খুলনা নগরে তৎপর রাজনীতিক, পুলিশ, প্রশাসন : সুরক্ষা সরঞ্জাম, খাদ্য সহায়তার উদ্যোগ

0
567

সুমন আশিক/ইয়াছিন আরাফাত:
খুলনা নগরীতে করোনাভাইরাস মোকবিলায় তৎপর আইনশৃংখলা বাহিনী। সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখতে জেলা প্রশাসন সেনাবাহিনীর মহড়া নিয়ে তদারকি করছেন, দিচ্ছেন সতর্ক বার্তা। নগরজুড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে ছড়িয়ে দেবার সাথে জনদূরুত্ব চিহিৃতকরণ অংকন রেখাসহ কেএমপি’র পুলিশ সদস্যদের অগ্রনী ভূমিকা প্রশংসার দাবিদার। সরেজমিনে মাঠে নেমে কাজ করছে সিটি কর্পোরেশন মেয়র, কাউন্সিলররা। জেলা পরিষদ এসবের ব্যত্যয় ঘটায়নি। খুলনা-২ আসনের এমপি, নগর আওয়ামী লীগ ও বিএনপি জনগণের কাছে সতর্কতা ও করণীয় বার্তা দিচ্ছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, করোনা ভাইরাস প্রতিরোধে সংসদ সদস্য শেখ হেলাল ও শেখ জুয়েলের নির্দেশনায় এবং শেখ সোহেলের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে নগর যুবলীগ সচেতনা কার্যক্রম চালাচ্ছে, ছিন্নমূলের মাঝে খাদ্য সরবরাহ সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছে। সংবাদকর্মীদের জন্য খুলনা প্রেস ক্লাব ও খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়নের সভাপতিদ্বয় অনুরূপ উদ্যোগ নিয়েছেন। নগর আওয়ামী লীগও তৃণমূলের মাঝে পণ্য ও সেবা সহায়তা পৌছে দেয়ার কার্যক্রম হাতে নিয়েছে। তাছাড়া আশানুরূপ উদ্যোগ আছে নানা সামাজিক সংগঠনেরও।

খুলনা প্রেস ক্লাব সভাপতি নজরুল ইসলাম খুলনাটাইমসকে বলেন, সংবাদকর্মীদের জন্য প্রেস ক্লাব করোনা ভাইরাস সুরক্ষায় সরঞ্জাম সরবরাহের উদ্যোগ নিয়েছেন। রবিবার সুবিধাজনক সময়ে এসব বিতরণ করা হবে। এছাড়া ছিন্নমূল ও দুঃস্থদের জন্য রোটারী ক্লাব অব রূপসা সহযোগিতায় খাদ্য সহায়তা সরবরাহ করার কথা জানান খুলনা প্রেসক্লাব সভাপতি। আগামী সোমবার দিনের যেকোন সময়ে বিতরণ করা হবে।

খুলনা সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মুন্সী মাহবুব আলম সোহাগ খুলনাটাইমসকে বলেন, সাংবাদিক ইউনিয়ন তার সদস্যদের পর্যাপ্ত করোনা ভাইরাস সুরক্ষা সরঞ্জাম বিতরণের উদ্যোগ নিয়েছে। ইতোমধ্যে এজন্য সদস্যদের জাতীয় পরিচয়পত্র সংগ্রহ করা হচ্ছে।

খুলনা মহানগর যুবলীগ সভাপতি শফিকুর রহমান পলাশ খুলনাটাইমসকে বলেন, খুলনা মহানগর আওয়ামী লীগ সভাপতি তালুকদার আব্দুল খালেক ও সাধারণ সম্পাদক এমডি বাবুল রানা, সংসদ সদস্য শেখ জুয়েল ও বিসিবি পরিচালক শেখ সোহেল এর নির্দেশনায় এই মূহুর্তে সচেতনা কার্যক্রম চলছে। পাশপাশি হতদরিদ্রদের জন্য কতিপয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। দুয়েকদিনের মধ্যে তালিকা করে বিতরণ করা হবে। নগরীর দুঃস্থদের তালিকা তৈরীতে তৃণমূল পর্যায়ে ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ কাজ করছে। এককথায় যেভাবে জনগণের কাছে ভোট চেয়েছে, সেইভাবেই পণ্য ও সেবা পৌছে দেবে আওয়ামী লীগ, এমন উদ্যোগ নিয়েছেন খোদ দলের নীতি-নির্ধারকরা।


তিনি আরও জানান, প্রধানমন্ত্রী ৫ হাজার কোটি টাকা বরাদ্ধ নিয়েছে। সেসব জেলা প্রশাসনের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌছে দেয়া হবে বলেও তিনি জানান।

খুলনা মটর শ্রমিক ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক জাকির হোসেন বিপ্লব খুলনাটাইমসকে বলেন, তিনি তার শ্রমিকদের নিয়ে বেশ বিপাকে রয়েছে। এপর্যন্ত অসংখ্য শ্রমিক তার কাছে নগদ ও খাদ্য সহায়তা চেয়েছেন। দুয়েকদিনের মধ্যে শ্রমিকদের মাঝে খাদ্য সরবরাহ করার উদ্যোগের কথা খুলনাটাইমসকে নিশ্চিত করেছেন।

কেএমপি’র সোনাডাঙ্গা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোঃ মমতাজুল হক খুলনাটাইমসকে বলেন, করোনাভাইরাস মোকাবিলায় তার থানায় কর্মরত পুলিশ সদস্যরা সক্রিয় রয়েছে। তারটি সহ কেএমপি’র সব থানা সীমানা এলাকায় বিভিন্ন মুদি ও ওষুধের দোকানগুলোতে সামাজিক দুরুত্ব বজায় রাখতে নির্ধারিত সীমানা রেখা অংকন করছেন।

এছাড়া তিনি আরও বলেন, কেএমপি’র পুলিশের জন্য পুলিশ লাইনস হাসপাতালে কোয়ারেন্টাইন বেড প্রস্তুত রয়েছে। নগরজুড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে কেএমপি বিশেষ ব্যবস্থায়। কেএমপি’র এই কর্মকর্তা, নিজে মাইকিং করে নগরবাসীর উদ্দেশে বলছেন, ‘আপনারা ঘরে থাকুন, নিরাপদে থাকুন। কোনো প্রয়োজনে থানায় ফোন করে সহায়তা নিন। আমরা আপনার প্রয়োজনে চলে আসব। আপনি প্রয়োজন পূরণ করব।

খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার মনিরুজ্জান মিঠু খুলনাটাইমসকে জানান, করোনা ভাইরাসের সংক্রমণ রোধে এবং উদ্ভুত পরিস্থিতি মোকাবিলার জন্য কেএমপি’ও প্রত্যেকটি থানায় পর্যাপ্ত সংখ্যক পুলিশ সদস্যদের সমন্বয়ে কুইক রেসপন্স টিম (কিউআরটি) প্রস্তুত রাখা হয়েছে। এসব টিম স্ব স্ব থানা এলাকায় সেবা প্রদান করবে। নগরজুড়ে জীবাণুনাশক স্প্রে ছড়িয়ে দেয়া হয়েছে কেএমপি বিশেষ ব্যবস্থায়।


খুলনা জেলা প্রশাসনের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) সারোয়ার আহমেদ সালেহীন খুলনাটাইমসকে বলেন, খুলনা জেলা প্রশাসক ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট করোনাভাইরাস প্রতিরোধ জেলা কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ হেলাল হোসেন ও পুলিশ সুপার এসএম শফিউল্লাহ্ বিপিএম শুক্রবার যৌথ প্রচারনা ও কোয়ারেন্টাইন থাকা বাড়ী পরিদর্শন করেন।

তিনি আরও বলেন, ইতোমধ্যে খুলনায় করোনাভাইরাস’র বিস্তার রোধে হোম ও প্রাতিষ্ঠানিক কোয়ারেন্টাইন নিশ্চিত হয়েছে মর্মে বার্তা দিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এছাড়া জরুরী এক বিজ্ঞপ্তিতে করোনাভাইরাস প্রতিরোধ জেলা কমিটির সভাপতি ও জেলা প্রশাসক খুলনাবাসীর অবগতির জন্য জানান, কৱোনার উপসর্হ দেখা দিলে বা করোনা আক্রান্ত সন্দেহ হলে রোগীকে খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেয়ার অনুরোধ করা যাচ্ছে। সাধারণ সর্দি, কাশি বা জ¦রে আক্রান্ত রোগীদের খুলনা সদর হাসপাতালে চিকিৎসা সেবা নেয়ার আহবান রাখেন। এছাড়া অন্যান্য রোগের চিকিসা বেসরকারি হাসপাতাল ও ক্লিনিকে যাওয়ার অনুরোধ রাখেন।

কেসিসি’র কাউন্সিলর শামছুজ্জামান স্বপন খুলনাটাইমসকে বলেন, খুলনা সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আলহাজ্ব তালুকদার আব্দুল খালেক, করোনা মোকাবেলায় ইতোমধ্যে সারা শহরে জীবনু নাশক ছিটানোর ব্যাবস্থা করেছেন।

খুলনা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালকে শুধুমাত্র করোনার চিকিৎসার জন্য নির্ধারন করেছেন। সবাই যাতে বাড়ি থেকে নিজের ও পরিবারকে করোনা থেকে মুক্ত রাখতে পারেন সেজন্য সারা শহরে মাইকিং করাচ্ছেন। নিয়মিত শহরকে পরিচ্ছন্ন রাখছেন। ন্যায্য মূল্যে টিসিবি যাতে খাদ্য প্রদান করে তা পর্যবেক্ষন করছেন। শুক্রবারও তিনি অফিস করেন।