্যুতে আমাদের উদ্যোগের প্রশংসা করেছে তেমনি রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নিতে মিয়ানমার সরকারকে চাপ দেবে। আশা করছি, দ্রুত এটির সমাধান হবে।’
তারেক রহমান প্রসঙ্গে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘একজন সাজাপ্রাপ্ত পলাতক আসামি কিভাবে বিএনপির নেতৃত্বে আসে? এটা বিএনপির চরম দেউলিয়াত্ব। তারেক রহমানকে দেশে ফিরিয়ে আনার সর্বোচ্চ চেষ্টা করবে সরকার। তাকে ফেরাতে ব্রিটিশ সরকারের সঙ্গে আলোচনা চলছে।’ অন্য এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষকে আর কখনো খাদ্য সংকটে পড়তে হবে না।
ঢাকা কবে যানজটমুক্ত হবে, এক সাংবাদিকের এমন প্রশ্নের জবাবে হেসে হেসে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সবাই গাড়িতে চলা বন্ধ করে দিলে ঢাকা যানজটমুক্ত হয়ে যাবে।’ পরে একই প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সড়ক দুর্ঘটনার পেছনে চালকদের ভুল থাকে। ভুল থাকে পথচারীদেরও। রাস্তায় চলার নিয়ম আছে, তা কি পথচারীরা মেনে চলেন? পথচারীদের রাস্তা পার হওয়ার নিয়ম জানা দরকার, মানা দরকার।’ ট্রাফিক নিয়ম জানানোর ক্ষেত্রে গণমাধ্যমের সহযোগিতাও চান তিনি। তিনি বলেন, ‘চালক ভুল করলে অবশ্যই শাস্তি পাবে। তবে এক্ষেত্রে চালককে ধরে মারধর করা বা আইন হাতে তুলে নেওয়া যাবে না।’
বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘তাকে তো আমি জেলে পাঠাইনি। দুর্নীতির অভিযোগ প্রামাণিত হওয়ায় আদালতই তাকে জেলে পাঠিয়েছেন। তার মুক্তির জন্য রাজনৈতিক দাবি গ্রহণযোগ্য নয়।’
প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ছেলেমেয়েদের পড়ালেখার সুযোগ সৃষ্টির জন্য সরকারি প্রতিষ্ঠানের পাশাপাশি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানও দরকার। আইন অনুযায়ী যাতে প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয় চলে, সেদিকে আমাদের নজর সবসময় ছিল, আছে। প্রাইভেট বিশ্ববিদ্যালয়ের অনিয়ম-দুর্নীতি কমানোর জন্য ইউজিসিকে আরও শক্তিশালী করা হচ্ছে।’