খুলনা ১,২ ও ৩ আসনের নির্বাচনী সমাচার

0
1040

সাইমুম মোর্শেদঃ আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনের তফসিল ঘোষনা হবার পর খুলনায় বইছে নির্বাচনী হাওয়া, মৃদু হাওয়ার মধ্য উত্তপ্ত টং’এর দোকানে চায়ের কাপ।কে হতে যাচ্ছে আওয়ামী ও বিএনপির নির্বাচনী আসনের দলের নির্ভরশীল প্রার্থী।

এবারের খুলনা-১ নির্বাচনী আসনে আওয়ামীলীগ-বিএনপির হেভীওয়েট প্রার্থী ছারাও রয়েছে প্রবীন  রাজনীতিবীদ প্রার্থী, বিএনপি ও জাতীয় পার্টির ও রয়েছে একজন করে প্রার্থী।নির্বাচন কমিশন সূত্রে জানা যায়, এবারের খুলনা -১ আসনে বটিয়াঘাটা ৭ টি, দাকোপ ৯টি ইউনিয়ন সহ ১ টি পৌরসভা সর্বমোট ১৬ টি ইউনিয়ন ও ১ টি পৌরসভা মিলে এই নির্বাচনী আসন।এই আসনে সর্বমোট ভোটার সংখ্যা দুই লক্ষ ৫৩ হাজার ৩৫৬ জন যার মধ্য পুরুষ ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৪৬৫ জন এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ২৯ হাজার ৮৯১ জন।আওয়ামীলীগের প্রার্থীদের মধ্য এই আসন থেকে দলীয় মনোনয়ন সংগ্রহ করেছন বর্তমান সংসদ সদস্য পঞ্চানন বিশ্বাস, সাবেক সংসদ সদস্য ননী গোপাল মণ্ডল, এ্যাড. নিমাই চন্দ্র রায়, তরুণ নেতা শ্রীমন্ত অধিকারী রাহুল, আ’লীগের আইন বিষয়ক উপ-কমিটির সদস্য এ্যাড. গ্লোরিয়া ঝর্ণা সরকার ও গঙ্গারামপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোঃ হাদিউজ্জামান হাদী, আবুল হোসেন, আশরাফুল আলম, দীলিপ হালদার। অন্যদিকে বিএনপি থেকে বিএনপির সাধারণ সম্পাদক আমির এজাজ খান বিএনপির একক প্রার্থী হিসেবে অংশগ্রহন করতে যাচ্ছেন বলে দলটির একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।এছাড়াও জাতীয় পার্টির সুনীল শুভ রায় দলের হয়ে নির্বাচনে অংশ গ্রহন করবেন।এবারের খুলনা এক আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১০৭ টি ও ভোট কক্ষের সংখ্যা ৫৩৭টি।

নির্বাচনী আসন খুলনা-২ তে রয়েছে বিশেষ চমক।সিটি কর্পোরেশনের সোনাডাঙ্গার ৭ টি ও সদর থানাধীন ৯ টি ওয়ার্ড মিলে খুলনা-২ নির্বাচনী আসন।এই আসনে পুরুষ ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৬ হাজার ৮৮৯ এবং মহিলা ভোটার সংখ্যা ১ লক্ষ ৪৭ হাজার ৩৭৩ সর্বমোট ভোটার ২লক্ষ ৯৪ হাজার ৬২ জন।এই আসনে বর্তমান এমপি মিজানুর রহমান মিজানকে পিছনে ফেলে একমাত্র প্রার্থী হিসেবে দলীয় মনোনয়ন কিনেছেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ভ্রাতুষ্পুত্র, বিশিষ্ট ব্যবসায়ী শেখ সালাহউদ্দিন জুয়েল।খুলনা-২ আসনে মোট ভোট কেন্দ্রের সংখ্যা ১৫৭ টি এবং সব কেন্দ্র মিলিয়ে ভোট কক্ষের সংখ্যা  ৬৫৩ টি।রাজনৈতিক সূত্রমতে, খুলনা দুই আসন হচ্ছে আওয়ামী-বিএনপির মর্যাদার লড়াই।জানা গেছে, ১৯৭৩ সালের পর গত ৪১ বছরে আর কখনো এই আসন থেকে নির্বাচিত হতে পারেনি আওয়ামী লীগের কোন প্রার্থী।যে কারণে এ আসনটি বিএনপির ঘাঁটি হিসেবে খ্যাত।৪১ বছর পর গত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনে বিএনপির অনুপস্থিতির সুযোগে আওয়ামী লীগের মনোনীত প্রার্থী মিজানুর রহমান মিজান এখানে এমপি নির্বাচিত হন।তাই দীর্ঘদিন পর ফিরে পাওয়া এ আসন হাতছাড়া করতে নারাজ আওয়ামী লীগ। আর ক্লিন ইমেজ এবং নতুনত্বের চমকে এ আসনে আওয়ামী লীগে এবারে প্রার্থিতা ঘোষণা করা হয়েছে।যে কারনে আওয়ামীলীগের একমাত্র মনোনয়ন সংগ্রহ করেছে শেখ সালাহ্উদ্দিন জুয়েল।অনুরুপভাবে মর্জাদার লড়াইয়ে টিকে থাকতে এই আসনে বিএনপির একক প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও খুলনা মহানগর বিএনপির সভাপতি সাবেক সংসদ সদস্য নজরুল ইসলাম মঞ্জু।এছাড়াও খুলনা-০২ আসনে ইসলামি আন্দোলন বাংলাদেশ মনোনীত সংসদ সদস্য পদপ্রার্থী হচ্ছেন আলহাজ্ব হাফেজ হযরত মাওলানা অধ্যক্ষ আব্দুল আউয়াল।

দৌলতপুরের ৬ টি, খালিশপুরের ৯ টি ওয়ার্ড সহ দিঘলিয়ার আড়ংঘাটা ও যোগীপোল ইউনিয়ন নিয়ে খুলনা-৩ আসন।এই আসনে শ্রমিকদের দাবী দাওয়া বাস্তবায়ন নিয়ে শ্রমিকদের চলছে দীর্ঘদিনের আন্দোলন।
এবার খুলনা-৩ আসনে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়ন পেতে ফরম কিনেছেন বর্তমান সংসদ সদস্য মন্নুজান সুফিয়ান ও আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতা ও সাবেক ছাত্রলীগ নেতা এস এম কামাল হোসেন।মন্নুজান সুফিয়ান বিগত দিনে ২০০৮ ও ২০১৪ সালে এই আসন থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন।আসন্ন সংসদ নির্বাচনে একাধিক প্রার্থী নিয়ে এখানে আওয়ামী লীগ রয়েছে উদ্বিগ্ন।দলীয় দুই হেভী ওয়েট প্রার্থীর মধ্য থেকে একজন হবেন খুলনা ৩ এর নৌকার মাঝি।দলীয় সূত্রমতে খুলনা- ৩ আসনটি এককভাবে ধরে রাখতে পারেননি কোনও রাজনৈতিক দলের নেতা। শ্রমিকদের দাবি আদায়ের বিষয়টি এ আসনে জয়-পরাজয়ে জন্য বড় ফ্যাক্টর। তাই দলের দুই হেভিওয়েট প্রার্থী এখানে রয়েছেন মুখোমুখি অবস্থানে। খুলনা-৩ এছাড়াও মহানগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শেখ মোঃ ফারুক আহমেদ ও মোঃ আশরাফুল ইসলাম, দৌলতপুর থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি ও বিজেএ’র চেয়ারম্যান শেখ সৈয়দ আলী, কেসিসি’র প্যানেল মেয়র-১ আমিনুল ইসলাম মুন্না দলীয় মনোনয়নপত্র সংগ্রহ করেছেন।তবে, হেভিওয়েট দুই প্রার্থী মন্নুজান ও কামালকে ঘিরে দলের মধ্যে তৈরি হয়েছে ভিন্ন বলয়। মনোনয়নপত্র জমা দিলেও এখনও কেউই কেন্দ্রের সবুজ সংকেত পাননি।

অন্যদিকে খুলনা-৩ আসনে বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য সহ অন্যরা বর্তমান সরকারের আমলে কিছুটা কোনঠাসা হয়ে পড়েছেন।তবে, আসন্ন সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে নতুন মনোনয়ন প্রত্যাশীদের তৎপরতায় কিছুটা উজ্জীবিত হয়েছেন বিএনপি প্রার্থীরা। একাধিক প্রার্থী মনোনয়নের দৌড়ে এগিয়ে থাকায় তৃনমূল বিএনপি কিছুটা সংসয় প্রকাশ করেছেন।মহানগর বিএনপির সহ-সভাপতি এবং সাবেক সংসদ সদস্য এক সময়ের শিল্পাঞ্চলের জনপ্রিয় নেতা কাজী সেকেন্দার আলী ডালিম। বার্ধক্য কিছুটা আটকে ধরলেও, প্রবল মনোবল তাকে উজ্জীবিত করছে পুনরায় নির্বাচনে অংশগ্রহণ করার।তার সঙ্গে বিএনপির মনোনয়ন পাওয়ার দৌড়ে রয়েছেন আরও তিন নেতা। তারা হলেন-মহানগর বিএনপির প্রথম যুগ্ম সম্পাদক অধ্যক্ষ তারিকুল ইসলাম, ছাত্রদলের সাবেক কেন্দ্রীয় সহ-সভাপতি তারেক রহমানের ঘনিষ্ট রকিকুল ইসলাম বকুল এবং মহানগর বিএনপির কোষাধ্যক্ষ ও খালিশপুর থানা সাধারণ সম্পাদক আরিফুর রহমান মিঠু।দলীয় নেতাকর্মীদের ধারনা অনুযায়ী রকিবুল ইসলাম বকুল তারেক জিয়ার ঘনিষ্ঠতার কারনে তিনি হতে পারেন এই আসনে বিএনপির মনোনীত অন্যতম প্রার্থী।