গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে লাভ বেশি

0
2934

আজিজুর রহমান, খুলনাটাইমস :

টমেটো মূলত শীতকালীন সবজি হিসেবে পরিচিত। কিন্তু টমেটো এখন শুধু শীতকালেই নয়, গরমেও চাষ হচ্ছে। চলতি মৌসুমে খুলনার দাকোপ উপজেলায় লবনাক্ত জমিতে চাষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন টমেটো।

উপজেলার সদর ইউনিয়নের দাকোপ ব্রিজ সংলগ্ন বাজারের কাছেই প্রবীর মল্লিকের টমেটোখেত। কাছে গেলে চোখে পড়ে বাঁশ ও জাল দিয়ে তৈরি দুই চালা ঘরের ভিতরে লাল-সবুজ রঙের টমেটো ঝুলছে থোকায় থোকায়।

এ এলাকায় শীত মৌসুমে স্বল্প পরিমানে চাষ হয় টমেটোর। এবারই প্রথম আধুনিক পদ্ধতিতে চাষ হয়েছে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর। ফলন ভালো হওয়ায় স্থানীয় কৃষকদের মধ্যে এ নিয়ে ব্যাপক সাড়া পড়েছে। অনেকেই আগামীতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষের পরিকল্পনা করছেন।

প্রায় তিন বছর ধরে সবজি চাষের পাশাপাশি শীত মৌসুমে টমেটো চাষ করতেন সাহেবের আবাদ গ্রামের চাষি প্রবীর মল্লিক। তিনি বলেন, শীতকালীন টমেটো নানা রোগে আক্রান্ত হয়ে অনেক গাছ মারা যায়। এ ছাড়া একসাথে প্রচুর টমেটো বাজারে থাকায় মৌসুমে দাম পড়ে যায় বলে তেমন লাভ থাকে না। লাভের আশায় এবার হঠাৎ করেই তিনি টমেটো চাষের নতুন প্রযুক্তির সন্ধান পান। তাই শীতকালীন টমেটোর চাষ ছেড়ে গ্রীষ্মকালীন টমেটোর চাষ শুরু করেছেন।
শুরুতে তিনি ১৬ শতক জমিতে টমেটো চাষের প্রস্ততি নেন। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার কার্যালয় থেকে হাইব্রিড বারি জাতের বীজ সংগ্রহ করে তাঁর খেতে বপন করেন। আষাঢ়ের প্রথম দিকে চারা রোপণ করেছেন। ৪০ দিনের মধ্যেই গাছে টমেটো ধরেছে। গাছে গাছে ঝুলে আছে কাঁচা, আধকাঁচা ও পাকা টমেটো। এরই মধ্যে বিক্রিও শুরু করেন। খুচরা প্রতি কেজি টমেটো বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা দরে। ভরা মৌসুমে হয়তো এই টমেটো বিক্রি হতো ১৫ থেকে ২০ টাকায়। এ বছর প্রবীর মল্লিক ছয়টি ঘর তৈরি করে টমেটোর চাষ করেছেন। এতে প্রায় ২২০০ চারা লাগিয়ে ছিল। খরচ হয়েছিল ৩০ হাজার টাকা। প্রতি সপ্তাহে তিন মণ করে খেত থেকে পাকা টমেটো উত্তোলন করেন তিনি। প্রতি মণ টমেটো ২ হাজার ৪শত টাকা দরে বাজারে বিক্রি করছেন। এ থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা লাভ হবে বলে আশা করেন তিনি। চাইলে কার্তিক মাস পর্যন্ত খেত থেকে ফসল তুলতে পারবেন।

সাহেবের আবাদ গ্রামের চাষি নিরাপদ রায় অসময়ে টমেটো চাষ করেছেন। তার টমেটো খেতে গিয়ে দেখা যায়, এক টুকরো জমিতে লাগানো গাছগুলো টমেটোর ভারে নুয়ে পড়েছে। প্রতিটি গাছে কম করে হলেও ১৮ থেকে ২৬টি টমেটো ধরেছে।

স্থানীয় উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তা শেখ আবু হুরাইরা বলেন, অসময়ে টমেটো হওয়ায় কৃষকেরা ভালো দাম পাচ্ছেন। উপজেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা গেছে, নিরাপদ’র আগ্রহের কথা শোনার পর জাতীয় কৃষি প্রযুক্তি প্রকল্পের (এনএটিপি দ্বিতীয় পর্যায়) আওতায় তাকে দেশি উচ্চফলনশীল বারি-৪ জাতের বীজ সংগ্রহ করে দেওয়া হয়। এ ছাড়া চারা উৎপাদন ও চাষের কলাকৌশল সম্পর্কেও তাঁকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।

নিরাপদ জানান, মে মাসের শেষ সপ্তাহে বীজতলা তৈরির কাজ শুরু করেন তিনি। বৃষ্টি থেকে চারাকে রক্ষা করতে বীজতলার ওপর পলিথিন দিয়ে ছাউনি এবং পাতা মোড়ানো পোকার সংক্রমণ রোধে মশারি জাল টেনে এটিকে ঢেকে দেন। তাঁর মতে, দশগ্রাম বীজে ১৮৭ টি চারা উৎপাদন হয়েছে। মাত্র এক মাসে চারাগুলো জমিতে লাগানোর উপযোগী হয়ে ওঠে। জুলাই মাসের মাঝামাঝিতে টমেটো গাছে ফুল ধরে। আগষ্টের শেষের দিকে টমেটো পাকতে শুরু করে। ইতিমধ্যে প্রায় চারশত কেজি টমেটো তিনি ৪০ টাকা কেজি দরে স্থানীয় বাজারে বিক্রি করেছেন।

এ টমেটো পাঁকাতে কোনো প্রকার কেমিকেল লাগেনা। গাছ থেকে টমেটো তুলে ঘরে দুই থেকে তিনদিন রেখে দিলেই পেঁকে সুন্দর রঙ ধারণ করে। একদিকে যেমন কীটনাশক ব্যবহার কম, সঙ্গে খরচও কমে যায়। ফলে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে লাভ বেশি হয়।

দাকোপ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. মোছাদ্দেক হোসেন খুলনাটাইমসকে  বলেন, লবণাক্ত এলাকা হওয়ায় চারজন কৃষক এবারই প্রথম ৬০ শতক জমিতে আধুনিক পদ্ধতিতে বিষমুক্ত টমেটো চাষ করেছে। এনএটিপি-২ প্রকল্প হতে তাদেরকে বীজ ও সার দিয়ে সহায়তা করা হয়েছে। এখন টমেটো চাষে খরচ কম কিন্তু দাম বেশি। এছাড়া সারা বছর সবজির চাহিদা পূরণ করতে গ্রীষ্মকালীন টমেটো চাষে কৃষককে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে।