প্রথম স্পান বসানোর মধ্য দিয়ে দৃশ্যমান হলো রুপসা রেলসেতু

0
1165

নিজেস্ব প্রতিবেদকঃ অবশেষে খুলনার রূপসা রেলসেতু এখন দৃশ্যমান। খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের খুলনা অংশের প্রথম স্পান বসানো সম্পন্ন হয়েছে। রেল সেতুর জন্য পর্যায়ক্রমে সসর্বমোট  ১৪২টি স্প্যান বসানো হবে। এদিকে খুলনা-মংলা রেল প্রকল্পের মেয়াদ দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

বাংলাদেশ রেলওয়ের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. আবদুর রহিম জানান, রূপসা রেল সেতুর প্রথম স্প্যান গত জুনে বসানোর পরিকল্পনা ছিল। কিন্তু স্প্যান বসানোর জন্য নাটবল্টুসহ আনুসাঙ্গিক যন্ত্রাংশ কুয়েট থেকে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করার কারণে কিছুটা সময় ব্যয় হয়েছে। তবে এক মাস পর গত ২ আগস্ট থেকে প্রথম স্প্যানের জন্য ভারত থেকে আনা ৩২ দশমিক ৫ মিটারের গার্ডার তিনটি সেগম্যান্টে বসানো শুরু হয়। অবশেষে শনিবার বিকেলে প্রথম স্প্যানটি বসানো সম্পন্ন হয়েছে। ফলে দৃশ্যমান হলো রূপসা রেল সেতু।

তিনি আরো জানান, স্প্যানটি মাটি থেকে ১৬ মিটার উঁচুতে ৬৬ ও ৬৭ নম্বর পিয়ারে বসানো হয়েছে। গত জুনে ভারত থেকে বেনাপোল সীমান্ত হয়ে খুলনার প্রকল্প এলাকায় স্প্যান আনা হয়। ১৪২টি স্প্যানের মধ্যে প্রকল্প এলাকায় ৮টি স্প্যান রয়েছে। একটি বসানো হয়েছে। আরো ১৫টি স্প্যান ভারতে প্রস্তুত অবস্থায় রয়েছে। যা ঈদুল আজহার পরে প্রকল্প এলাকায় আনা হবে।
প্রকল্প এলাকায় সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, ৬৬ ও ৬৭ নম্বর পিয়ারে প্রথম স্প্যান উঠানো হয়েছে। স্প্যানটিতে নাটবল্টু লাগানোসহ বিভিন্ন কাজে ব্যস্ত রয়েছে শ্রমিকরা। সেতুর খুলনা অংশে নদীতে পাইলের কাজ চলছে। নদীর অভ্যন্তরে ৭২টি পাইলের মধ্যে ৫টি পাইল করা হয়েছে বলে প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী নিশ্চিত করেছেন। এছাড়া রেলপথ নির্মাণের জন্য রাস্তার কাজও চলছে।
প্রকল্পের নির্বাহী প্রকৌশলী জানান, প্রকল্পের ৩৮ দশমিক ১১ শতাংশ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। প্রকল্প মেয়াদ ছিল ২০১০-২০১৩ সাল পর্যন্ত। প্রথম দফায় মেয়াদ বাড়িয়ে ২০১৩-২০১৮ জুন পর্যন্ত বাড়ানো হয়। আর দ্বিতীয় দফায় ২০২১ সাল পর্যন্ত বাড়ানোর জন্য পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে। তবে ২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতেই কাজ শেষ করার পরিকল্পনা রয়েছে।

প্রকল্প সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, খুলনা-মংলা রেলপথ প্রকল্পটির কাজ ৩টি অংশে বিভক্ত। যার একটি রেল সেতু, অপরটি রেল লাইন এবং অন্যটি টেলিকমিউনিকেশন ও সিগন্যালিং। প্রকল্পের অধীনে লুপ লাইনসহ রেলওয়ে ট্র্যাকের দৈর্ঘ্য ৮৬ দশমিক ৮৭ কিলোমিটার। এর মধ্যে ৬৪ দশমিক ৭৫ কিলোমিটার ব্রডগেজ রেলপথ নির্মাণ হবে। আর রূপসা নদীর উপরে হযরত খানজাহান আলী (র.) সেতুর দেড় কিলোমিটার দূরে যুক্ত হবে ৫ দশমিক ১৩ কিলোমিটার রেল সেতু। এছাড়া ২১টি ছোটখাট ব্রীজ ও ১১০টি কালভার্ট নির্মিত হবে। ফুলতলা থেকে মংলা পর্যন্ত ৮টি স্টেশন হবে। স্টেশনগুলোর মধ্যে ফুলতলা, আড়ংঘাটা, মোহাম্মদ নগর, কাটাখালী, চুলকাঠি, ভাগা, দিগরাজ ও মংলা। এ প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ৩ হাজার ৮০১ কোটি ৬১ লাখ টাকা। এর মধ্যে রেললাইনের জন্য ১ হাজার ১৪৯ কোটি ৮৯ লাখ এবং ব্রীজের জন্য ১ হাজার ৭৬ কোটি ৪৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়েছে। বাকী টাকা জমি অধিগ্রহণসহ অন্যান্য খাতে ব্যয় ধরা হয়েছে।

বাংলাদেশ সরকারের নিজস্ব অর্থায়ন (জিওবি) ও ভারত সরকারের আর্থিক সহায়তায় এই রেলপথটি নির্মাণ করা হবে। এ প্রকল্পের রেললাইন তৈরির জন্য ২০১৫ সালের ২০ অক্টোবর ভারতের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান ভারতের ইরকন সাথে চুক্তি হয়েছে। আর ব্রীজ তৈরির জন্য ওই বছরের ২৪ আগস্ট ভারতের লারসেন এন্ড টাব্র নামে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের সাথে চুক্তি হয়। এর আগে ২০১২ সালের নবেম্বর প্রকল্পের পরামর্শক হিসেবে নিয়োগ দেয়া হয় ভারতের সিইজি নিপ্পন কোয়ি জেভি প্রতিষ্ঠানকে।